• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

করোনা চিকিৎসায় দেশেই তৈরি হবে বিশ্বমানের ভেন্টিলেটর

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ এপ্রিল ২০২০  

করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ছোবলে ক্ষতবিক্ষত গোটাবিশ্ব। এখন মৃত্যু গোনা হচ্ছে মিনিটের কাঁটা ধরে। হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় ভেন্টিলেটর সেবা বাড়াতে কী করা যায়, সে উপায়ই খুঁজছে এখন সব দেশ। আক্রান্ত রোগীদের বাঁচাতে পৃথিবীজুড়েই তাই ভেন্টিলেটর নিয়ে হাহাকার চলছে। এই ‘লাইফ সেভিং ডিভাইস’ নিয়ে আমেরিকা-ইউরোপের মতো উন্নত দেশগুলোও পড়েছে গভীর সংকটে। 

করোনা আক্রান্ত বেড়ে গেলে বাংলাদেশেও পড়তে পারে ভেন্টিলেটর সংকটে। তাই উচ্চ প্রযুক্তির এই মেডিক্যাল ডিভাইসের পেটেন্ট, সফটওয়্যার, সোর্সকোর্ডসহ সব সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত ওমর ইশরাক। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্টেল করপোরেশন এবং ‘মেডট্রনিক’-এর চেয়ারম্যান তিনি। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মেডিক্যাল যন্ত্র নির্মাতা মেডট্রনিক্সের সহায়তা নিয়েই দেশে ভেন্টিলেটর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিগগিরই বৈশ্বিক স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী দেশেই শীর্ষ ইলেকট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ উদ্যোগে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ভেন্টিলেটর তৈরি হবে বলে আশা করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি)। এতে দাম যেমন কমবে, তেমনি দেশের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানিও করা যাবে।   

এ ব্যাপারে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, ‘পরিস্থিতি যদি খারাপের দিকে যায় তখন আমাদের ভেন্টিলেটর খুবই প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশেরই কৃতী সন্তান ওমর ইশরাকের আগ্রহ ও সহযোগিতায় মেডট্রনিকের ভেন্টিলেটরের ডিজাইনিং, সোর্স কোর্ডসহ সব কিছু তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ গ্রহণ করেছে। ওনার পেটেন্ট উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। টেসলা, ফোর্ডের মতো কম্পানি ভেন্টিলেটর উৎপাদনে গিয়েছে। আমরা মেডট্রনিকের সহায়তায় দেশে ওয়ালটনসহ ডিজিটাল ডিভাইস নির্মাতা কম্পানিগুলোর সহায়তায় শিগগিরই এটি তৈরি করতে পারব।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভেন্টিলেটর তৈরিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছাড়াও এফডিএস এবং ইউএর সার্টিফিকেশনের দরকার হয়, যেটি মেডট্রনিকের আছে। এতে আমাদের স্থানীয় উদ্ভাবকদের সক্ষমতা বাড়বে। ইলেকট্রনিক সামগ্রী তৈরির জন্য যেসব সক্ষমতা দরকার হয় তা ওয়ালটনসহ আরো অনেকের আছে। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এটি উৎপাদন ও রপ্তানি করতে চাই। মেডট্রনিকের সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও আলোচনা হয়েছে। হায়দরাবাদে প্রতিষ্ঠানটির স্থানীয় অফিস থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) অধ্যাপক মেজর ড. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘এটি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রযুক্তি স্থানান্তরের একটি বড় সুযোগ। আমরা ভেন্টিলেটর সংযোজন নিয়ে কাজ শুরু করেছি। শিগগিরই আমরা অ্যাসেম্বলি এবং ক্লিনিক্যাল টেস্টে যাব। এরপর প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়ে আমরা দেশীয় কম্পানিগুলোর মাধ্যমে ব্যাপক উৎপাদনে যাব।’

এদিকে ওয়ালটন সূত্র জানায়, নিজস্ব কারখানায় ওয়ালটন অক্সিজেন ভেন্টিলেশন যন্ত্রসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এসব জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি শুরু করবে ওয়ালটন।

এ ব্যাপারে জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, বিশ্বখ্যাত মেডিক্যাল যন্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিকের সহায়তায় ওয়ালটন ভেন্টিলেটর তৈরিতে এগিয়ে এসেছে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশে ভেন্টিলেটর উৎপাদন হবে।

ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ বলেন, ওয়ালটন সব সময় দেশের মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। সে জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষাকারী ভেন্টিলেটর, পিএপিআর (পাওয়ার এয়ার পিউরিফায়ার রেসপিরেটর), অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ইউভি ডিসইনফেকট্যান্ট, সেফটি গগলস, প্রটেকটিভ শিল্ড, রেসপিরেটরি মাস্ক ইত্যাদি চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরিতে কাজ করছে ওয়ালটন।

বর্তমানে এসব চিকিৎসা সরঞ্জামের গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) এবং ডিজাইন নিয়ে কাজ চলছে। কারখানাসহ অফিস ছুটি থাকলেও এ কাজে নিয়োজিত আছেন ওয়ালটনের অর্ধশতাধিক প্রকৌশলী। তাঁরা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দেশের জরুরি অবস্থা বিবেচনায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্র তৈরিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

ওয়ালটনের আরেক নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম বলেন, ‘প্রয়োজনের তাগিদে আমরা ভেন্টিলেটর উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি উচ্চ প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য। এটি উৎপাদন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে আমরা ভেন্টিলেটর উৎপাদনে যাব। দেশীয় চাহিদা পূরণ করে আছে রপ্তানির বিশাল সুযোগ।

এটুআই (এক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বে এখন ১০ লাখ ভেন্টিলেটরের চাহিদা আছে, এটি ক্রমেই বাড়ছে। সব কিছু ঠিক থাকলে আমরা দেশে তৈরি ভেন্টিলেটর রপ্তানিও করতে পারব।’

গবেষণা বলছে, যদি একজন কভিড-১৯ রোগী যদি অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রমের কারণে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে তবে ওই সময় সামান্য পরিমাণ অক্সিজেন ও বাতাস ঘন ঘন সরবরাহ করতে হবে। হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) যেসব রোগীকে নেওয়া হয় তাদের জন্য যান্ত্রিক ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়, যা দিয়ে দ্রুত দেহের অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেওয়া যায়। 

বিশেষজ্ঞরা জানান, ভেন্টিলেটরকে বলা হয় সাপোর্টিভ চিকিৎসা। অনেক সময় রোগের জটিলতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছলে দেখা যায়, রোগী নিজ থেকে শ্বাস নিতে পারছে না। তাঁর শ্বাসযন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে না। রেসপিরেটরি ফেলিওর হচ্ছে। তখন কৃত্রিম উপায়ে বাইরে থেকে মেশিনের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার চেষ্টা করা হয়। এটাই ভেন্টিলেশন। আর যে যন্ত্রের সাহায্যে এ চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেটি হলো ভেন্টিলেটর।