• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাস, আজ ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। বন্যায় দুবাই এবং ওমানে বাংলাদেশীসহ ২১ জনের মৃত্যু। আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও বাড়ল জ্বালানি তেল ও স্বর্ণের দাম। ইসরায়েলের হামলার পর প্রধান দুটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু। ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরানে।

সেই রিকশাচালক আমার অনুপ্রেরণা: মুশফিক

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০১৮  

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মুশফিকুর রহিম অন্যতম একজন শৈল্পিক ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত। গত কয়েক বছর ধরে নিজের ব্যাটিংয়ে এনেছেন অভূতপূর্ব উন্নতি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে তৈরি করার জন্য তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য আদর্শ হতে পারেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ইএসপিএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন নিজের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে...

গত পাঁচ বছরে বিদেশ সফরে আপনার গড় ৫০ ছাড়িয়েছে। কিভাবে এটা করলেন ?

আমার মনে হয় না কেউ রানের ব্যাপারে দেশ বা বিদেশ নিয়ে চিন্তা করে। আমি সবসময় আমার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে প্রতিটি সিরিজে অবদান রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু এটা সত্যি যে, আমি বিদেশে রান করাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এটা বলা হয় যে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা শুধু ঘরের মাটিতে ভালো খেলে। আমি চেষ্টা করেছি আমার খেলায় উন্নতি আনতে, সব ধরণের পরিস্থিতিতে এবং সব বোলিং আক্রমনের বিপক্ষে।

 

1.সেই রিকশাচালক আমার অনুপ্রেরণা: মুশফিক

তামিম, সাকিব, রিয়াদ ভাই এবং আমি সবসময় ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে আলোচনা করি। আমাদের নেতৃত্ব নেয়া উচিত। উইন্ডিজ সফরে আমি ভালো করিনি। কিন্তু পরবর্তী সুযোগে আশাবাদি যে ভালো করবো। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলংকায় নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে ভালো করতে অনেক চেষ্টা করেছিলাম।

সাম্প্রতিক বিদেশ সফরে ওয়েলিংটন, কিংসটাউন এবং হায়দ্রাবাদের তিন সেঞ্চুরির চেয়ে কোনটিকে এগিয়ে রাখবেন?

ওয়েলিংটনের সেঞ্চুরি আামার জন্য বিশেষ কিছু। প্রথম ওয়ানডের পর ইনজুরিতে পড়েছিলাম। ব্যক্তিগত বা দলগতভাবে নিউজিল্যান্ডে আমাদের রেকর্ড ভালো ছিল না। আল্লাহর রহমতে আমি সেখানে ভালো একটি ইনিংস খেলতে পেরেছিলাম। তামিম এবং মমিনুলকে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। কারণ, নতুন বলকে তারা সামলেছে এবং কঠিন সময়টা আমাদের পার করে দিয়েছিল। যে কারণে আমার ও সাকিবের জন্য ইনিংস খেলাটা সহজ ছিল।

হায়দ্রাবাদ সেঞ্চুরিকেও পিছিয়ে রাখার উপায় নেই। ভারত বিশ্বের সেরা দল এবং তাদের অসাধারণ একটি বোলিং আক্রমণ আছে। তাদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা স্বপ্নের মতো। আমি প্রথম ভারতের মাটিতে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। এই দুটো সেঞ্চুরি আমার কাছে সেরা।

২০১৪-১৫ সাল থেকে আপনার ওয়ানডে পারফরম্যান্সেও বড় পরিবর্তন এসেছে। যদি ক্যারিয়ারের প্রথম সাত বছরের সঙ্গে তুলনা করা হয় তবে, আপনি কিভাবে রান করা এবং স্ট্রাইক রেটে এমন পরিবর্তন আনলেন?

বর্তমানে ৩০০ রান নিরাপদ নয়, বিশেষত ভালো উইকেটে। আমি বুঝতে পারছিলাম যে বর্তমান ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের মধ্যে বেশি শট খেলা অসম্ভব নয়। বিশেষত ১১তম ওভার থেকে ৪০ ওভার পর্যন্ত স্পিন, পেসের বিপক্ষে মিড-অফ ও মিড অনে রান করা সম্ভব। অফ স্পিনার এবং বাঁহাতি স্পিনারদের সঙ্গেও রান করা যায়। এই সময়টাতেই আমি নিজের শটে উন্নতি আনতে চেষ্টা করেছি। যদি আপনি একটা ভালো স্ট্রাইক রেট রাখতে পারেন তাহলে স্বাভাবিকভাবে রান করতে পারবেন এবং বোলারকেও চাপ তৈরি করতে পারবেন। ১০০ এর বেশি স্ট্রাইক ধরে রাখতে পারলে দলও উপকৃত হবে। যেসব ব্যাটসম্যান সেট হতে একটু সময় নেয় তারাও এর থেকে সুবিধা পায়।

আমি এই জায়গাতেই নিজের উন্নতি করেছি। এটা আমাকে লম্বা সময় ধরে করে যেতে হবে। আমাকে নিজের খেলাটা জানতে হবে। বিশেষত কখন আক্রমণে যাবো এটা বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ।

 

2.সেই রিকশাচালক আমার অনুপ্রেরণা: মুশফিক

এক্ষেত্রে অবশ্যই চান্দিকা হাতুরু সিঙ্ঘেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। আমি তাকে স্বাধিনভাবেই এটা বলেছিলাম। আর সে আমাকে সাহায্য করেছে। সে বলেছিল, এই ধারায় খেলাটা আমার চালিয়ে যাওয়া উচিৎ দৃঢ় চিত্তে। যখন শুরুতে উইকেট যেত তখন সময় নেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু, সে আমাকে বলেছিল স্কোর বোর্ডের দিকে নজর না দিতে এবং নিজের সামর্থ্যকে ব্যবহার করতে। যদি আমি মনে করি যে উইকেট রানের উপযুক্ত তবে রান করাতেই মনযোগ দেয়া উচিৎ।

আল্লাহর রহমতে আমি এটা করতে সক্ষম হয়েছিলাম ২০১৫ বিশ্বকাপে। যা আমাকে অনেক বিশ্বাস জুগিয়েছিল বিশেষত বড় বড় বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে। এমনকি আফগানিস্তান এবং স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিও সহজ ছিল না।

আপনি উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে দ্রুত ৩০ করলেন যা দলকে জেতাতে সাহায্য করেছিল। এছাড়া গত বছর শ্রীলংকার বিপক্ষে শেষ সময় টেস্টে ব্যাটিং করেও ম্যাচ জিতিয়েছেন। দুটো খুবই জরুরি মুহূর্ত ছিল। এরকম চাপের মুখে মানসিকতা নাকি দক্ষতা কোনটা আপনাকে বেশি সাহায্য করে?

দুটোই। আপনাকে রান করতে হলে দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। এখানে মানসিক শক্তি প্রয়োজন। আপনি ডাউন দ্যা ট্রাকে এসে মারবেন নাকি স্পিনের বিপক্ষে রান করবেন তা যাই হোক না কেন, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা অনুশীলনের ব্যাপার। একই সঙ্গে এটি দক্ষতা ও মানসিকতারও ব্যাপার।

ফিটনেসও এক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করে। যদি আপনি ৬০ সেকেন্ডের জায়গায় ৫০ সেকেন্ডে ল্যাপ শেষ করতে পারেন তবে অতিরিক্ত অনুপ্রেরণা পাবেন ফিটনেস নিয়ে। একই ব্যাপার দক্ষতার ক্ষেত্রেও। আমি নিজেকে সবসময়ই প্রস্তুত করি সময়ের আগেই। কারণ এটা জানি যে আমি কিসের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি।

কোনটা বেশি কঠিন? দ্রুত একটি ঝড়ো ইনিংস নাকি একেবারে শেষ মুহূর্তে বড় শট খেলা?

দুটোই কঠিন অবস্থা। বিশেষত, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য। আমরা এমন পরিস্থিতিতে সবসময় পড়ি না। ভারতের খেলোয়াড়রা এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো করে। তারা দশবারের মধ্যে নয়বারেই এইসব পরিস্থিতি জিতবে। আমরা এগুলোর মুখোমুখি হই ছয় মাসে একবার অথবা বছরে একবার। এখানে কৌশলী হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন এইসব পরিস্থিতি জিতবেন তখন বিশ্বাসও ফিরে পাবেন।

১২ বছর ধরে বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন। এই লেভেলের জন্য এতো অনুশীলনের অনুপ্রেরণা পান কোথা থেকে?

আমি মনে করি না যে আমি এখনো আমার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়েছি। এটাই আমার একমাত্র অনুপ্রেরণা। এটা অসাধারণ যে আপনি দেশকে ১২-১৩ বছর ধরে সার্ভিস দিচ্ছেন। ক্যারিয়ার শেষে আমি অনুভব করতে চাই, যে সকল সুবিধা আমাকে দেয়া হয়েছিল সেগুলোর পূর্ণ ব্যবহার আমি করতে পেরেছি কিনা? এটাই আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায়। আমি ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করি, সিরিজ ধরে ধরে এগোই। আর হৃদয় দিয়ে চেষ্টা করি এবং নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে চেষ্টা করি।

 

3.সেই রিকশাচালক আমার অনুপ্রেরণা: মুশফিক

বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা কতোটা গর্বের?

আমার জন্য প্রথম ও শেষ কথা হলো দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয় আমাদের মাসের পর মাস। কিন্তু দেশের জন্য কিছু করার চেয়ে গর্বের কিছু নেই। যখন আপনি জানেন যে, ১৮-২০ কোটি মানুষ আপনার জন্য প্রার্থনা করছে তখন আর কোনো অনুপ্রেরণার প্রয়োজন নেই। একজন রিকশাচালক তার সারাদিনের উপার্জন বাদ দিয়ে দেয় খেলা দেখার জন্য। এটা আমাকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। আপনার এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণার প্রয়োজন নেই। আমার সঙ্গে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার শুরু করেছিল কিন্তু আল্লাহ্‌র কাছে কৃতজ্ঞতা যে তিনি আমাকে সুযোগ দিয়েছেন এগিয়ে যাওয়ার জন্য।

গত বছর আপনার অধিনায়কত্ব শেষ হয়েছে। স্মৃতিতে কোন মুহূর্ত আপনার জন্য সেরা এবং খারাপ ছিল?

আমি এমন একজন মানুষ যে পিছনে থেকে নিজের কাজটা করতে পচ্ছন্দ করি। ভালো করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি খেলোয়াড়ের যেমন উত্থান পতন থাকে তেমনি অধিনায়কত্বেরও। গত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আমি এবং দল ভালো করিনি। আমাদের ভালো করা উচিৎ ছিল।

আবার ভালো দিনও ছিল। আমরা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে হারিয়েছি। শ্রীলংকাকে তাদের মাটিতে হারিয়েছি। ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ড এবং উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি। এইসব আমাকে গর্বিত করে। এখানে অধিনায়কের একক কৃতিত্বের কিছু নেই। একটা দল সব খেলায় জিততে পারে না। আমি অবশ্যই তাদের ধন্যবাদ দিব।

১০ বছরের বেশি সময় ধরে সাকিব, তামিম, মাহমুদুল্লাহ, মাশরাফির সঙ্গে খেলাটা কেমন ছিল?

শেষ ৪-৫ বছর ধারাবাহিক হওয়াকে আমি কৃতিত্ব দেব। কারণ, এই চারজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলতে পেরেছি। সাকিব, রিয়াদ ভাই অথবা তামিমের সঙ্গে ব্যাট করা খুবই সহজ। ক্রিকেট ব্যক্তিগত খেলা নয়। এখানে জুটি হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। বড় মঞ্চগুলোতে আমরা এক সঙ্গে পারফর্ম করেছি। গত ৪-৫ বছর ধরে আমরা পাঁচজন কঠোর পরিশ্রম করেছি। ফলে সর্বোচ্চ লেভেলে ভালো করার পথ খুঁজে পেয়েছি। এটা বড় পাওয়া যে এইরকম একটি প্রজন্মের ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলা। মাশরাফি ভাই তো অতুলনীয়। সাকিব, তামিম, রিয়াদ ভাই বিশ্বমানের খেলোয়াড়।

তামিম বলেছিল যে সে টপ দশ ব্যাটসম্যানের মধ্যে একজন হতে চায়। আগামি পাঁচ বছরের জন্য আপনার লক্ষ্য কি?

আমারও সেই একইরকম লক্ষ্য। কিন্তু আমার চিন্তা নিজের উন্নতি করা, আগের সিরিজ থেকে পরের সিরিজে। আমার শৈশবের স্বপ্ন বাংলাদেশের ম্যাচ উইনার হওয়া। আর এখনো সে লক্ষ্যেই আমি চলছি। আমি হয়তো কিছু ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছি, কিন্তু কিছুদিন সুন্দর সময়ও এনেছি।। আশা করি ভালো সময় আরো আসবে। অন্তত প্রতি ১০ ম্যাচে আট অথবা নয়বার।

২০১৯ বিশ্বকাপের আগের সময় তৈরি হওয়ার জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?

একটা দলের মোমেন্টাম প্রয়োজন বড় টুর্নামেন্টে ভালো করার জন্য। এটা শুধু জিতলে হয় না। যদি আমরা এশিয়া কাপে ভালো করি, উইন্ডিজ এবং নিউজিল্যান্ডে ভালো করি তবে বিশ্বকাপের আগে বিশ্বাস অর্জন হবে। আমাদের মতো দলের জন্য এটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের আগে দলকে এগুলোই গড়ে তুলবে। যদি পুরো দল হিসেবে একটা মোমেন্টাম গড়ে তুলতে পারি তাহলে মনে রাখার মতো পারফর্মেন্স উপহার দেয়া সম্ভব হবে টুর্নামেন্টে।