• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

শৌচাগারে তালা, দুর্ভোগে দর্শনার্থীরা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০১৯  

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নওদাবাস ইউপির শালবন। পর্যটকদের জন্য ২০১৫ সালে এখানে একটি শৌচাগার নির্মাণ করা হয়। যার উদ্বোধন করা হয় ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর। কিন্তু এরপর থেকেই তাতে তালা ঝুলছে। ফলে প্রতিনিয়ত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।

৮৬ দশমিক ৬২ একর জমির ওপর প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এ শালবনে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। শুধু লালমনিরহাটবাসী নয়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ঘুরতে আসেন এ শালবনে।

জেলার পর্যটন খাতে উন্নয়নের জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে বনটির প্রচীর, দর্শনার্থীদের জন্য ডিজিটাল বিশ্রামাগার ও শৌচাগার নির্মাণ করে সরকার। কাজ শেষে একই বছরের ২৫ ডিসেম্বর দৃষ্টিনন্দন এ শৌচাগারের উদ্বোধন করেন স্বয়ং প্রকল্প পরিচালক শামসুল আলম। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার অজুহাতে উদ্বোধনের পরদিন থেকেই শৌচাগারে ঝুলছে তালা।

শৌচাগারের ভেতরে প্রবেশ করলেই সবাই নাকে হাত দিতে বাধ্য হবে। নেই পানির ব্যবস্থা, টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগী, যেখানে-সেখানে মলমূত্র আর মরে-পচে রয়েছে বিভিন্ন পশুপাখি।

শুধু তাই নয়, দর্শনার্থী ও পিকনিকের জন্য আসা মানুষজন খাবার পানি সংগ্রহের জন্য বসানো টিউবওয়েলটিও নেই। পড়ে আছে শুধু পাইপ। টিউবওয়েলটি চালু করার কোনো উদ্যোগ না থাকলেও কর্তৃপক্ষের দাবি চুরি হওয়ার ভয়ে এটি খুলে রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে শালবনে গিয়ে শৌচাগারে তালা ঝুলে থাকতে দেখে বন বিভাগের অফিসে খোঁজ নিয়ে তালা খুললে বেরিয়ে আসে দুর্নীতির চিত্র। টয়লেটের প্যান বসানো হলেও তাতে দেয়া হয়নি পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ। ফলে মল তো দূরের কথা পানিও নিচে নামে না। পানির ট্যাংক বসানো হলেও নেই মটর বা পানি উঠানোর ব্যবস্থা। বেসিন দেয়া হলেও তা নড়বড়ে- নামসর্বস্ব। নামমাত্র ঢালাই দেয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে চুয়ে পড়ে পানি। খসে পড়ছে পলেস্তারা। সব মিলিয়ে অযত্নে পোকামাকড়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এ শৌচাগার।

পর্যটন শিল্পের বিকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দিন দিন নষ্ট হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন শালবনটি। দর্শনার্থী এসে শৌচাগারের অব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এত বিশাল বন রক্ষায় কর্মরত রয়েছেন মাত্র দুইজন প্রহরী।

জনবল না থাকায় প্রায় প্রতিদিন ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে সংঘবদ্ধ চক্র কেড়ে নিচ্ছে মোবাইল ফোনসহ টাকা। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় নিরাপদ মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বনটি। এসব কারণে দিন দিন পর্যটক হারাচ্ছে ইকো-ট্যুরিজম পার্কটি।

শালবনে ঘুরতে আসা সাজু-সাগর, মাজেদ-সাহেদ, জিন-মুক্তা ও ছোট্টমনি বলেন, বিশাল শাল ও বেতের ঝাউ গাছ দেখতে তথা প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে শালবনে এসেছি। কিন্তু শৌচাগার থাকলেও তাতে তালা ঝুলছে। ছেলেরা যত্রতত্র প্রাকৃতিক কাজ সেরে নিলেও বেশ বিপাকে পড়েতে হয় নারীদের। নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও খাবারের দোকান। সরকার উদ্যোগ নিলে এটি পর্যটন শিল্পে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে বলে দাবি করেন তারা।

শালবনের প্রহরী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শালবনে যোগ দেয়ার আট মাস ধরে দেখছি শৌচাগারে তালা। টিউবওয়েল চুরি হওয়ার ভয়ে খুলে রাখা হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘুরতে এলে কোয়ার্টারের শৌচাগার ব্যবহার করেন। তারা দুইজন প্রহরী পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল।

বন বিভাগের লালমনিরহাট রেঞ্জের বন কর্মকর্তা নুরনবী মোবাইল ফোনে জানান, বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় শৌচাগার বন্ধ রাখা হয়েছে। জনবল সংকট থাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব না হলেও সন্ত্রাসী বা মাদক বিক্রেতাদের আনাগোনা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।