• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জালিয়াতির মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করেন জামায়াত নেতা সাঈদী

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩ মে ২০২০  

জালিয়াতির মাধ্যমে তার নাম পরিবর্তন করে করা হয়েছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। অন্যদিকে সনদপত্রে ঘষামাজা করে দাখিলে তার বয়স করা হয় ১৬ বছর। আলিমে ১৯ বছর করা হয়। নিজেকে আল্লামা, মাওলানা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী প্রমাণে এই যুদ্ধাপরাধী দাখিল পাসের সনদপত্র জালিয়াতি করেছেন বলেও প্রমাণিত হয়েছে।

দাখিলের সনদপত্রে তার নাম ছিল মোস্তফা দেলাওয়ার হোসাইন। আলিমের সনদপত্রে সেটা ছিল আবু নাঈম মো. দেলাওয়ার হোসাইন। আগের দাখিল সনদপত্র অনুযায়ী সাঈদীর জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৩ মার্চ। আর সেখানে তার দাখিল পাসের বছর দেখানো হয়েছিল ১৯৫৭ সালে। সে হিসেবে তিনি দাখিল পাস করেন মাত্র ১০ বছর বয়সে!

জানা গেছে, সাঈদীর দাখিল ও আলিম পরীক্ষা পাসের সনদপত্র ও জন্ম তারিখ সংশোধন করা হয়েছে কথিত পরীক্ষার যথাক্রমে ৪৮ ও ৫১ বছর পর। উল্লেখ্য, পাবলিক পরীক্ষার আইন অনুযায়ী পাস করার দুই বছরের মধ্যে একজন উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর বয়স সংশোধন করা যায়। কিন্তু দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নাম ও বয়স পাল্টেছিলেন পাস করার ৫১ বছর পর।

অভিযোগ রয়েছে, ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় মনোনয়নপত্রে এসব অসঙ্গতি ধরা পড়তে পারে তা বুঝতে পেরে ওই বছরের ১০ নভেম্বর মাত্র ৪ ঘণ্টার মধ্যে মাদ্রাসা বোর্ড থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে নাম ও বয়স পরিবর্তন করে সংশোধিত সনদপত্র বের করে আনা হয়। এ দুর্নীতি ও সনদ জালিয়াতির সঙ্গে মাদ্রাসা বোর্ডের কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

তাই তিনি আদৌ দাখিল পাস করেছেন কি না সেটা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, স্বঘোষিত এই “আল্লামা”পরীক্ষা না দিয়েই সরকারি নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা তৎকালীন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ১০ বছর বয়সে দাখিল পাসের সনদপত্র বের করে এনেছেন।

সাঈদীর নাম ও বয়স পাল্টানোর অভিযোগের তদন্ত করতে একটি উপ-কমিটি গঠন করে জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। কমিটির সদস্য আব্দুল ওহাবকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মো. শাহ আলম ও বীরেন শিকদার। তদন্ত কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম ফারুক।

এ উপ-কমিটি দীর্ঘ তদন্ত করে সাঈদীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগের সত্যতা পেয়ে স্থায়ী কমিটির কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে। তবে উপ-কমিটি জালিয়াতি পেলেও তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে সাঈদীর সনদ বাতিল করার সুপারিশ এবং নাম ও বয়স পাল্টানোর ঘটনায় জড়িত মাদ্রাসা বোর্ডের কর্মকর্তাদের শাস্তির সুপারিশ না থাকায় প্রতিবেদনটি ফেরত পাঠানো হয়।

এর আগে, সাঈদীর দশ বছর বয়সে দাখিল পাস ও পাস করার ৫১ বছর পর নাম ও বয়স পাল্টানোর খবরটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষা সচিব মাদ্রাসা বোর্ডের কাছে প্রকাশিত খবরটির বিষয়ে সব কাগজপত্র তলব করেন।

প্রসঙ্গত, যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের  ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ আপিলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়৷ পরে সাঈদীর খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দায়ের করেন তার আইনজীবী৷ তারপর রাষ্ট্রপক্ষ তার শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করে৷ আর রিভিউয়ের রায়ে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়৷