• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

‘ঠান্ডায় হাত-পাও কোঁকড়া নাগি যায়ছে’ 

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২৪  

নীলফামারীর ডিমলায় ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় স্থবির তিস্তা চরাঞ্চলের মানুষের জীবন। এ উপজেলার অন্যান্য এলাকার তুলনায় চরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ সব সময় একটু বেশিই থাকে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি তিস্তা নদীবেষ্টিত। চার দিন ধরে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চরের জনপদ। শীতের তীব্রতায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন চরের খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। 

জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশা ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। এসব ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে হাজারো পরিবার বেড়িবাঁধ ও জেগে ওঠা চরে অস্থায়ীভাবে ঘর তৈরি করে বসবাস করে। 

কেউবা অন্যের জমিতে ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। চরাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজ ও মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তীব্র শীতের কারণে তাদের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটেছে। এ ছাড়া দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তাঁরা চিকিৎসাসহ অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত। 

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উপজেলার বাইশপুকুর এলাকায় তিস্তা নদীতে মাছ না ধরেই বাড়ি ফিরছিলেন ধীরেন, রফিকুল, রজব আলীসহ কয়েকজন জেলের একটি দল।

তাঁদের সঙ্গে কথা হলে দলে থাকা রজব আলী বলেন, ‘সকাল ৮টায় নদীতে আসছি। কষ্ট করি এক ঘণ্টা মাছ ধরনো। কিন্তু ঠান্ডাত হাত-পাও কোঁকড়া নাগি যায়ছে আর কুয়াশাতে কিছু দেখাও যায় না। ওই জন্যে আইজ আর মাছ ধরা হইলনা। বাড়ি যাইছি। এমতোন ঠান্ডা থাকলে হামার জালোত মাছও পড়বে না, কষ্টে দিন কাটার নাইগবে।’ 

তিস্তা নদীঘেঁষা খগার চরের বাসিন্দা গৃহবধূ আকলিমা বেগম বলেন, ‘কষ্টের কথা কি আর কমু বাজান, ঠান্ডায় আমাগো জীবন যায় যায়। হারা রাইত নদী থাইকা হু হু কইরা ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢোহে। শরীর বরফ হওয়া যায়। ঠান্ডাতে হাত পাও অবশ নাগে। সকাল সইন্ধ্যা ঝরঝর কইরা কুয়াশা পড়তাছে।’ 

অটোচালক কান্দুরা মামুদ বলেন, ‘চার দিন থাকি ঠান্ডা খুব বেশি হইছৈ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাত আস্তা দেখা যায়ছে না। লাইট জ্বালে জানটা হাতোত নিয়া পাকার রাস্তা দিয়া গাড়ি চালাইছি। বিকাল ৪টার পর ঘন কুয়াশা শুরু হয়। সন্ধ্যা হইলে লাইট জ্বালেও কিছুই দেখা যায় না।’ 

খালিশা চাপানি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। এখানকার বাসিন্দারা শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা করছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন। 

ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত উপজেলার জন্য ৫ হাজার ৮০০টি কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪ হাজার ১০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট কম্বল বিতরণের কার্যক্রম চলমান।