• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

অমিতাভ কী ছিলেন, যেভাবে হলেন?

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮  

অমিতাভ বচ্চন। প্রথম এশিয়ান অভিনেতা, যার মোমের প্রতিকৃতি লন্ডনের মাদাম তুসো মিউজিয়ামে স্থান পায়। ঘড়ি এবং কলম সংগ্রহ করা এই তারকার অন্যতম শখের কাজ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১১টি গাড়িও আছে তার। প্রথম হিট ছবি ‘জাঞ্জির’।

তবে জাঞ্জিরের আগে পরপর অনেকগুলো ছবি ফ্লপ হয়েছে অমিতাভ বচ্চনের। আর এই সব্যসাচী অমিতাভ দুই হাতেই সমানভাবে লিখতে পারেন। একবার মাত্র ৫ ঘণ্টায় ২৩টি দৃশ্যের ডাবিং করেছেন তিনি, যা বলিউডের ইতিহাসে অনন্য রেকর্ড।

বড় পর্দায় অমিতাভ বচ্চনের প্রিয় নাম হলো বিজয়। ২০টিরও বেশি ছবিতে তাকে দেখা গেছে এই নামে। তাছাড়া তার প্রথম নামকরণ হয়েছিল ইনকিলাব নামে। পরে নাম বদলে রাখা হয় অমিতাভ। যার অর্থ যে আলোর শেষ নেই।

বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভের শুরুটা ‘সাত হিন্দুস্তানি’ ছবি দিয়ে। ১৯৬৯ সালের ঘটনা। সিনেমার সাতটি প্রধান চরিত্রের একটিতে তিনি অভিনয় করেছেন। আর এই ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়নি। কিন্তু এতে তিনি তার জাত চিনিয়েছেন। নবাগত হিসেবে ওই ছবিতে তিনি জাতীয় পুরস্কার বগলবন্দি করেছেন।

তবে তার উত্থানটা ‘আনন্দ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এতে তিনি অভিনয় করেন সুপারস্টার রাজেশ খান্নার সঙ্গে। এই ছবিতে বাণিজ্যিক সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে চলচ্চিত্র সমালোচকদের প্রশংসাও আদায় করতে সক্ষম হয় অমিতাভ। সে বছর ফিল্মফেয়ারে সেরা সহশিল্পীর পুরস্কার পান তিনি। সে বছরই মুক্তি পায় অমিতাভের ‘পরওয়ানা’। সে ছবিটাও প্রশংসিত ও ব্যবসাসফল হয়।

এরপরই উল্টো হয় অমিতাভের জীবনে। কোন সিনেমাই হিট হয় না তার। সবই সুপার ফ্লপ হয়। ১৯৭৩ সালে ফের বক্স অফিস মাত করেন প্রকাশ মেহরার ‘জানজির’ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করে। ইন্সপেক্টর বিজয় খান্নার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন। আর এর মাধ্যমেই মূলত তার নামের সঙ্গে জুড়ে যায় ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ খ্যাতিটা। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত তিনি টানা অভিনয় করেন। তারপর নেন সাময়িক বিরতী।

অভিনয় ছাড়া অমিতাভ বচ্চন রাজনীতিতেও ছিলেন সরব। তার পারিবারিক বন্ধু ছিলেন রাজীব গান্ধী। ১৯৮৪ সালে তার সমর্থনে অমিতাভ বচ্চন রাজনীতিতে আসেন। এ সময়ে অভিনয়ে ছিলেন না বলিউড শাহেনশাহ। বিরতী নেন ছোট ও বড় পর্দা থেকে।

এলাহাবাদ লোকসভা আসনে উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ এন বহুগুনার বিরুদ্ধে নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি (৬৮.২% ভোট পেয়ে) ভোটে জয়লাভ করেন। ক্ষমতায় এসে ঠিক তিন বছরের মাথায় তিনি আবার পদত্যাগ করেন। পরে অভিনয়ের প্রতি আবারো মনোযোগী হন অমিতাভ।

ওই সময় যশরাজ ফিল্মসের ‘মোহাব্বতে’ ছবির মাধ্যমে ফিরেন তিনি। এরপর একে একে অভিনয় করেছেন ‘কাভি খুশি কাভি গাম’,‘ আঁখে’, ‘বাগবান’,‘খাকি’,‘দেব’, ‘বান্টি অউর বাবলি’ এর মত হিট ছবি।

তবে অমিতাভের ক্যারিয়ার জীবনে ২০০৫ সাল ছিল অন্যতম সেরা বছর। সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘ব্ল্যাক’ ও রামগোপাল ভার্মার ‘সরকার’ এই দুই ছবি অমিতাভ বচ্চনকে উচ্চতার অন্য শিখরে নিয়ে যায়। ‘দ্য কিং লিয়র’, ‘চিনিকম’, ‘পা’ ছবি দিয়ে নিজেকে আবার নিরীক্ষা করেছেন অমিতাভ। ‘পিকু’তে অনবদ্য অভিনয়ে নিজের ক্যারিয়ারে আরেকটি বিশেষ পালক যুক্ত করেছেন।

তাছাড়া ‘পিংক’ ছবিতেও নিজের প্রতিভার মূল্য রেখেছেন বলিউড শাহেনশাহ। এই সময়ে এসেও তিনি নিজেকে ভাঙছেন, দর্শক মাতাচ্ছেন। গায়ক হিসেবেও রয়েছে অমিতাভের সুপরিচিতি। গানে তার ভরাট কন্ঠ এনে দেয় ভিন্নমাত্রা। টেলিভিশনে ‘কোন বনেগা ক্রোড়পতি’র সফল উপস্থাপক তিনি।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, ক্যারিয়ারের শুরুতে তার ভরাট কন্ঠই ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। কম কটুক্তি শুনতে হয়নি এই নিয়ে। আরো অজানা তথ্য হলো, সিনেমায় আসার আগে ‘অল ইন্ডিয়া’ রেডিওতে ঘোষকের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন অমিতাভ। শুরুতেই কণ্ঠের জন্য তাকে খারিজ করে দেয়া হয়। অথচ আজ সেই অমিতাভ অজস্র অনুষ্ঠানে সূত্রধর, নেপথ্য গায়ক এবং উপস্থাপকের ভূমিকায় কাজ করছেন।

জনপ্রিয়তার সঙ্গে সমালোচনাটাও তার জীবনের সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলছে। যেন একই পথের পথিক দুটি উপাদানই। তবে তার বিশ্বাস সমালোচকরাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধু। তাইতো গত বছর কোন এক সময়ে তিনি নিজের অফিশিয়াল ব্লগে লিখেছেন, যখন কেউ আপনার সমালোচনা করেন, মনে রাখবেন তিনি আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি ভাবেন। এটা সবার উপভোগ করা উচিত। এটা আমার কথা নয়। তবে এই কথাগুলোকে আমি খুব সম্মান করি।

পর্দায় খুবই বিনয়ী ছিলেন অমিতাভ। নানা সময়ে রেখার সঙ্গে তার প্রেমের কাব্য রচনা হলেও স্ত্রী জয়া বচ্চনের সঙ্গে সংসার আজো অটুট তার। ১৯৭৩ সালে জয়া ভাদুরীর সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এই দম্পতির দুই সন্তান। মেয়ে শ্বেতা নন্দা এবং ছেলে অভিষেক বচ্চন।

এক হিন্দু-শিখ পরিবারে অমিতাভ বচ্চনের জন্ম। যা উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদে। তার পিতা হরিবংশ রাই বচ্চন একজন নামকরা হিন্দি কবি ছিলেন। আর মা তেজি বচ্চন ছিলেন ফৈসলাবাদের এক শিখ-পাঞ্জাবি। পিতামাতার দুই ছেলের মধ্যে অমিতাভ ছিলেন বড়।

বচ্চনের মায়ের ইচ্ছে ছিল, তিনি অভিনয় করবেন। তার মা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগও পান। কিন্তু সাংসারিক কর্তব্যের চাপে সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অভিনেতা হওয়ার উদ্দেশ্যে ২০ বছর বয়সেই তিনি কলকাতার ব্ল্যাকার অ্যান্ড কোং নামে জাহাজ কোম্পানির কাজে ইস্তফা দেন। পরে মুম্বাইতে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আগ পর্যন্ত সংগ্রাম করে যান।

তবে অমিতাভ বচ্চনের শুরুর পথটা সহজ ছিল না। জীবন-সংগ্রামের দিনগুলোতে মুম্বাইয়ের রাস্তার পাশে বেঞ্চিতেও রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে এই শাহেনশাহ’র। তাছাড়া ওই সময় অমিতাভের বেতন ছিল ৩০০ রুপি।

বলিউডের স্বনামধন্য এই তারকা বর্নিল ক্যারিয়ারে পেয়েছেন ‘পদ্মশ্রী’, ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ’সহ নানা খেতাব। তাছাড়া তিনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার, এর মধ্যে তিনটিই পৌঢ় বয়সে। বেশ কয়েকবার ফিল্মফেয়ারসহ পেয়েছেন অসংখ্য দেশী বিদেশী পুরস্কার।

আজো অমিতাভের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। প্রতি জন্মদিনে প্রিয় মানুষেরা কীভাবে শুভেচ্ছা জানায় তা তিনি হুবহু মনে রাখতে পারেন। ১৯৪২ সালের ১১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেছেন কিংবদন্তী এই অভিনেতা।