• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ইতিহাসে অনন্য: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা হস্ত‌ক্ষেপ করবে না: ওবায়দুল কাদের লালমনিরহাটে যুবলীগ কর্মীর পায়ের রগ কাটলেন যুবদল নেতা বাসার ছাদ থেকে পড়ে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক

জুনেই শুরু হচ্ছে পুরান রেল সেতু উন্নীতকরণ কাজ   

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩  

চলতি বছরের জুনেই শুরু হচ্ছে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপরে নির্মিত পুরনো সেতু উন্নীতকরণের কাজ। পাশাপাশি একই সময়ে চালু হচ্ছে সওজের নতুন নির্মিত ফেরি সার্ভিস। গতকাল ২৮ মে বিকেলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জি এম জাহাঙ্গীর আলম ও সওজের চট্টগ্রাম জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী পিংন্টু চাকমা পৃথকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জি এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বুয়েটের সমীক্ষা রিপোর্টের পরেই সেতু উন্নীতকরণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং দরপত্র উন্মুক্তও করা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে সেতু উন্নীতকরণের কাজ শুরুর প্রত্যাশা করছেন তিনি।

অপর দিকে সওজের চট্টগ্রাম জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী পিংন্টু চাকমা বলেন, কালুরঘাট সেতু উন্নীতকরণ কাজ শুরু করা ও সড়কে বর্তমান চলাচলরত যানবাহনের চাপ (ট্রাফিক ভলিউম) হ্রাস করার জন্যই সেতুর পাশে নতুন ফেরি সার্ভিস প্রস্তুত করা হয়েছে। এ যাবৎ ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য দুই দফা দরপত্র আহ্বান করা হলেও কাক্সিক্ষত সারা মেলেনি। ফলে বাধ্য হয়ে তৃতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এবারো যদি কাক্সিক্ষত সাড়া পাওয়া না যায় তাহলে সওজ নিজস্ব লোকল দিয়েই ফেরি সার্ভিস চালু করার আর তা হবে সেতুর কাজ শুরুর আগেই এমনটা প্রত্যাশা করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, রেলওয়ের পুরনো সেতুর পাশে নতুন রেল সেতু নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত পুরনো কালুর সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করবে বহুল প্রত্যাশিত দোহাজারী-কক্সবাজার ট্রেন সার্ভিস। সে কারণে পুরনো কালুরঘাট রেল সেতুটির বর্তমান লোড ক্যাপাসিটি প্রতি এক্সেলে ১২ মেট্রিকটন থেকে প্রায় ১৫ মেট্রিকটনের কাছাকাছি উন্নীতকরণ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার ভায়া গুনদুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। দেশের বহুল প্রত্যাশিত ও দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প সিঙ্গেল ট্র্যাক ডাবল গ্যাজ (মিটারগ্যাজ বা এমজি যার প্রতি এক্সেলে লোড ক্যাপাসিটি হবে ১৫ মেট্রিকটন আর ব্রডগ্যাজ বা বিজি যার প্রতি এক্সেল লোড ক্যাপাসিটি ২৫ মেট্রিকটন)। এ দিকে দোহাজারী থেকে নগরীর ষোলশহর পর্যন্ত প্রায় ৪৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৪০ কিলোমিটার সিঙ্গেল ট্র্যাক মিটারগ্যাজ লাইনটি রূপান্তর করা হচ্ছে ডাবলগ্যাজ লাইনে (মিটার গ্যাজ ও ব্রডগ্যাজে)। কাজও খুব দ্রুত এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের প্রকৌশলী ও জয়দেবপুর ইশ্বরদী প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ও নুতন সেতু প্রকল্পের ফোকাল পার্সন রেলওয়ের প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা।

একই সাথে এবার আলোর মুখ দেখছে যৌথ অর্থায়নে কালুরঘাটে নতুন রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি, এতে ব্যয় হবে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের রয়েছে তিন হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে কোরিয়ার ইউসিং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি নতুন সেতু নির্মাণের জন্য সমীক্ষা শেষ প্রতিবেদন দাখিল করে গত ডিসেম্বরে। তবে তাতে কারেকশন থাকায় পুনরায় সমীক্ষার জন্য দেয়া হলে তার পুনরায় সমীক্ষা শেষে ২৫ এপ্রিল কোরিয়ার ইডিসিএফের নিকট দাখিল করেন।

তিনি বলেন, শিগগিরই রেলওয়ের নতুন সেতু নির্মাণের জন্য ডিপিপি প্রস্তুত করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের প্রকৌশলী ও জয়দেবপুর ইশ্বরদী প্রকল্পের প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ও নুতন সেতু প্রকল্পের ফোকাল পার্সন রেলওয়ের প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা।

তিনি জানান, বর্তমানে কালুরঘাটের যে পুরনো সেতু রয়েছে তার ঠিক ৭০ মিটার উজানে এই নতুন সেতু নির্মিত হবে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৭০০ মিটার আর এতে নেভিগেশন হাইট বা উচ্চত হচ্ছে ১২.২ মিটার আর এ জন্য দুই প্রান্তে সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে (স্লোব) ২.৫০ কিলোমিটার করে। সমীক্ষা অনুযায়ী নতুন সেতুর প্রস্ত হচ্ছে ৭০ ফুট। এর মধ্যে ৫০ ফুটে হবে ডাবল গ্যাজ (এমজি ও বিজি) ডাবল ট্র্যাক। ২০ ফুটের মধ্যে দুই লেনের সড়ক পথ তৈরি করা হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে এ বৃহৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ১২৯ কিলোমিটার সিঙ্গেল ট্র্যাক ডাবল গ্যাজ (একই সাথে মিটার গ্যাজ বা এমজি ও ব্রডজ বা বিজি) দীর্ঘ রেলপথটি নির্মিত হচ্ছে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে। প্রথম ভাগে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার (দুই লটে) রেলপথ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রথম অংশের কাজ সমাপ্তের পরেই শুরু হবে কক্সবাজার-গুনদুম পর্যন্ত অবশিষ্ট ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ।

জানা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের সীমানার ঘুনদুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসছে চার হাজার ৯১৯ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে প্রথম ধাপে দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় দুই ভাগে প্রথম ভাগে বা লটে দোহাজারী-রামু রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আর দ্বিতীয় ভাগের বা লটে রামু-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয় একই বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে। এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে রেলপথ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে যৌথভাবে চায়নার দু’টি এবং বাংলাদেশর স্বনামধন্য দু’টি আন্তর্জাতিক মানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সাথে বাংলাদেশ সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তি সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। ২ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় প্রথম লটে দোহাজারী-রামু রেলপথ নির্মাণ কাজের চুক্তি হয়েছিল চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও দেশের তমা কন্সট্রাকশন কোম্পানির মধ্যে এবং দ্বিতীয় লটে ৩ হাজার ৫০২ কোটি ৫ লাখ ২ হাজার টাকায় রামু- কক্সবাজার রামু রেলপথ নির্মাণকাজের চুক্তি হয় চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) এবং দেশের স্বনামধন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সাথে।

এই প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পরই দ্বিতীয় ধাপে কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘুনদুম পর্যন্ত অবশিষ্ট ২৮ কিলোমিটার রেলপথের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রেলপথ প্রকল্পের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) প্রকৌশলী মফিজুর রহমান।

চট্টগ্রাম দোহাজারী ভায়া ঘুনদুম রেললাইন প্রকল্পে রয়েছে ৯টি নতুন রেলওয়ে স্টেশন দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকোরিয়া, ডুলহাজার, রামু, ইসলামাবাদ ও কক্সবাজার সদর রেলস্টেশন, ৩৯টি ছোট ও ব্রিজ, ১৭৬টি কংক্রিট বক্স কালভার্ট, ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট (পাইপ কালভার্ট)। এ ছাড়াও ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন রেললাইনে অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থাও সংযোজন করা হচ্ছে।

এ ছাড়া কক্সবাজার সৈকতে আইকোনিক রেলস্টেশন নির্মিত হচ্ছে, যার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম লটের কাজের মধ্যে রয়েছে চুনতি অভয়ারণের মধ্য দিয়ে বন্যহাতি অবাধে চলাচলের জন্য চারটি নিরাপদ পথ তৈরি (এর মধ্যে দুইটি আন্ডার পাস ও একটি ওভার পাস রয়েছে)। এই আন্ডার ও ওভার পাস পৃথিবীর মধ্যে সর্ব প্রথম বাংলাদেশেই করা হলো। এ ছাড়া দ্বিতীয় লটে রয়েছে তিনটি আন্ডার পাস আর তা হচ্ছে রামু ফুটবল চত্বরে এবং অপর দু’টি হচ্ছে বাকখালী নদীর কক্সবাজার প্রান্তে।