• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

লালিত স্বপ্ন ঘরে তুলছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের কৃষক

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০১৮  

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের আলু চাষিরা আগাম আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুক্রবার  সকালে উপজেলার বাহাগিলী ও বড়ভিটা ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, আগাম আলু উত্তোলনে কৃষকেরা জমিতে কাজ করছে। প্রতি আলু চাষিদের জমিতে কৃষি কাজ করা লোকদের পর্যাপ্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এতে গ্রামের অসহায় পরিবার গুলো যেমন কাজ করে পরিবারে সুখ আনতে পারছে ঠিক সময়ে কৃষি কাজের লোক পেয়ে চাষিরাও অধিক পরিমানে মুনাফা অর্জন করছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৬হাজার ১শ ৫০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে ৪হাজার ২শ ৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা দেখা যাচ্ছে। এ বছর আলু চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষি পন্যের মূল্য স্বাভাবিক থাকায় আলু চাষিরা লাভবান হচ্ছে বলে জানান কয়েকজন আলু চাষি।

উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের আলু চাষি দুলাল হোসেন এ বছর সারের দাম স্বাভাবিক থাকায় এবং আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় আলু বাম্পার ফলন হয়েছে। আলু লাগানোর এক মাস পরে আলুর গাছে মাঝে মাঝে মড়ক দেখা দিলে উপজেলা কৃষি অফিসার জমিতে এসে মড়ক গাছ দেখে পরামর্শ দিলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করি। ফলে গাছের মড়ক রোধ করা সম্ভব হয়েছে এবং আলুর ফলনও ভাল হয়েছে। আমার আলুর বর্তমান বয়স ৫৬ দিনে তোলা হচ্ছে।

আগাম আলু তোলার নিয়ম ৬০ থেকে ৬২ দিনের মধ্যে থাকে। কিন্তু বাজারে নতুন আলুর ব্যাপক চাহিদা ও থাকায় এক সপ্তাহ বাকী থাকতে আলু উত্তোলণ করা হচ্ছে। ফলে বর্তমানে আলু জমিতেই খরচ ছাড়া পাইকারী ভাবে ৮০ কেজি আলুর বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২হাজার ৪শ টাকায়। কয়েকদিন আগে এক বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭শ টাকায়। আমি এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি আশা করি খরচের চেয়ে দেড় লক্ষ টাকা বেশী লাভ করতে পারবো।

একই ভাবে বড়ভিটা ইউনিয়নের আলু চাষি তাইজুল ইসলাম বলেন,আগাম আলুতে একটু লাভ বেশী হওয়ায় প্রতিবছর আগাম ধান কেটে আলু লাগিয়েছি। এ বছর বৃষ্টি ও ঘনকুয়াশা না থাকায় আলুর ভাল ফলন হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন,আমার আলুতে মড়ক লেগেছিল কোন অফিসার আমাকে পরামর্শ দেন নাই। কৃষি অফিসে গিয়েও কোন অফিসারের দেখা না পেয়ে নিজেই চেষ্টা করে ওষুধ দিয়েছি। কৃষি অফিসের পরামর্শ পেলে হয়তো আরও ভাল ফলন হত। তিনি বলেন আমার প্রতি বিঘা ১৮ থেকে ২০বস্তা আলু হয়েছে। আমার নিজের জমি ৯বিঘা ও বর্গা নিয়েছি ৫বিঘা জমি। আশা করি খরচ বাদে লক্ষাধিক টাকা লাভ করতে পারবো।

আলুর জমিতে কাজ করা মহিলা কৃষক জীবন নাহার বলেন, হামার এক মাস আগোত খুব অভাব আছলো এখন পুত্তিদিন কাম করি ২শ করি টাকা পাই। জমির মালিকের ঘর হামাক আলু দেয় সেই আলুর তরকাই খাই এখন হামার দিন ভাল যায়ছে।

একই ভাবে বড়ভিটা কৃষক মনুফা বলেন, হামার তিনটা বাচ্ছা ওমরা সবায় স্কুল পড়ে। হামরা দুই মানুষে আলুর জমিত কাম করি পুত্তিদিন ৫শ করে টাকা পাই তাতে হামার দিনে ভাল চলে। হামরা দুই মাস থাকি আলুর জমিত কাম করি হামার দিন ভালোয় যায়ছে। মানসের জমিত কাম করি একনা গরুর বাছুর নিছি সেকনা পুষি টাকা বারামো।

কিশোরগঞ্জ ট্রাক ট্যাংঙ্কলড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য নজরুল ইসলাম (ভাংচুর) ও ইলিয়াছ আলী জানান, কিশোরগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি করে ট্রাক আলু নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছে। গত কয়েক বছর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উত্তরাঞ্চলের কৃষক আলুতে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। আলু চাষ করে ঢাকায় বিক্রি করতে না পেরে অনেকেই স্থানীয় বাজারে আলু বিক্রি করে লোকসান গুনতে হয়েছে। আবার কেউ কেউ কোনমতে আলু ঢাকায় নিয়ে গেলেও ঢাকায় আড়ত ভাড়া ও ট্রাক ভাড়া দিতে গিয়ে লাভের চেয়ে লোকসান বেশী হওয়ায় আলু ট্রাকে রেখে ঢাকা থেকে পালিয়ে এসেছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের আলু বিখ্যাত কিশোরগঞ্জ উপজেলার মানুষ আলু চাষের পরিবর্তে অন্যান্য ফসল চাষাবাদে বেশী ঝোঁক দিয়েছে। গত বছর আলুর চাষের মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার ফলে আলুতে বেশী একটা লাভবান হতে পারেনি আলু চাষিরা। তবে এ বছর ভাল আবহাওয়া ও আলুর বাজার ভাল থাকায় কৃষকরা আলু চাষ করা আবার শুরু করবে বলে জানান কৃষি বিভাগ।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, এ বছর আলুর জন্য আবহাওয়া ভাল থাকায় আলুতে ভাল লাভবান হচ্ছে উপজেলার আলু চাষিরা। কিশোরগঞ্জের আগাম আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে রংপুরসহ ঢাকা শহরে। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জে বীজ আলু ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত আলু এখন দেশ ছেড়ে দেশের বাহিরেও যথেষ্ট চাহিদা অর্জন করেছে।