• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

মিন্নির কারখানার আইল্যাশ যাচ্ছে চীনে

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

নারী সৌন্দর্যের অন্যতম অনুষঙ্গ চোখের পাপড়ি বা আইল্যাশ। আধুনিক নারীদের কাছে এর চাহিদা আকাশছোঁয়া। আর এই চোখের কৃত্রিম পাপড়ি তৈরি হচ্ছে উত্তরের বাণিজ্যিক শহর নীলফামারীর সৈয়দপুরে। নারী উদ্যোক্তা মিন্নি আকতার মিথুনের ‘মিন্নি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ এসব পাপড়ি তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করছে। এতে করে কারখানায় যেমন নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে তেমনি তৈরি হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা।

সৈয়দপুর শহরের উপকণ্ঠে ওয়াপদা মোড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নিচতলা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মিন্নি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’। সেখানে ২৫ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তৈরি করছেন চোখের কৃত্রিম পাপড়ি। প্রতিদিন কাজ করে শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এতে করে সংসারে অবদান রাখতে পারছেন নারীরা। এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারীদের বেশিরভাগই সদর উপজেলার সৈয়দপুর উপজেলা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার।

নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের নিমবাগান এলাকার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা একেএম মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে মিন্নি আকতার মিথুন। ভালোবেসে ২০২৩ সালের ১৮ জুলাই চীনের গুয়ানডং শহরের চিশুয়ী টাউনের লীন সিংকের ছেলে লীন ঝানরুইকে বিয়ে করেন মিন্নি। বিয়ের পর লীন ঝানরুই মুসলমান হয়ে নাম রাখেন লাবিব ইসলাম। উত্তরা ইপিজেডের টিএইচটি-স্পেস ইলেট্রিক্যাল কোম্পানিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন চীনা নাগরিক লীন ঝানরুই। একই কোম্পানিতে চাকরি করতেন মিন্নি। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সৈয়দপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এক সহকর্মীর বিয়ের অনুষ্ঠানে লীন ঝানরুই ও মিন্নির পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক, তারপর বিয়ে করেন তারা। সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রী ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা বাবা মিলে গড়ে তোলেন এই পাপড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান।

মিন্নির কারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা বলছেন, এখানে কাজ করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারছেন, পাশাপাশি সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে চান তারা। কারখানার শ্রমিক চাঁদনী বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাচ্চা বাসায় রেখে কাজ করতে এসেছি। কাজ আলহামদুলিল্লাহ শিখছি ভালোই, ইনশাআল্লাহ ভালো করতে পারব। আমার স্বামী রিকশা চালায়, তিনটা বাচ্চা আছে, সংসারে অভাব অনটন। এজন্য এ কাজ করার জন্য আসছি। আশা করি এ কাজ করলে আমার সংসারে অনেক মঙ্গল হবে।

শারমিন আক্তার নামে এক শ্রমিক বলেন, আমি একদিনের মধ্যে কাজ শিখে ফেলছি। ২০ দিন হচ্ছে এখানে আসার। মোটামুটি কাজ করতে পারছি। আশা করি নিজের ওপর কনফিডেন্স আছে অবশ্যই কাজ করতে পারব।

ময়না রানী বলেন, আমার এখানে কাজ করে খুব ভালো লাগতেছে। কাজ করা খুব সোজা। আর কাজ করলে কাজে ভুল ভ্রান্তি থাকবেই। যেকোনো ক্ষেত্রে সেটা হোক। কিন্তু মিন্নি আপা তিনি আমাদেরকে সাহায্য করেন। আমরা এখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারব।

মিন্নি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজার মিন্নি আকতার মিথুন বলেন, আমরা চাচ্ছি এই আইল্যাশ প্রস্তুতের মাধ্যমে আমরা সৈয়দপুরের বেকার নিরসন করব। সেই কারণে ছোট পরিসরে কোম্পানি চালু করেছি। যেখানে ৩৫ জনের মতো কাজ করছে। আমরা চাই এই ক্ষুদ্র পরিসরটা আগামীতে বৃহৎ আকার ধারণ করবে। নতুন নতুন শ্রমিককে আমরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ গড়ে তুলব। এ মাসে আমাদের পাঁচ হাজার পিস প্রোডাকশন হয়েছে যেটা নতুন অবস্থায় কেনো অংশে কম না। আশা করছি আগামী মাসে আমরা ৫০ হাজার পিস উৎপাদন করতে পারব এবং আমাদের প্রোডাক্ট সরাসরি চীনে যাবে। সেখান থেকে এটি প্রস্তুত হয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে।

প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা চীনা নাগরিক লীন ঝানরুই বলেন, আমরা আপাতত জায়গাটা ভাড়া নিয়ে প্রোডাকশন চালু করেছি। আমরা চোখের পাপড়ি বানাই। আমাদের কাঁচামাল পুরোটাই চীন থেকে আসে। আমরা নতুন করে কেবল শুরু করেছি আর কিছু লোকবল নিয়ে তাদেরকে শিখাচ্ছি। আপাতত যে ফিনিশ প্রোডাক্টটা বের হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ এখনও প্রস্তুত হয়নি। এই আংশিক প্রস্তুতটাই চীনে পাঠানো হচ্ছে। আমাদের আগামীতে পরিকল্পনা রয়েছে, এখানে ৩০০ জন শ্রমিক নিয়ে কাজ করব।

কারখানাটির চেয়ারম্যান একেএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোম্পানির পথচলা বলতে গেলে একমাস। আমার এখানে ২০০ শ্রমিক কাজ করানো টার্গেট ছিল। কাজটা যেহেতু শিল্পকর্মের মতো কাজটাকে বুঝে শুনে করতে হয়। যে কারণে সবাই চট করে সেটা করতে পারছে না। শেখানোর পর কাজ করানো লাগছে। তারপরেও সব মিলে ৫০ জনের মতো কাজ করছে।