• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

নরমাল ডেলিভারির গুরুত্ব ও উপায়

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২৩  

বর্তমানে বেশিরভাগ ডেলিভারিই হচ্ছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। কিন্তু প্রতিটি শিশু ও মায়ের জন্য নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক প্রসব গুরুত্বপূর্ণ। তাই জেনে নিন- নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় সম্পর্কে-

নারীদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি হলো গর্ভধারন ও প্রসব। মা হওয়ার সৌভাগ্য জীবনকে আরো রঙিন করে তোলে। কিন্তু এ সময় সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় ডেলিভারি। প্রতিটা মা-ই চায় সুস্থ-সুন্দর স্বাভাবিক ডেলিভারি। 

বিশেষজ্ঞদের মতে নরমাল ডেলিভারি বা যৌনাঙ্গের মাধ্যমে প্রসব শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্য সচেতনতায় খুবই গুরুত্বপূর্ন। সিজারিয়ান পদ্ধতি ইনডাকশন জটিলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। স্বল্প কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেই স্বাভাবিক প্রসব হওয়া সম্ভব। তাই নরমাল ডেলিভারি হওয়ার গুরুত্ব ও নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার গুরুত্ব

মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য নরমাল ডেলিভারি হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নরমাল ডেলিভারির ফলে-

> মা ও শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি কম থাকে।

>মা তাড়াতাড়ি প্রসব বেদনা থেকে সেরে উঠতে পারেন।

> নরমাল ডেলিভারির সময় শিশুর শরীরে কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

> কোনো কাটাকাটির ঝামেলা থাকে না।

> নরমাল ডেলিভারিতে সক্ষম নারীরা সিজারিয়ানদের থেকে বেশি কর্মক্ষম হয়।

> নরমাল ডেলিভারিতে প্রসব বেদনা বেশি হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
এছাড়াও নরমাল ডেলিভারি হওয়া শিশুর শারীরিক সক্ষমতা সিজারিয়ান দের তূলনায় বেশি হয়।

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পদ্ধতি

কিছু সাধারন বিষয় নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- 

মানসিক চাপমুক্ত থাকা: বিভিন্ন কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে গর্ভধারনকারী মা অনেক সময়ই ভীত হয়ে ভেবে থাকেন সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারির কথা। এ নিয়ে বহু দুশ্চিন্তার শিকার হয়। পাশাপাশি বাড়তি যেকোনো দুশ্চিন্তা শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন মানসিক চাপ থেক মুক্ত থাকতে হবে এবং নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ক্ষেত্রে আত্নবিশ্বাসী হতে হবে।

ওজন: অতিরিক্ত ওজনের ফলে নরমাল ডেলিভারিতে সমস্যা হতে পারে। তাই একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে।

পানি পান: পানি শরীরের বিভিন্ন উপকারের পাশাপাশি রক্ত চলাচলকে ভালো রাখে। এতে করে শরীরে ফ্লুইড চলাচল ত্বরান্বিত হয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ৮-১২ গ্লাস পানি পান করা উপকারী। পানি প্রসবকালীন সময়ে স্বাভাবিক অবস্থা ধরে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সক্রিয় থাকুন: গর্ভাবস্থায় সক্রিয় থাকা আপনাকে প্রসবের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।  নিয়মিত ব্যায়াম সহনশীলতা, শক্তি এবং নমনীয়তা বাড়ায়, প্রসবের সময় জোড় প্রয়োগ করাও সহজ করে তোলে। হাঁটা, সাঁতার কাটা এবং প্রসবপূর্ব যোগব্যায়াম গর্ভাবস্থায় সক্রিয় থাকার সবচেয়ে চমৎকার উপায়।

প্রসবকালীন জ্ঞান অর্জন: প্রসবকালীন অবস্থা সম্পর্কে জানা নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায় হিসেবে অন্যতম। বিভিন্ন দাদি-নানি বা বড়দের অভিজ্ঞতা থেকে তথ্য জানতে পারেন। আপনাকে প্রসবের বিভিন্ন ধাপ, ব্যথা ব্যবস্থাপনার কৌশল এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম সম্পর্কে জানতে হবে। অন্যান্য গর্ভবতী মায়েদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বিস্তারিত জানতে হবে।

স্বাস্থ্যকর খাবার: গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া আপনাকে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে, যা প্রসবের সময় আপনার জটিলতার ঝুঁকি কমাতে পারে। ফল, সবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাদ্য আপনাকে এবং আপনার শিশুকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে।

শিথিলকরন কৌশল অনুশীলন: প্রসবকালীন অবস্থায় একটি চাপযুক্ত এবং তীব্র অভিজ্ঞতা হতে পারে। ব্যাথা শিথিল করনের জন্য গভীর শ্বাস, ধ্যান এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মতো শিথিলকরন কৌশলগুলি অনুশীলন করা আপনাকে ব্যথা এবং অস্বস্তি মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

বার্থিং বল ব্যবহার করুন: বার্থিং বল হলো একটি স্ফীত ব্যায়ামের বল যা প্রসবের সময় আরামদায়ক অবস্থান খুঁজে পেতে সাহায্য করে। বার্থিং বলের ওপর বসা আপনার পেলভিস খুলতে এবং শিশুর নিচে নামতে সহজ করতে পারে।

ইতিবাচক থাকুন: ইতিবাচক থাকা এবং আপনার জন্ম দেওয়ার ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস করা স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ন। ইতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে নিজেকে ঘিরে রাখুন, জন্মের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকুন।

উপরোক্ত নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়গুলো মেনে নরমাল ডেলিভারি সম্ভাবনা বাড়ানো যায়।

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার ব্যাথা কেমন?

স্বাভাবিকভাবে প্রসবকালীন অবস্থায় শিশু মাতৃগর্ভ থেকে জোড় করে বেড়িয়ে আসে। এ সময় তীব্র ব্যাথার সম্মুখীন হতে হয়। তবে প্রসব সম্পূর্ণ হলেই প্রসবকারীর খুব তাড়াতাড়ি ব্যাথা কমে যায় এবং সুস্থ্য হয়ে উঠে।

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সময়

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৩৭-৪২ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর স্বাভাবিক প্রসব হয়ে থাকে।

সিজার নাকি নরমাল ডেলিভারি কোনটি ভালো?

আমাদের অনেকেরই ভাবনা থাকে সিজার করানো হলে প্রসব বেদনা কম হয় এবং এটি নিরাপদ। কিন্তু মা ও সন্তানের স্বাস্থ্যরক্ষার অন্যতম উপায় হচ্ছে নরমাল ডেলিভারি। প্রসব বেদনা বেশি হলেও প্রসব পরবর্তী সময়ে সেই মা খুবই তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে উঠেন।

গুরুত্বপূর্ণ কথা

আপনার স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য উপরোক্ত নরমাল ডেলিভারি হওয়ার উপায়গুলো ছাড়াও অনেক উপায় রয়েছে। তবে মনে রাখবেন, প্রতিটি গর্ভাবস্থা এবং প্রসব ভিন্ন, এবং কোনো গ্যারান্টি নেই কীভাবে কি হয়। তবে এই উপায়গুলো অনুসরন করে, আপনি স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারেন।