• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

জটিল সমস্যায় ভুগছে গঙ্গাচড়ার সরলতা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

ছোট্ট শিশু সরলতা। বয়স সবেমাত্র চৌদ্দ মাস। জন্মের পর থেকেই ছিল মুখভর্তি হাসি। সরলতার মুখের দিকের চেয়ে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলত মা-বাবা। আদর স্নেহে বড় হতে থাকা সরলতা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সরল জীবন হয়ে উঠে কঠিন। এখন সরলতার মুখে হাসি নেই। সারাক্ষণ শুধুই যন্ত্রণার কান্না। অবুঝ সরলতা এখন বমি, জ্বর, সর্দি, কাশি আর শ্বাসকষ্টে ভুগছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশু সরলতা হৃদরোগে আক্রান্ত। হার্টে দুটি ফুটো পরিলক্ষিত হয়েছে। এ খবরে চোখের সামনে অন্ধকার দেখছেন অসহায় পরিবারটি। এখন বারবার চিকিৎসকের সরণাপন্ন হওয়া নিরুপায় মা-বাবা হাঁপিয়ে উঠেছেন। সরলতার হার্টে অস্ত্রোপচারসহ চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামই শিশু সরলতার মা-বাবার ঠিকানা। তাদের নিজস্ব কোনো জমিজমা না থাকায় তিস্তা নদীরপাড়ে একটি কুড়েঘরে বসবাস। দিনমজুর বাবা শ্যামল রায় আর মা গৃহিনী আশা রানীর একমাত্র কন্যাশিশু সরলতা।

এখন সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়ে চিন্তিত অসহায় এ পরিবারটি। নুন (লবণ) আনতে পান্তা (ভাত) ফুরানোর মতো অবস্থা তাদের। অভাব অনটনের সংসার চালাতে পোড় খাওয়া পরিবারটি এখন সরলতার চিকিৎসার জন্য সমাজের সহযোগিতার দিকে চেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।  

সন্তানের চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য না থাকার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন শ্যামল রায়। চোখের এককোণে জমা পানি মুছতে মুছতে শ্যামল রায় বলেন, মুই কামলা দেওয়া (দিনমজুর) মানুষ। একদিন কামোত না গেইলে (কাজ না করলে) বাড়িত চুলা জ্বলে না (রান্না হয় না)। মোর তো জায়গা-জমিও নাই। ছাওয়ার (বাচ্চার) অপারেশন করার জন্য এতো টাকা কোন্টে (কোথায়) পামো (পাবো)।
দ্যাশের বড়লোক, দয়ালু মানুষ যদি মোর ছাওয়ার জন্যে সাহায্য করে, তাহলে সরলতা বাঁচপে। আল্লাহর রহম আর বিত্তবান মানুষের সহযোগিতা খুব বেশি প্রয়োজন।

সরলতার মা আশা রানী বলেন, জন্মের পর ভালো ছিল। কয়েক মাস না যেতেই হঠাৎ জ্বর, সর্দি, বমি শুরু হয়। দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। এখন প্রতিদিনই বমি, জ্বর, সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্ট লেগে আছে। শহরের বড় বড় ডাক্তাররা সরলতার হার্টে দুটি ছিদ্র দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে। এখন চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমাদের তো সেই টাকাও নেই, সামর্থ্যও নেই।

দরিদ্র এই পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছে একই গ্রামের কলেজপড়ুয়া মোহসিন ও ইব্রাহিম। এই দুই শিক্ষার্থী বলেন, তারা একই গ্রামের প্রতিবেশী। দিনমজুর শ্যামল রায়ের কন্যাশিশু সরলতা জন্মের পর থেকে অসুস্থ। বহুদিন ধরে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু হার্টের অপারেশন করার মতো অর্থ-সামর্থ্য না থাকায় শিশুটিকে নিয়ে চিন্তিত পুরো পরিবার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (কার্ডিওলোজি) ডা. হরিপদ সরকার এবং নবজাতক ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামছুজ্জামান প্রধানের তত্ত্বাবধানে শিশু সরলতার চিকিৎসা চলছে। সময়মতো অপারেশন করাতে না পারলে শিশু সরলতার জীবন আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ বলেন, শিশুটির বাবার কাছ থেকে অসুস্থতার কথা আমি শুনেছি। একবার নিজে গিয়ে দেখেও এসেছি। ওই শিশুর অপারেশনের জন্য অনেক টাকা লাগবে। আমি সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগি করার চেষ্টা করব।

শিশু সরলতাকে বাঁচাতে সমাজের দানশীলসহ বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন দিনমজুর বাবা শ্যামল রায় ও মা আশা রানী। সহযোগিতা পাঠানোর ঠিকানা- সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, গঙ্গাচড়া শাখা রংপুর, হিসাব নং- ৫০০৪৭০১০৩৬৫৭৯ অথবা বিকাশ (শ্যামল রায়) নম্বর- ০১৩০৯-৩৮৮২৭০।
কে/