• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এবার দৃশ্যমান হবে মাওয়া প্রান্তে

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৮  

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এবার দৃশ্যমান হবে মাওয়া প্রান্তে। শুরুতে এই প্রান্তকে ঘিরে সাজানো হয়েছিল সব পরিকল্পনা। সেই লক্ষ্যে ৬ নম্বর পিলারের কাজও ধরা হয়েছিল। তবে মাওয়া প্রান্তের ২২টি পিলারের নিচের মাটির গঠনগত জটিলতায় পাল্টে যায় সব পরিকল্পনা। আপাতত নকশা জটিলতার সমাধান মিলেছে। তাই মাওয়ার দুই, তিন, চার ও পাঁচ নম্বর পিলারের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এই পিলারগুলোর ওপর পাইল ক্যাপও বসানো হয়েছে। চাইলে যেকোনও দিন এই চারটি পিলারের ওপর স্প্যান বসিয়ে দেওয়া সম্ভব। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, তবে এক্ষেত্রে কারিগরি জটিলতায় পরের স্প্যানগুলো বসাতে সময় বেশি লাগবে। কারণ সেতুর ৪২টি পিলারের প্রতি ছয়টি পিলারকে একটি মডিউল হিসেবে ধরে পুরো সেতুকে সাতটি ভাগে ভাগ করে চলছে সেতুর কাজ।  সে হিসেবে সাত নম্বর মডিউলের পাঁচটি স্প্যানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন বিচ্ছিন্নভাবে স্প্যান না বসিয়ে একটি করে মডিউলের কাজ ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে পুরো সেতুর সাতটি মডিউলের কাজ শেষ করেই স্প্যান বসিয়ে দেওয়া হবে। এখন আর বিচ্ছিন্নভাবে স্প্যান বসানোর কাজ হবে না।’

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মাওয়া প্রান্তে এখন পুরোদমে কাজ হচ্ছে। আমরা এখনও সেখানে দুটি স্প্যনের কাজ শেষ করতে পারিনি। কারণ সেখানে লোড টেস্ট হচ্ছে। লোড টেস্ট করার পরই আমরা সেখানে কাজটা ধরবো।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুরুতে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর এক নম্বর স্প্যানটি বসানো হয়েছিল ৩৭ নম্বর পিলারের ওপর। তার পাশের ৩৬, ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের কাজও শেষের দিকে। সব মিলে একসঙ্গে ১০টি পিলারের কাজ চলছে। সেতুর পিলারের আকৃতি অনেকটাই ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো দেখতে। এর জন্য প্রতিটি স্প্যানের আলাদা ডিজাইন করতে হচ্ছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, পদ্মাসেতুর মালপত্র সংরক্ষণের জন্য মাওয়া প্রান্তে ইয়ার্ডে স্থান সংকুলানের বিষয়টি বিবেচনা করে চীন থেকে সবগুলো স্প্যানের টুকরো এখনও দেশে আনা হয়নি। তবে যে সব স্প্যানের কাজ শেষ হয়েছে সেগুলো আগে বসানোর পরিকল্পনা করছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কন্ডিশন অনুযায়ী চীন থেকে স্প্যানগুলো আসবে। নদীর কন্ডিশন, আবহওয়ার আচরণ সব কিছু মিলিয়ে কাজ করতে হবে। এখানে গায়ের জোরে কিছু করা যাবে না। ’

সূত্র জানিয়েছে, পরিবর্তিত ডিজাইন অনুযায়ী এই ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের আরও ৪টি করে পাইল স্থাপন এবং গভীরতায় খানিকটা কম বেশি করা হচ্ছে। এমন সিদ্ধান্তে সব বিশেষজ্ঞ একমত হওয়ার পরই পদ্মা সেতুর কাজে নতুন গতি আসে। তাই মাওয়া প্রান্তেও কাজ শুরু হয় পুরোদমে। ২, ৩ ও ৪  নম্বর পিলার সম্পন্ন ছাড়াও ১৩ নম্বর পিলারের কাজ সম্পন্ন। ১৪ নম্বর পিলারের কাজও একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে।

জানা গেছে, ১৬টি পাইলের মধ্যে ১২টি পাইল সম্পন্ন। তবে এই পাইল বসানোর পরও পিলার উঠতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। তাই এক প্রান্ত থেকে স্প্যান বসানো বিলম্ব হচ্ছে।  এদিকে চীন থেকে আসা স্প্যানের স্তূপ পরে গেছে মাওয়ার কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কসপে। স্প্যান রাখার আর জায়গা নেই। তাই চীনে তৈরি করে রাখা স্প্যানগুলো পাঠাতে পারছে না। কুমারভোগের এই ওয়ার্কসপে এখনও ১৩টি স্প্যান রয়েছে। এর মধ্যে ৫টা স্প্যান ফিটিংস হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ১৮টি স্প্যান চীন থেকে আনা হয়। বাকি ৫টি স্প্যান সেতুতে ফিটিং করা হয়েছে। তাই এক প্রান্তের পরিবর্তে আপাতত মাঝের খুঁটি থেকেই স্প্যান বসানো শুরু হচ্ছে। তাই শিগগিরই ১ নম্বর মডিউলের ছয়টি স্প্যানের মধ্যে তিনটিই বসিয়ে দেওয়া হবে। এমনভাবে বসানো হবে যাতে পারে আবার নাড়াচড়া করা যায়। কারণ ৬ ও ৭ নম্বর পিলার এবং ১ নম্বর পিলার উঠে গেলে পাকাপোক্তভাবে স্থাপন করা হবে স্প্যান। এতে ওয়াকর্সপের জায়গা খালি হবে। চীনে তৈরি হয়ে থাকা স্প্যানগুলো কুমারভোগ ওয়ার্কশপে এনে ফিটিং এবং রং করাসহ অন্যান্য কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। পদ্মা মূল সেতুর ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ১৫০ মিটার দীর্ঘ ৪১টি স্প্যান। এছাড়া প্রায় সব স্প্যানই তৈরি হয়ে গেছে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর স্প্যানের ওপরে স্ল্যাব তৈরির কাজেও গতি আসছে। রোডওয়ে বক্স স্ল্যাব ২৮টি সম্পন্ন হয়েছে। নানা সাইজের এই বক্স স্ল্যাব প্রয়োজন হবে ৩ হাজার ৫০টি। এই স্ল্যাবের ওপর দিয়েই চলবে গাড়ি। কুমারভোগ ওয়ার্কসপের উত্তর পাশে এই স্ল্যাব তৈরি হচ্ছে। আর নিচের তলার ট্রেনের জন্যও সমপরিমাণ স্ল্যাব তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সাড়ে ৫শ’র বেশি ট্রেন ওয়ে বক্স স্ল্যাব হয়ে গেছে। এভাবেই দ্রুত এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতু তৈরির কাজ।

পদ্মা সেতুর সর্বশেষ টেস্ট পাইল বসানো হচ্ছে এখন। এটি বসানো হবে মাঝ পদ্মায় অর্থাৎ ২৫ থেকে ২৮ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি স্থানে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ৩ মিটার ডায়া বিশিষ্ট এ টেস্টিং পাইল স্থাপনের সম্ভবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে কুমারভোগ ওয়ার্কশপে পাইলের টিউব তৈরি করা হয়ে গেছে। ‘ডিটি ১০’ নম্বর এই টেস্টিং পাইল স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল প্রায় তিন মাস আগে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মাসেতুর মাওয়া প্রান্তে যে সব পিলারের জটিলতা পুরো শেষ হয়নি সেগুলোয় এখন টেস্ট পাইলের কাজ চলছে। নকশা জটিলতা ও নানা সমস্যার কথা বিবেচনা করে এতোদিন কাজ হয়েছে সেতুর জাজিরা প্রান্তের দিকে। তবে চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীর তীব্র স্রোতের কারণে মাওয়া প্রান্তে কাজে গতি আনা সম্ভব না হলেও পদ্মা সেতুর পরবর্তী স্প্যানগুলো মাওয়া প্রান্তে বসানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে এক সঙ্গে নদীর দুপ্রান্তেই দৃশ্যমান করা সম্ভব হবে পদ্মা সেতুর কাঠামো।