• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

শৈত্যপ্রবাহে চরম দুর্ভোগে খেটে-খাওয়া মানুষ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩  

মাঘের হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডায় কাঁপছে কুড়িগ্রামের মানুষ। টানা মৃদু শৈত্য প্রবাহের পর জেলাজুড়ে বইছে মাঝারি শৈত্য প্রবাহ। বুধবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মৌসুমে এটি জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড বলে জানিয়েছে রাজারহাট আবহাওয়া অফিস কর্তৃপক্ষ। 

নিম্নগামী তাপমাত্রা ও হিম বাতাসের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী, খেটে-খাওয়া, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষজন। 

সকাল থেকে সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ঘোড়ার গাড়িচালক, দিনমজুরসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষকে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে ভোগান্তি নিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য ছুটতে দেখা গেছে। 

জেলা সদরের ধরলা সেতু এলাকায় ফুচকা বিক্রি করেন রফিকুল ইসলাম (৬৫)। ফুচকা বিক্রি করেই তিনি পরিবারের ভরণপোষণ বহন করেন। কিন্তু কয়েক দিনের কনকনে ঠান্ডার কারণে তার ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। 

রফিকুল ইসলাম ডেইলি বলেন, ধরলা সেতুর পূর্ব পাশে আমার ফুচকার দোকান। কিন্তু কয়েক দিন ধরে কনকনে ঠান্ডার কারণে ব্যবসা করতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ঠান্ডায় সেতু এলাকায় দর্শনার্থী সমাগম না হওয়ায় তিন ধরে ফুচকা বিক্রি বন্ধ থাকায় পরিবারের খাদ্যের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছি। 

ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে সাইকেলে ঠেলে জেলা শহরের শহিদ জিয়া বাজারে সবজি বিক্রি করতে যাচ্ছেন পাঁচগাছির নওয়াবস এলাকার কৃষক সফিকুল ইসলাম (৬৫)।

সফিকুল ইসলাম বলেন, দুই-তিন ধরে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডার কারণে সবজি বিক্রি করতে বাজারে যেতে পারি না। ঠান্ডায় ক্রেতা সংকটের কারণে সবজি বিক্রি করে লোকসান গুনতে হয়। 

এদিকে কনকনে ঠান্ডা ও হিমেল হওয়ায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন ছিন্নমূল মানুষসহ জেলার চরাঞ্চলে বসবাসকারী কয়েক লাখ মানুষ। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। এসব অধিকাংশ মানুষই নিম্ন আয়ের হওয়ায় অনেকেরই নেই শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য। ফলে তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঠান্ডার কারণে অনেক মানুষ কাজে বের হতে না পারায় পরিবার নিয়ে কষ্টে রয়েছেন। 

চারদিন ধরে ধরলার অববাহিকায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জ থেকে জীবিকা নির্বাহের জন্য আসা বেদে সম্প্রদায়ের ৭টি পরিবার। কিন্তু টানা শৈত্য প্রবাহে কনকনে ঠান্ডায় জীবিকা নির্বাহের জন্য বের হতে পারছেন না তারা। শীতবস্ত্র না থাকায় শিশুরা রয়েছে কষ্টে। 

এই প্রতিবেদককে দেখে বেদে সম্প্রদায়ের আমিরুলের ছেলে তাহমিন (৪) বলেন, আমাদের ঠান্ডার কাপড় নেই। আমাদের ঠান্ডার কাপড় দেন। 

একই সম্প্রদায়ের সজীব (২৮) বলেন, ব্যবসা করতে আমরা মুন্সীগঞ্জ থেকে এখানে এসেছি। কিন্তু আমাদের শীতের কাপড় না থাকায় কাজে বের হতে পারছি না। এর ফলে না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।

তাপমাত্রা দীর্ঘ সময় নিম্নগামী থাকায় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শীতজনিত রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বৃদ্ধরাও।

কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১২টি বেডের বিপরীতে চিকিৎসা নেয়া ৩৮ জনের মধ্যে ৩৩ জনই শিশু। এদিকে শিশু ওয়ার্ডে ৪৮টি বেডের বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছে ৬২ জন শিশু, এছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ডে ৭৮টি বেডের বিপরীতে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় দ্বিগুন রোগী। প্রতিদিন হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে অন্তত; ১৮শ’ থেকে ১৫শ’ রোগী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ।

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাহিনুর রহমান শিপন জানান, শীতের শুরু থেকেই হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। তবে আমরা এই রোগীর চাপ সামাল দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি।

কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুহিন মিয়া বলেন, আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ মৌসুমে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ জানান, কুড়িগ্রামে শীতার্ত মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসন থেকে ৩৮ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও নতুন করে আরো ২৫ হাজার কম্বল বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।