• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আখ চাষে লাভবান নীলফামারীর কৃষকরা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২৩  

 
নীলফামারীতে চলতি বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। একদিকে যেমন ভালো ফলন হয়েছে ঠিক তেমনি দ্বিগুণ দাম পেয়ে কৃষকরা এখন অনেক খুশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেলে ও দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে আখের ফলন পাওয়া যায়। আখ উঁচু ও নিচু জমিতেও চাষ করা যায়। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে আশানুরূপ ফলন ও বাজারে বেশ চাহিদা থাকায় দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে এই ফসলটি উৎপাদনে।

নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ১৭৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ১৫ একর জমিতে চাষ বেড়েছে। যারা আখ চাষ করেছেন, তাদের সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসল রোপণেরও পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে আখ চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।

সরেজমিনে সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের মেম্বারপাড়ার গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন আখ কাটতে। সারি সারি ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে মাঠ থেকে আখ নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখান থে‌কে আখ স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসে নিয়ে যান।

মেম্বারপাড়ার আখচাষি শ্রী মাধব চন্দ্র রায় বলেন, গত ৫ বছর ধরে নিয়মিত আখ চাষ করছি। এ বছর ২২ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। বাজারে অন্তত ৫০-৬০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করতে পারবো। এবার দাম বেশি হওয়ায় আখ চাষ বাড়ছে।

একই এলাকার কৃষক সুশীল চন্দ্র রায় বলেন, চলতি বছর ১৫ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আখ চাষের উপযোগী বেলে দোআঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি। প্রতি ৩০ শতাংশ জমিতে খরচ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আখ চাষে খরচ কম কিন্তু পরিশ্রম একটু বেশি করতে হয়।

কৃষক আবুল হাসান বলেন, আমি ১৫ শতাংশ জমিতে চাষ করছি। লাভ ভালো হওয়ায় আগামীতে বেশি করে আখ চাষ করবো। সময়মতো ওষুধ দিতে না পারলে পচন রোগ বাড়ে। তবে কম খরচে বেশি লাভ করা যায় এ ফসলটি থেকে। লাভ পেতে হলে অবশ্যই ঠিকমতো আখের পরিচর্যা করতে হবে।

জলঢাকার কৈমারী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, এ বছর ৩২ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছি। কীটনাশক ও শ্রমিকসহ ৩৫ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর অন্তত দেড় লাখ টাকার আখ বিক্রি করতে পারবো।

কিশোরগঞ্জের পুটিমারী কালিকাপুর এলাকার আখ চাষি ফরমান আলী বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় প্রথমবার অল্প পরিসরে আখের চারা রোপণ করি। আমার খেতে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে।

একই এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আখ চাষ করছি। এ বছরে কৃষি অফিসের কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী ৭ বিঘা জমিতে ঈশ্বরদী ও ফিলিপাইন জাতের আখের চারা রোপণ করি। আখের চারা রোপণের কয়েক মাস পর তা বিক্রির উপযোগী হয়। এছাড়া, আখ চাষের মধ্যেই সাথী ফসল হিসেবে আলু-৭ ও স্কোয়াশ চাষ করেছিলাম। বর্তমানে এ দুই ফসলে আমার খরচের সব টাকা উঠে এসেছে। বর্তমানে আখ আমার বোনাস ফসল। আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৭ বিঘা জমিতে ১০ লাখ টাকার আখ বিক্রি করার স্বপ্ন দেখছি।

ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ি ইউনিয়নের কৃষক মোবারক হোসেন  বলেন, আমাদের জমি থেকে ব্যবসায়ীরা আখ কিনে নিয়ে যান। আখ বেচতে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় না।

একই এলাকার আখ ব্যবসায়ী সামছুল আলম বলেন, গত ৫ বছর ধরে আখ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর এখান থেকে আখ কিনে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পাইকারি বিক্রি করি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার পিস আখ কিনে থাকি। এখানকার আখ খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। আখ বিক্রি করতে আমাদের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।

নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, নীলফামারীর মাটি আখ চাষের জন্য উপযোগী। এবার জেলায় ১৭৫ হেক্টর জমিতে ঈশ্বরদী ৪১, ৩৭, ১৬ ও ৮ জাতের আখ চাষ হয়েছে। রোগবালাই থেকে চাষিরা যেন ফসল বাঁচাতে পারে, সে জন্য যথাসময়ে সঠিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আখের সঙ্গে সরিষা, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, স্কোয়াশ ইত্যাদি চাষ করা যায়।