• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ: ১০ বছরে উন্নয়নে এগিয়ে গেছে নীলফামারী

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৮  

উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা নীলফামারী। ছয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত সীমান্তবর্তী এই জেলাটি বর্তমানে অবকাঠামোগত, শিক্ষা, যাতায়াত ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষিখাতসহ সবক্ষেত্রে এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। 

বিগত ১০ বছরে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জেলার প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন বেশ ঈশ্বনীয়ও বটে। অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে উন্নয়নের মহাসড়কে নীলফামারী জেলাও এগিয়ে গেছে দুর্বার গতিতে।


জেলা তথ্য অফিসের সূত্র অনুযায়ী, গত ১০ বছরে (২০০৯-২০১৮) উক্ত জেলায় এলজিইডির অধীনে ৬৯০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মিত হয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন নদীতে নির্মাণ করা হয়েছে ১৯ টি সেতু এবং গণপূর্ত বিভাগের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়েছে ৩৪ টি নান্দনিক স্থাপনা।


এ সময় জেলায় শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তরের অধীনে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ৩৮৯ টি নতুন ভবন এবং বিভিন্ন বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৬১ টি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গত দশ বছরে উক্ত জেলায় প্রাথমিক ও
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে দুই কোটি ৫৮ লাখ চার হাজার ৪৩৯ টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বর্তমান সরকারের তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বারোপের প্রমাণসরূপ উক্ত জেলার এক হাজার
৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রদান করা হয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর।


স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নেও পিছিয়ে নেই নীলফামারী। গত ১০ বছরে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে উক্ত জেলায় ৩৫ টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। সুস্থ ও সবল জীবনযাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের অধীনে ৬০ কিলোমিটার পানির পাইপ ও ছয় হাজার ৩১২ টি বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির উৎস স্থাপন করা হয়। নীলফামারী বাসীর সবথেকে বড় স্বপ্নপূরণ সম্প্রতি উক্ত জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই উক্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শুধু নীলফামারীবাসী নয়, উত্তরাঞ্চলে আলোর দ্যূতি হয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় আলো ছড়াবে বলে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা।


অন্যদিকে, নীলফামারী তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের ফসল সীমান্তবর্তী এলাকা চিলাহাটী থেকে ঢাকাগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এটি বাংলাদেশের দ্রুত ও বিলাসবহুল ট্রেনগুলোর মধ্যে একটি। ট্রেনটি প্রথমে
নীলফামারী থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে চলাচল করত, পরে চিলাহাটি ও কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয় যার পিছনে সবথেকে বড় অবদান বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা। নীলফামারীস্থ চিলাহাটী থেকে ট্রেনটি চালু করার কথা থাকলেও পুরাতন

রেল পরিকাঠামোর জন্য ২০০৭ সালে ট্রেনটি প্রথমে চালু করা হয় নীলফামারী সদর স্টেশন থেকে। যার ফলে উত্তরাঞ্চলের মানুষ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলন শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার ২০১০ সালে সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটী রেল
পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহন করে। পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে ট্রেনটি চিলাহাটি থেকে চলাচল শুরু করে।


দেশের কৃষিক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নয়নে নীলফামারী জেলার গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে জেলার কৃষকদের বিনামূল্যে উন্নত বীজ, সারসহ ভতুর্কি প্রদানে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রেখেছে বর্তমান সরকারই অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্ব-স্ব উপজেলা ভিত্তিক কৃষি অফিসগুলো। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের রবি, ২০১৮-১৯ মৌসুমে গম, ভুট্টা.সরিষা, বিটি বেগুন ও পরবর্তী খরিপ-০১ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন মূগ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে নীলফামারী জেলায় ১৭,৪৪৫ জন ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ২ কোটি ৪৬ লাখ ১৬ হাজার ৫৭৮ টাকার বিনামূল্যে বীজ, সার বাবদ কৃষি প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে।


সবশেষ, জেলার ছয় উপজেলায় এ পর্যন্ত ৮০ ভাগ মানুষের বাড়িতে পৌঁছেছে বিদ্যুৎ সুবিধা। সবমিলিয়ে এই উন্নয়নের মাত্রাকে অস্বীকার করার মত নয়। নীলফামারী জেলার উল্লেখিত উন্নয়ন বাদেও প্রান্তিক পর্যায়ের উন্নয়নসমূহ হিসাব করা বড়ই কঠিন। তবে, সত্যকে সত্য বলার সহজ মানসিকতা থাকলেই নীলফামারীর উন্নয়নসমূহ অনায়সে উপলব্ধি করা যায়।