• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

১৫ লাখ কৃষককে বিনামূল্যে হাইব্রিড বীজ দেবে সরকার

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২০  

বোরো মৌসুমে উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের বিনামূল্যে হাইব্রিড বীজ দেবে সরকার। সারাদেশের ১৫ লাখ কৃষককে এক বিঘা জমি চাষের প্রয়োজনীয় বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। প্রথমবারের মতো এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় মনে করছে, এতে বাড়তি দুই লাখ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, দেশের ব্যাপক অঞ্চলজুড়ে বন্যা হওয়ায় এ বছর আমন মৌসুম থেকে যে পরিমাণ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন হবে না। ধারণা করা হচ্ছে, গতবারের তুলনায় আড়াই থেকে তিন লাখ টন ধান উৎপাদন কম হবে। এজন্য বোরো মৌসুমে আমনের ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে হাইব্রিড চাষ বাড়ানো হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত মৌসুমে এক কোটি ৫৫ লাখ টন আমন ধান উৎপাদন হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৪৮ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ লাখ হেক্টরে হবে হাইব্রিড ধানের চাষ। গত বছর ৯ লাখ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান চাষ হয়েছে। এ বছর দুই লাখ হেক্টরে বাড়তি হাইব্রিড জাতের ধান চাষের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এজন্য ১৫ লাখ কৃষককে মাথাপিছু এক বিঘা জমির জন্য দুই কেজি করে বীজ দেওয়া হবে। এতে প্রতি কৃষকের জন্য সরকারের খরচ পড়বে ৫০০ টাকা। মোট ব্যয় হবে ৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয় মনে করছে, এবার বোরো মৌসুম থেকে দুই কোটি ছয় লাখ টন ধান উৎপাদন হবে। গত বছর দুই কোটি দুই লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। বাড়তি জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হওয়ায় অতিরিক্ত দুই লাখ টন উৎপাদন বাড়বে।

মাঠ পর্যায়ে হাইব্রিড বীজ সরবরাহ করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের কাছে থাকা ৯০০ টন বীজ ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয়গুলোতে সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। বাকি বীজ বেসরকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলো ইতোমধ্যে এই বীজ সংগ্রহ ও সরবরাহ শুরু করেছে। কোন কোন কৃষক বিনামূল্যের এই বীজ পাবেন, তা নির্ধারণ করবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে থাকা উপজেলা কৃষি কমিটি ও ইউনিয়ন কৃষি কমিটি। ইতোমধ্যে তালিকার কাজও শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, যে এলাকার যে জাতের হাইব্রিড ধান চাষ হয়, তাদের সেই জাতের বীজই সরবরাহ করা হবে।

কয়েক বছর দেশে ধানের পর্যাপ্ত উৎপাদন হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে চাল রপ্তানির পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু এ বছর বন্যার কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। অন্যদিকে, দেশে চাহিদাও বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধান ভোগ্যপণ্য চালের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। মোটা চালসহ সব ধরনের চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের মজুদও অন্যান্য সময়ের তুলনায় কমে যাওয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হচ্ছে।

৬৪ জেলায় 'সমলয়ে' ধান চাষ: 

এ বছর দেশের ধান চাষ ব্যবস্থায় নতুনত্ব আসছে। প্রত্যেক জেলার একটি করে ইউনিয়নে 'সমলয়ে' ধান চাষ করা হবে। সমলয়ে চাষ বলতে একটি নির্দিষ্ট এলাকার সব জমি একসঙ্গে চাষ করা হবে। চাষ শেষে উৎপাদিত ফসল জমির মালিকদের জমির অনুপাতে ভাগ করে দেওয়া হবে। ধান চাষে যান্ত্রিকীকরণ ব্যবস্থা জনপ্রিয় করা এবং খরচ কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। পরীক্ষামূলকভাবে এই চাষের বীজ ও সার বিনামূল্যে দেবে সরকার। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, প্রতি ইউনিয়নে ৫০ একর জমিতে এ পদ্ধতিতে চাষ হবে। জমি চাষের বীজতলা তৈরি থেকে ধান কেটে মাড়াই পর্যন্ত হবে যন্ত্রের মাধ্যমে। যাদের জমি নেওয়া হবে, তাদের সব কাজে অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। ধান লাগানো হবে ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে। জমির আগাছা পরিস্কার হবে মেশিনে। ধান কাটা ও মাড়াই হবে বড় হারভেস্টর যন্ত্রের মাধ্যমে।