• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

হানিমুনে হত্যা!

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৮  

নববিবাহিত দম্পতিদের জন্য মধুচন্দ্রিমা বা হানিমুন জীবনের অন্যতম একটি মধুর মূহুর্ত।এই সময়টি নিয়ে অনেকের মনেই থাকে স্বপ্ন ও আশা। নতুন জীবনের শুরুটা কেমন হবে? এ যেন তার প্রথম ধাপ। তবে জানেন কী এমনই কয়েকজন আশাবাদী নবদম্পতিদের জীবন লীলা সাঙ্গ হয়েছে মধুচন্দ্রিমায়।কেউ করেছিলেন স্ত্রীকে হত্যা, তো কেউ স্বামীকে। চাইলেই কিন্তু তারা নিজেদের জীবনটি শুরু করতে পারতেন ভিন্নভাবে; তবে তা আর হলো না। তো, শুরু করা যাক?

শচীন মিশ্র

প্রথম বিয়ের পর তিনি স্ত্রীকে কিছুদিনের মধ্রে ডিভোর্স দেন।তার একবছর পরেই আবার বিয়ে করেন তিনি, স্ত্রীর নাম কনক। তবে নতুন বিয়ে করলেও ৩২ বছর বয়সী বারেলির এই মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিটিভ ভুলতে পারেননি প্রথম স্ত্রীকে। নিয়মিত তাদের মাঝে কথা হতো এবং মাঝেমধ্যে উপহারও দিতেন। যুক্তিসঙ্গত কারণেই সদ্যবিবাহিতা কনক স্বামীর এমন আচরণ মেনে নিতে পারেননি। দু’জনের মাঝে বেশ ঝগড়া চলতে লাগল।কনকের এই আচরণে বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিলেন শচীন। ঠিক করলেন মধুচন্দ্রিমায় স্ত্রীকে হত্যা করবেন। বিয়ের বয়স তখন মাত্র দু’মাস! দেহরাদুনের একটি হোটেলে স্ত্রীকে নিয়ে চেক ইন করার পর পাহাড়ের দিকে হাঁটতে বের হলেন শচীন। সেখানেও প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে কথা উঠল, শুরু হলো দু’জনের মাঝে বচসা।

 

1.হানিমুনে হত্যা!

হঠাৎই ক্ষুরধার একটি পাথর নিয়ে কনকের মাথায় আঘাত করে বসলেন শচীন।শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে দিলেন পাহাড়ের ঢাল থেকে। এরপর পুলিশের কাছে রিপোর্ট করলেন যে সাঁতার কাটতে গিয়ে ঢেউ তার স্ত্রীকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ডুবুরীদের পাঠিয়ে দিলো পুলিশ। দুই ঘণ্টা পর কোনো শরীর ছাড়াই ফিরে এলো তারা। চারপাশের এলাকার ভিডিওচিত্র ভালো করে লক্ষ্য করতে শুরু করল পুলিশ। কনক কিংবা তার স্বামীর কোনো টিকির খোঁজও নেই। অবশেষে শচীনের ওপর সন্দেহ হওয়ায় জেরা শুরু করল পুলিশ। জেরার মুখে পুলিশকে সে বলল যে হ্যাঁ, কনককে শচীনই হত্যা করেছে। ২০১১ সালের এই হত্যাকাণ্ডটি ভারতে বেশ আলোচিত হয়েছিল।

অরোরা মার্টিন

অরোরা মার্টিন এবং পিটার উয়ে শ্মিট ১৯৯১ সালে পাহাড়ে চড়তে গিয়ে পরস্পরের দেখা হিয়েছিলো। সেখান থেকেই মন দেয়া নেয়া শুরু, ভালোবাসার জন্ম। অবাক করার মতো বিষয়, পরের বছরই উরসুলা দেসচ্যাম্পস নাম্নী এক নারীকে বিয়ে করেন পিটার। রসায়ন খুব ভালো জমেনি তাদের, সেটা বলাই বাহুল্য। ইনস্যুরেন্সের একটি মামলায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন পিটার। তা জানতে পেরে উরসুলা পুলিশের দ্বারস্থ হন। পিটার একদিন তার স্ত্রীকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমার কথা বলে ঘুরতে বের হলে একটি খালের দিকে চলন্ত অবস্থায় গাড়িটি ছেড়ে দেন। খালে পড়ার আগেই লাফ দিয়ে বের হয়ে যান তিনি। উরসুলাও বের হবার চেষ্টা করেন কিন্তু তাকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেন পিটার। কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারলেন কিছু একটা গলদ আছে কিন্তু তদন্তে বাগড়া পড়ে। মাত্র তিন বছর সাজা কেটেই বেরিয়ে যান পিটার। এরপরের কাহিনী আরও জম্পেশ। ঠিক যেন একটি থ্রিলার গল্প। পুলিশ হঠাৎই জানতে পারে, উরসুলার নামে প্রায় পাঁচ লাখ ডলারের জীবন বিমা করেছিলেন পিটার। জেল থেকে বের হওয়ার পর পুরোটাই তুলে নেন তিনি।

 

2.হানিমুনে হত্যা!

এদিকে প্রেমিকা অরোরা মার্টিনের সঙ্গে বেলজিয়ান মার্ক ভ্যান বিয়ার্সের একটি ম্যাচমেকিং সাইটের মাধ্যমে পরিচয় হয়। সেখান থেকেই প্রেম, অতঃপর বিয়ে। যথারীতি হানিমুনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন তারা। গাড়ি চালাতে চালাতে মার্ক হঠাৎ লক্ষ্য করলেন, বেজবল ব্যাট হাতে নিয়ে তিনজন আগন্তুক অপেক্ষা করছে। বেচারার জানা ছিল না যে তাদের মধ্যে একজন ছিলেন পিটার উয়ে শ্মিট। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে হত্যা করা হয় মার্ককে। মৃত্যুর আগে একটাই মিনতি করেছিলেন তিনি, “আমার স্ত্রীর কোনো ক্ষতি কোরো না!” মার্টিনকে রেখে পালিয়ে গেল পিটার ও তার অনুচরেরা। পুলিশের কাছে অরোরা মার্টিন বললেন যে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি নিয়ে পড়ে যান মার্ক। কোনোমতে, তিনি বেঁচে ফিরেছেন। মার্কের বাবা মা এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। তাছাড়া, অরোরা কোনো ধরনের পোস্ট মর্টেম ছাড়াই চাইছিলেন মার্কের শরীরকে দাফন করে দিতে। এবার শুরু হলো পরিকল্পনা। মার্কের জীবন বিমার আট লাখ ডলার পকেটে পুরে পিটার শ্মিট, অর্থাৎ প্রেমিকের সঙ্গে ফ্লোরিডায় চলে এলো অরোরা মার্টিন। সেখানে লী মারবার্গার নামক এক বন্ধুর কাছে অরোরা স্বীকার করলেন যে তিনি ও পিটার মিলে এই পরিকল্পনা করেছিলেন। দেরি না করে মারবার্গার পুলিশকে ফোন করলেন। ১৫ বছর সাজা হলো অরোরা মার্টিনের, পিটারের ২০ বছর। জেল থেকে বেরিয়ে পুনরায় প্রেম চালিয়ে গিয়েছিলেন তারা।

বিদ্যালক্ষ্মী

ছোটবেলার বন্ধু আনন্দ আর বিদ্যালক্ষ্মীর প্রেম মেনে নেয়নি পরিবার। তাদের পছন্দ ছিল অনন্ত রমন, দূরসম্পর্কের আত্মীয়। গাঁটে বেশ পয়সা-কড়িও ছিল তার। পরিবারের ইচ্ছের বিরুদ্ধে পেরে উঠবে না বুঝতে পেরে বিয়েতে সায় জানাল বিদ্যা। আনন্দ পালিয়ে যেতে জোরাজুরি করলেও মায়ের শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে মানা করে দিলো সে। তার পরিবর্তে পরিকল্পনা করল অনন্তকে হত্যার।এজন্য বেছে নিলো হানিমুনের সময়টিকে।পরিকল্পনা সাজিয়ে প্রেমিক আনন্দকে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে দিলো বিদ্যা। কোথায়, কবে, কখন, কী হচ্ছে এবং হবে- সবকিছুই জানতে লাগল আনন্দ।নির্ধারিত দিনে বন্ধু অংবুরাজকে নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল আনন্দ। স্ত্রীকে নিয়ে একটি লেকে নৌবিহারে গেল অনন্ত। সেখান থেকে জমিনে নেমে রঙিন মূহুর্তের কিছু ছবি তুলতে শুরু করল স্ত্রীর সঙ্গে। পেছন থেকে চুপিসারে আনন্দ ও তার বন্ধু এসে ক্যামেরার স্ট্র্যাপ দিয়ে পেঁচিয়ে ধরল অনন্তর গলা।ধীরে ধীরে স্বামীকে নিস্তেজ হয়ে যেতে দেখল বিদ্যালক্ষ্মী।

 

3.হানিমুনে হত্যা!

হন্তারকদের নিজের গলার চেইন খুলে দিয়ে চিৎকার করে লোক জড়ো করতে শুরু করল সে। দু’জন লোক এসে তার নেকলেস চুরি করে স্বামীকে হত্যা করে গিয়েছে, এমনটাই জানালো চারপাশের জনতাকে। এবার ঘটল একটি বিস্ময়কর ঘটনা! অপরাধ করে যে পার পাওয়া যায় না, তার উৎকৃষ্ট নিদর্শন বোধহয় এটিই। বেছে বেছে অনন্তকে নিয়ে এমন একটি জায়গায় মধুচন্দ্রিমায় যাবার পরিকল্পনা সাজিয়েছিল বিদ্যা, সেখানকার মানুষ তাদের ভাষা বুঝত না ভালোভাবে। হত্যা করে আনন্দ ও তার বন্ধু একটি ট্যাক্সিতে করে হোটেলে ফিরতে ফিরতে নিজেদের হত্যাকাণ্ডের কথা বলতে শুরু করল। তারা মনে করেছিল ট্যাক্সিচালক তাদের ভাষা হয়ত বুঝতে পারছে না। বিধি বাম! দু’জনের কথা শুনে চোখ কপালে উঠল চালকের। পিছু নিয়ে হোটেল পর্যন্ত গেল সে। আনন্দ বন্ধুকে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করতেই বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলো চালক। এবার পুলিশকে ফোন করে সব জানাল। এরপরের ঘটনা সহজেই অনুমেয়। যাবজ্জীবন সাজা হয় বিদ্যালক্ষ্মী, প্রেমিক আনন্দ ও সহযোগী অংবুরাজের। ভারতে ঘটনাটি ঘটে ২০০৬ সালে।

ডেইলি বাংলাদেশ/জেএমএস