• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

১০ শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠানে ৯ জন শিক্ষক

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২৪  

নীলফামারী সদরের লক্ষীচাপ ইউনিয়নের কাছারী লক্ষীচাপ ডি.ডি এস দাখিল মাদরাসায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী থাকার দাবি করা হয়। কিন্তু সরেজমিনে পাওয়া যায় মাত্র ১০ জন। এতসংখ্যক শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন নয়জন। যদিও উপস্থিতি পাওয়া যায় সাতজনের। স্থানীয়দের দাবি, ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে বছরের পর বছর মাদরাসার সুপার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি এ খবর জানার পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাদরাসা পরিদর্শনে গেলে তিনিও এর সত্যতা পান। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ১৯৭৩ সালে এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী নিজস্ব জমি ও অর্থায়নে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮০ সালে ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে মাদরাসটি এমপিওভুক্ত হয়। এরপর একজন শিক্ষক অবসরে যান। বর্তমানে ঐ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯ জন শিক্ষক ও একজন কর্মচারী রয়েছেন।

দেখা যায়, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রী না থাকলেও প্রধান শিক্ষক বই তুলেছেন প্রায় ১০০ জনের। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঐ বই বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০ জন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়। অনেক শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয় না। ফলে তাতে ধুলাবালির আস্তরণ পড়ে গেছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরাও কর্মচারীদের নিয়ে স্কুলমাঠে বসে খোশগল্পে মেতেছেন। মাদরাসায় শিক্ষার্থী না থাকলেও হাজিরা খাতায় সন্তোষজনক উপস্থিতি লিখে রাখা হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, লেখাপড়া ঠিক মতো না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। চোখের সামনে প্রতিষ্ঠানটির এমন অবস্থা দেখা যায় না। মাদরাসার শিক্ষকরা এসে চেয়ার নিয়ে মাঠে বসে পেপার পড়ে ও গল্প করে সময় পার করেন। মাঝে মধ্যে দুই চারজন শিক্ষার্থী স্কুলে এলেও তাদের ঠিকমতো ক্লাস নেয়া হয় না। শিক্ষার্থীরা দুই একটা ক্লাস করে সময় কাটিয়ে বাড়ি চলে যায়।

এলাকার সাকিব হাসান, ফরিদ, মশিউরসহ অনেকে বলেন, মাদরাসাটি আগে ভালো চলত। বর্তমান সুপারের কারণে মাদারাসাটির অবস্থা খারাপ। শিক্ষকরা মাদরাসায় এসে দু‌-একটি ক্লাস করেই দায় সারেন। বসে বসে খোশ গল্পে মাতেন। দুপুর ১টা বাজলে মাদরাসা ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যান। অথচ এ বিষয়ে কখনো কোনো শিক্ষকের মাঝে উদ্বেগ দেখা যায়নি। মূলত প্রধান শিক্ষকের অবহেলার কারণেই আজ মাদরাসাটি ধ্বংসের পথে।

মাদরাসার পাশের বাসিন্দা লাকু আহম্মেদ বলেন, শিক্ষকদের অবহেলায় মাদরাসাটি আজ বন্ধের পথে। এজন্য আমি মাদরাসাটির প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকেই দায়ী করব। এছাড়া মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা কীভাবে বেতন ভাতা-উত্তোলন করেন- সেটা কি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেখেন না?  

মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। কেউ কখনোই আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেননি। বিষয়টি আমি জানলাম এবং দেখব।

এ বিষয়ে লক্ষীচাপ ডি.ডি এস দাখিল মাদরাসা প্রধান শিক্ষক (সুপার) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বর্তমানে দাখিল পরীক্ষা চলার কারণে ছাত্রছাত্রী কম আসছে। তবে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম। এটি উন্নত করার চেষ্টা চলছে। আর বই বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বই মাদরাসায় আছে।’ কিন্তু দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি।

এদিকে, এ খবর জানার পর গত ৬ মার্চ মাদরাসা পরিদর্শনে যান নীলফামারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আইবুল ইসলাম। তিনি মাদরাসায় গিয়ে মাত্র ৪ জন শিক্ষার্থীকে পান। তখন মাদরাসার সুপার মো. মাহমুদুল হাসান সটকে পড়েন। 

এ বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আইবুল ইসলাম বলেন, ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউএনও স্যারকে বলা হয়েছে। 

এ বিষয়ে নীলফামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মেহেদী হাসান বলেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। যদি এমন হয় তাহলে ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।