• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

প্রাণীজগতের যত সুপারড্যাড!

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮  

বাবা হতে পারা সত্যিই বেশ আনন্দ ও গর্বের বিষয়। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, এই বাবা হওয়ার গৌরব অর্জন করতে যদি আপনাকে দুই হাজার সন্তান জন্ম দিতে হয়! ভয়ানক শোনাচ্ছে তাই না? হ্যাঁ, মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি প্রযোজ্য নয়। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, পুরুষ সি-হর্সদের বাবা হওয়ার জন্য এই কঠিন কাজটিই করতে হয়। শুধু সি-হর্সরাই নয় প্রাণীজগতে এমন অনেক পুরুষ প্রাণীকেই বাবা হওয়ার জন্য করতে হয় আত্মত্যাগ।

 

1.প্রাণীজগতের যত সুপারড্যাড!

বিশেষ প্রজাতির হার্ডহেড ক্যাটফিশকে বাবা হওয়ার চরম পরীক্ষা দিতে হয়। স্ত্রী ক্যাটফিশের পাড়া ডিমগুলোকে পুরুষ ক্যাটফিশ মুখে নিয়ে পাহাড়া দেয়। একটি দুটি ডিম নয়, একসঙ্গে ৬৫ টি! ডিমগুলো তার মুখে এত পরিমাণ জায়গা দখল করে যে, পুরুষ ক্যাটফিসটি কিছু খেতেই ভয় পায়; পাছে না আবার সে নিজের ডিমকে গিলে ফেলে! তাই ডিমগুলো পরিণত হওয়ার পথে তাকে প্রায় ২ মাস না খেয়ে থাকতে হয়!

 

2.প্রাণীজগতের যত সুপারড্যাড!

তবে পুরুষ জায়ান্ট ওয়াটার বাগ নামের একটি পতঙ্গকে হার্ডহেড ক্যাটফিশের তুলনায়ও অধিক ভার বহন করতে হয়! স্ত্রী ওয়াটার বাগ পুরুষের পিঠে প্রায় ১০০ টির মত ডিম পেড়ে যায়, পুরুষটিকে পরবর্তী দুই থেকে তিন সপ্তাহ এই ডিমগুলো পিঠে নিয়ে ঘুরতে হয়। কিন্তু ওই সময় ডিমগুলো থেকে নিঃসৃত মিউকাস তার ডানাগুলোকে আটকে দেয় ফলে তার পক্ষে ওড়া সম্ভব হয় না। বেচারা পুরুষ ওয়াটার বাগটি এ কারণে সহজেই শিকারীদের শিকারে পরিণত হবার ঝুঁকিতে থাকে। উপরন্তু, ডিমের ভারে তাকে এত ধীরগতিতে চলতে হয় যে, শামুকের মতো কিছু ধীরগতিসম্পন্ন প্রাণী শিকার করে বাঁচতে হয়; আর যদি এরকম শিকার না পাওয়া যায় তবে না খেয়ে থাকতে হয়। কিন্তু নিজের বংশধরদের জন্মদান নিশ্চিত করার জন্য পুরুষ ওয়াটার বাগের এ আত্মত্যাগ স্বীকার করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর জায়ান্ট ওয়াটার বাগ বাবারা আবার মুক্ত জীবন যাপন করতে পারে, কারণ বাচ্চারা নিজেদের পথ নিজেরাই দেখে নেয়, লালন পালনের কোনো ভাবনা নেই।

 

3.প্রাণীজগতের যত সুপারড্যাড!

প্রাণী জগতে আরেকটি প্রাণী রয়েছে যাদের পুরুষ শ্রেণীর এই শান্তিটুকুও নেই। বলছি দক্ষিণ আমেরিকান উটপাখি সদৃশ প্রাণী রিয়া'র কথা। এই পুরুষ পাখিদের তো একসঙ্গে কয়েকটি পরিবারের বাচ্চাদের পালন করতে হয়! প্রজনন ঋতুতে একটি পুরুষ রিয়া একসঙ্গে অনেক স্ত্রীকে আকর্ষণ করতে বড় বাসা বানায়। অন্তত পাঁচ থেকে সাতটি স্ত্রী রিয়াকে সঙ্গী বানিয়ে তাদের সঙ্গে প্রজনন ঋতুতে সঙ্গমে লিপ্ত হয় একটি পুরুষ রিয়া পাখি। প্রজনন ঋতুর শেষ দিকে এসে স্ত্রী রিয়াগুলো ডিম পাড়ে এবং তারপর পালিয়ে যায়, একদম পগার পার! বেচারা পুরুষ রিয়ার ওপর তখন দায়িত্ব পড়ে ৩০ অথবা তারও বেশি সংখ্যক ডিমে তা দেয়া ও বাচ্চাগুলোকে ছয় মাস পর্যন্ত লালন পালন করার।

 

4.প্রাণীজগতের যত সুপারড্যাড!

আমাদের তালিকায় এর পরে আছে পুরুষ এম্পেরোর পেঙ্গুইনরা। বাবা হা জন্য এদেরও কম সাধনা করতে হয় না। স্ত্রী পেঙ্গুইনরা ডিম পেড়ে সেগুলো পুরুষ পেঙ্গুইনদের হাতে ন্যস্ত করে দিয়ে যায়। পুরুষ পেঙ্গুইনদের উপরে পড়ে বাচ্চাদের লালন পালনের দায়িত্ব।কিন্তু পেঙ্গুইনরা কখনো বাসা বানায় না, যে তার মধ্যে রেখে ডিমগুলোকে তা দেয়া যাবে।এ কারণে পুরুষ পেঙ্গুইনদের সূক্ষ্ম ভারসাম্যের পরীক্ষা দিতে হয়। তারা ডিমগুলোকে পায়ের উপর রেখে তা দিতে থাকে। পা বরফ থেকে উপরে রাখতে হয়। এজন্য তারা শিকারও করতে পারে না, খাওয়া-দাওয়া একদম বন্ধ। কিন্তু কষ্টের এখানেই শেষ নয়! ডিম ফুটে যখন বাচ্চা বের হয়, তখন বাচ্চার খাবারের দরকার হয়। কিন্তু বাবা নিজেই তো কয়েক সপ্তাহ না খেয়ে অভুক্ত! কিন্তু তারপরও পুরুষ পেঙ্গুইনকে কিছু না কিছু খাদ্য তার অন্ত্র থেকে বের করে এনে নবজাতককে খাওয়াতে হয়, যতদিন পর্যন্ত মা না আসে।সুতরাং, আমরা বেশ কিছু প্রাণীর কথা জানলাম এরা সকলেই নিশ্চয়ই ফাদার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার পাবার যোগ্য!