• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

নাইকো মামলায় জয় পেল বাংলাদেশ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ মে ২০২০  

করোনা ভাইরাস সংকটের মধ্যেও বড় একটি সুসংবাদ পেল বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে ছাতকের টেংরাটিলায় পুরো গ্যাসক্ষেত্র পুড়িয়েও এর দায় এড়াতে আন্তর্জাতিক আদালত ইকসিডে গিয়েছিল বহুজাতিক গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি নাইকো। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। সেই আদালতই তাদের দায়ী ঘোষণা করে বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে। শুধু গ্যাসের ক্ষতিই নয়, স্বাস্থ্য ও প্রতিবেশগত ক্ষতির আর্থিক পরিমাণও এর সঙ্গে যোগ করতে বলেছে আদালত। বাংলাদেশ আগেই ১০০ কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি উত্থাপন করেছে। এর সঙ্গে এখন অন্যান্য বিষয়ও যোগ হবে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পাবে তা পরবর্তী শুনানিতে নির্ধারণ করবে ইকসিড।

গতকাল রবিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ সুখবর জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তির প্ল্যাটফরম ইটারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপুট (ইকসিড) নাইকো মামলায় বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এই করোনা দুর্যোগে মানুষের মন যখন ভারাক্রান্ত তখন এমন একটি খবর নিশ্চয় কিছুটা স্বস্তি দেবে। প্রতিমন্ত্রী জানান, দীর্ঘ ১০ বছর আইনি প্রক্রিয়ার পর এই মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। এতে বিশ্বের কাছে বার্তা গেছে- বাংলাদেশে গিয়ে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে না। তিনি

বলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইকসিড এই রায় দেয়। মার্চের শুরুতে সংবাদ সম্মেলন করে এই রায় জানানোর কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির জন্য তা করা হয়নি। এখন আমরা দেশবাসীকে সংবাদটি দিলাম। তিনি বলেন, ইকসিড একই সঙ্গে নাইকোর গ্যাস দুর্ঘটনার কারনে স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি নির্ণয় করে বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলেছে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে আরেকটি রায় দেবে। তাতে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। তবে সব মিলিয়ে চূড়ান্ত রায় পেতে আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আমলে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, তৎকালীন পেট্রোবাংলার পরিচালক মীর কাশেম, গিয়াস উদ্দিল আল মামুন এবং মোশারফ ভুইয়ারা এ চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদেরও আইন অনুযায়ী বিচার হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান, মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গনি, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবদুুর ফাত্তাহসহ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০০৫ সালের জানুয়ারি ও জুনে দুদফায় নাইকোর অনুসন্ধান কার্যক্রম চলাকালে ছাতকের টেংরাটিলার এ গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে। প্রায় ৩শ ফুট উপরে উঠে গ্যাসের আগুনের লেলিহান শিখা। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে জ্বলতে থাকে আগুন। গ্যাস বের হয় পুকুর, ফসলি জমি ও বসতবাড়িতে ফাটল দিয়ে। নাইকোর গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনায় ৭৪৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে বাংলাদেশ। নাইকো তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বাপেক্সও এই ক্ষতি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নাইকোর অন্য গ্যাস ফিল্ড ফেনীর গ্যাসের বিল বাবদ পাওনা অর্থ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে নাইকো ইকসিডে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল ও ১৬ জুন দুটি মামলা করে। একটি আটক গ্যাস বিল আদায় এবং অন্যটি টেংরাটিলা বিস্ফোরণের দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে।

প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে যে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয় তা ২০১৮ সালে ইকসিডে জমা দেওয়া হয়েছে। ইকসিড রায়ে বলেছে, নাইকোর গাফিলতি এবং অদক্ষতার জন্যই বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফলে এর দায় নাইকোকেই নিতে হবে। বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামী সেপ্টেম্বরে আবার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি পেছাবে।

জ্বালানি সচিব আনিসুর রহমান বলেন, কানাডিয়ান তেল গ্যাস কোম্পানি নাইকো ২০০৩ সালে বিএনপির সময়ে ছাতক গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান উন্নয়নের কাজ পায়। একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রকে প্রান্তিক দেখিয়ে বিএনপি সরকার নাইকোকে কাজ দেয়। এতে রাষ্ট্রীয় বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কথা উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করেছে। এ মামলা দেশের আদালতে চলমান রয়েছে।

মামলাটির আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গণি জানান, বাপেক্সের ১১৮ মিলিয়ন ডলার এবং পেট্রোবাংলার ৮৯৬ মিলিয়ন ডলার মিলিয়ে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এর বাইরে আদালত বলেছে, স্বাস্থ্যগত এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি নিরূপণ করে আদালতে জমা দিতে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। তিনি আরও জানান, করোনার কারণে আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ঠিক হওয়ার জন্য সময় প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। আমরা তাদের দিয়ে পুনরায় মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন দেব। এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মঈন বলেন, নাইকো দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন আমাদের ব্লক ৯-এ বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রে নাইকোর সম্পত্তি দিয়ে তা পূরণ করতে হবে। এতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ কত ক্ষতিপূরণ পেতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাইকো আমাদের কাছে ৩০ মিলিয়ন ডলারের গ্যাসের বিল পাবে। এ ছাড়া ব্লক ৯-এ নাইকোর সম্পত্তি রয়েছে। এই সম্পত্তি তারা বছর কয়েক আগে ২৮০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করতে চেয়েছিল। ফলে বাংলাদেশ ১ বিলিয়নের মধ্যে ৩১০ মিলিয়ন ডলারের মতো পেতে পারে।

এ সময় জ্বালানি সচিব বলেন, আমাদের এই অর্থ তাদের দিয়ে দিতে হতো। এখন আর দিতে হচ্ছে না। আবার এর ফলে সারাবিশ্বের কাছে একটি সুন্দর বার্তা পৌঁছেছে। এটিও বিবেচনা করতে হবে। আমরা আমাদের বিদেশি মিশনগুলো কাজে লাগিয়ে এই বার্তাটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারি। যাতে বাংলাদেশে কাজ করে এমন বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে একটি বার্তা যায় যে বাংলাদেশে চুক্তির বাইরে কিছু করে পার পাওয়া যাবে না।