• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সার্বক্ষণিক মনিটরিং

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২০  

দেশে অপরাধ কমলেও বদলে গেছে অপরাধের ধরন। এখন আর বড় ধরনের খুন, অপহরণ, ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ হরহামেশা ঘটছে না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির উৎকর্ষে পাল্টে গেছে অপরাধের ধরন। প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদেশে বসেও দেশে অপরাধ সংঘটন ও ইন্ধনদানের ঘটনা ঘটছে। দিনে দিনে সাইবার ক্রাইম বেড়ে যাওয়ায় তা দমনে পুলিশের একাধিক পৃথক ইউনিট গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ নিয়ে কাজ করছে তারা। আইনের আওতায় আসছে সাইবার অপরাধীরা।

প্রাযুক্তিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাইবার অপরাধও বাড়ছে সমান তালে। দুটি সংস্থা ২৪ ঘণ্টা মনিটর করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না অপরাধ প্রবণতা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটেই চলেছে এই অপরাধ। মাঝে মধ্যে ঘটে যাচ্ছে তুলকালাম কাণ্ড। ঘটছে মানুষের প্রাণহানি। বিনাশ হচ্ছে সম্পদ। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার সব ধরনের প্রাযুক্তিক উদ্যোগ নিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এই অপরাধ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন ইউনিট।

সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এ্যান্ড রেসপন্স টিম এবং পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)’। নজর রাখছে সব ধরনের সাইবার অপরাধের ওপর। এর পরও প্রতিনিয়ত হ্যাকিংয়ের শিকার হচ্ছে নানা জনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ্যাকাউন্ট। ডিফেমেশন, পর্নোগ্রাফি, হেইট স্পিচ, অনলাইন প্রতারণা ও অনলাইন ব্যাংক জালিয়াতি চলছেই। ব্যক্তিগতভাবেও লাখ লাখ মানুষ সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের ইউনিটটি কাজ করছে। বর্তমানে ইউনিটির সক্ষমতা বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ ও দেশকে নিরাপদ রাখতে পুলিশের এই ইউনিট ২৪ ঘণ্টাই সার্ভিস দিচ্ছে। গত এক বছরে ৩২১টি অভিযোগের মধ্যে সাইবার অপরাধে ৯৯ জনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকি অভিযোগগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।

টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের সাবেক সাইবার থ্রেট প্রকল্পের পিডি ও বর্তমানে বিটিসিএল’র এমডি ড. রফিকুল মতিন জনকণ্ঠকে বলেন, সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এ্যান্ড রেসপন্স টিমও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্যক্তি অপরাধের ওপর ২৪ ঘণ্টা মনিটর করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাইবার বা ডিজিটাল জগত (সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশের মানুষ) অনেকাংশে নিরাপদ রাখাই এর উদ্দেশ্য। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২২ হাজার পর্নো সাইট বন্ধ করা হয়েছে। ‘টিকটক’ নামের ২ লাখ ভিডিও অপসারণ ও ২ লাখ গ্যামলিং সাইট বন্ধ করা করেছে। টেলিযোগাযোগ অধিদফতর সংস্থা (ডট) সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখতে কাজ করবেন। সেখানে যান্ত্রিক বিষয়গুলো দেখবেন ডটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিটিআরসি যদি মনে করে কোন ‘কন্টেন্ট’ বন্ধ করতে হবে তাহলে তা বন্ধ করবে। ডটের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে সাইবার জগতকে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বর্তমান সময়ে প্রতিটি মানুষের হাতে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সমাজ ও নাগরিকদের নিরাপদে বসবাস করার জন্য ইন্টারনেটকে নিরাপদ রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এতদিন ইন্টারনেটকে নিরাপদ করার ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টি ছিল না। সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এ্যান্ড রেসপন্সের মাধ্যমে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখার কাজ করা হচ্ছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ঠিক রেখে নারী, শিশু, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখতে সাইবার জগতকে নিরাপদ করতেই হবে। যাতে নারী শিশু সমাজ রাষ্ট্র কোনভাবেই বিপন্ন হতে না পারে তার জন্য যে কোন মূল্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজড করার পাশাপাশি দেশের নাগরিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বও আমাদের। দেশে ইন্টারনেট দেয়া হয়েছে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত। এই ইন্টারনেট নিরাপদ রাখতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হযেছে। দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে ইন্টারনেটের ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে যাওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের উপজেলা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা ইউনিট। ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু পুলিশ ও টেলিযোগাযোগ অধিদফতরই দেখছে না। আরও কয়েকটি দফতর এই নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।

সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাযুক্তিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম বেড়ে গেছে যার মধ্যে হ্যাকিং, ডিফেমেশন, পর্নোগ্রাফি, হেইট স্পিচ, অনলাইন প্রতারণা ও অনলাইন ব্যাংক জালিয়াতি বেশি পরিমাণ সংঘটিত হয়। ভিক্টিমদের মধ্যে নারী ও টিনেজারদের সংখ্যা বেশি, অনেক ক্ষেত্রে এক্স হাসব্যান্ড বা এক্স বয় ফ্রেন্ড ভয়ঙ্করভাবে সাইবার ক্রাইমে জড়িয়ে পড়ছে। গত ৫ বছর ধরে পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ বিভাগ সিটিটিসির অধীনে ডিএমপির আওতায় জনগণের জন্য সাইবার অপরাধবিরোধী সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। যে কেউ সাইবার অপরাধের শিকার হলে অবশ্যই এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠানের হটলাইন নাম্বার হচ্ছে ০১৭৬৯৬৯১৫২২। এ ছাড়া ‘সাইবার ক্রাইম হেল্প ডেস্ক’ রয়েছে। 

সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) জানিয়েছে, ২০১৯ সালে সাইবার অপরাধে মোট মামলা তদন্তের জন্য পাওয়া যায় ৩২১টি। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৪৪টি। ১০১টি অভিযোগপত্র জমা রয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট (এফআরটি) ১৭টি, তথ্যগত ভুল ১৩টি, অন্যান্য পুলিশ রিপোর্ট ১৩টি, অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৯ জনকে। ২০১৬ সালের মে মাসে সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম ইউনিট গঠন করার পর অভিযোগ জমা হয় ১৬টি। ২০১৭ সালে অভিযোগ জমা পড়ে ৫৬৬টি। ২০১৮ সালে অভিযোগ জমা পড়ে এক হাজার ৭৬৫টি। ২০১৯ সালের অভিযোগের সংখ্য ৩৬৯টি। ইন্টারনেটের সঙ্গে আইওটি, বিগডাটা, এআই ও কুয়ান্টাম কম্পিউটিং সংযুক্ত হওয়ার পর বিশ্বে বিস্ময়কর সব আবিষ্কার ঘটছে। নতুন প্রযুক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অপরাধ প্রবণতাও অনেক গুণ বেড়ে গেছে।

জানা গেছে, সাইবার জগতকে সরকারের তিনটি সংস্থা সার্বক্ষিণিক মনিটর করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। সংস্থাগুলোতে বাড়তি জনবল নিয়োগও করে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখার কাজ চলছে।