• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

দ্রুত হাঁড়িভাঙ্গা আমের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি চায় রংপুরবাসী

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৩  

 
কোনো একটি দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া এবং ওই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাহলে সেটিকে ওই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তেমনি রংপুরের ঐতিহ্য হাড়িভাঙ্গা আম। এই আমের সুখ্যাতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে। ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাঁড়িভাঙ্গা আমকে জিআই পণ্য ঘোষণার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে ওই প্রচেষ্টা কি পর্যায়ে রয়েছে তা সংশ্লিষ্ট কেউ বলতে পারেন না। তাই রংপুরের সচেতন মহল হাড়িভাঙ্গা আমকে দ্রুত জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করেছেন।  

এছাড়া হাড়িভাঙ্গা আম সংরক্ষণের জন্য নেই কোনো পদ্ধতি, নেই কোন গবেষণা। এই আম সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়া চাষিরা পেলে স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পাঠানো সহজ হত এমনটাই মনে করছেন আম চাষিরা। এই আম এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সংরক্ষণ প্রক্রিয়া না থাকায় রপ্তানিকারকদের মাঝে অনিহা রয়েছে। ফলে বিদেশে বাণিজ্যিক ভাবে কৃষকরা এই আম রপ্তানি করতে পারছে না। 

জেলা সুজনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কাজী মো. জুননুনসহ  একাধিক সচেতন মহল দাবি করেছেন জরুরী ভিত্তিতে রংপুরের ঐতিহ্য হাঁড়িভাঙ্গা আমকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির। তারা আরও বলেন, এই আম সংরক্ষণ করতে পারলে চাষিরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি এই সুস্বাদু আমের স্বাদ আরও অনেকে নিতে পারত।  

কেমন করে হাঁড়িভাঙ্গা এল রংপুরে- এনিয়ে চমকপ্রদ তথ্য রয়েছে। মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিনের তেকানি গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, প্রায় ৮০ বছর আগে তার বাবা নফল উদ্দিন এই গাছটি রোপন করেছিলেন। তিনি গাছটি প্রসঙ্গে বলেন, শতবছর আগে মিঠাপুকুরের বালুয়া মাসুমপুর এলাকার জমিদার ছিলেন তাজ বাহাদুর সিংহ। তিনি খুব সৌখিন মানুষ ছিলেন। তার একটি ফলের বাগান ছিল। এই বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির ফল ছিল। পেশাদার কিছু আম ব্যাবসায়ী তার বাগান থেকে আম নিয়ে পদাগঞ্জ হাটে বিক্রি করতো। সেখান থেকে তার বাবা এই হাড়ি ভাঙ্গা আম ক্রয় করে আবাদ শুরু করেন। আমটি খুবই সুস্বাদু হওয়ায় তৎকালীন আমলে ৫ টাকা দিয়ে একশ আম কিনে আনেন এবং আম খাওয়ার পর আমের আঁটি থেকে চারা গজায়। ভাঁঙ্গা হাড়ির টুকরোর মাঝখানে গাছটি জন্মেছিল বলে গাছটির নামকরণ করা হয় হাড়িভাঙ্গা। তখন থেকেই এই অঞ্চলে হাড়িভাঙ্গা আমের যাত্র শুরু হয়। সেই গাছটি এখন পর্যন্ত জীবিত রয়েছে এবং ফলও দিচ্ছে। আমজাদ হোসেন হাঁড়িভাঙ্গা আমের জনক হিসেবে তার বাবার স্বীকৃতি দাবি তরেন। ৭৫ বছর আগের হাঁড়িভাঙ্গা আমের যাত্রা শুরু হলেও ১৯৯২ সাল থেকে রংপুরে হাড়িভাঙ্গা আমের সম্প্রসারণ শুরু হয়। হাড়িভাঙ্গা আমের সম্প্রসারক আব্দুস ছালাম। তিনি হাঁড়িভাঙ্গা আমের ব্যাপক সম্প্রসারণ করেন। হাঁড়িভাঙ্গা আম ১ হাজার ৯০০ হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ হয়। প্রতি হেক্টরে প্রায় ১০/১২ মেট্রিকটন আমের ফলন হয়। যার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকার বেশি।  

জেলা বৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, রংপুরে বর্তমান জেলা প্রশাসকের আগের জেলা প্রশাসক হাঁড়িভাঙ্গা আমের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা করেছিলেন। বর্তমানে ওই ফাইল কি পর্যায়ে রয়েছে তা তার জানা নেই বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এই আম ২০ জুন থেকে বাজারে পাওয়া যাবে।