• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রিমান্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন মামুনুল হক

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২১  

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক রিমান্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন। এখন এসব তথ্যের যাচাই-বাছাই চলছে জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. হারুন অর রশীদ বলেছেন, পাকিস্তানের একটি রাজনৈতিক দলকে মডেল হিসেবে নিয়েছিলেন মামুনুল হক। একই সঙ্গে পাকিস্তানের একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল তার। ভগ্নিপতি নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে সেই জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন তিনি। আর এই নেয়ামতের সঙ্গে ২০০৫ সালের দিকে মামুনুল টানা ৪৫ দিন পাকিস্তানে অবস্থান করেন। পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ নিয়ে মামুনুল হক ১৫ বছর ধরে দেশে নাশকতামূলক বিভিন্ন ঘটনা ঘটান।

রবিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিসি হারুন অর রশীদ।

পুলিশ বলছে, মামুনুল হকের ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের চিত্র দেখা গেছে। ভারতের বাবরি মসজিদ, কওমি মাদরাসার ছাত্রদের শিক্ষা ও হেফাজতে ইসলামের নাম করে মামুনুল মধ্যপ্রাচ্য থেকে কোটি কোটি টাকা এনেছেন। সেসব টাকা বিভিন্ন উগ্রবাদী নাশকতামূলক কাজে ব্যয় করা হচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় হামলা ও চুরির মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে মামুনুলকে আজ সোমবার (২৬ এপ্রিল) অন্য মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত বৃহস্পতিবারই ১০ দিন রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। আগামীকাল মঙ্গলবার এই রিমান্ড আবেদনের শুনানি হতে পারে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররমের সামনে মোটরসাইকেল পোড়ানোর অভিযোগে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে আবাব আহমেদ রজবী ও রুমান শেখ নামে দুই ব্যক্তি পল্টন থানায় মামলা দুটি করেন বলে জানান ওসি আবু বকর সিদ্দিক।

অন্যদিকে ২০১৩ সালে নাশকতার মামলায় গতকাল হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদেরের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য 'শিশু বক্তা' রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গতকাল গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকার তেজগাঁও থানায় আনা হয়েছে।

তেজগাঁও থানার এসআই শোয়াইব উদ্দিন জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় রফিকুলকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছেন তাঁরা। গতকাল পর্যন্ত ঢাকায় গ্রেপ্তারকৃত ১৯ নেতার মধ্যে ১৫ জনই রিমান্ডে ছিলেন। কয়েকজন নেতাকে পুনরায় রিমান্ড আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে।

আলোচনা হলেও নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হলেও নৃশংস এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। যারা অগ্নিসংযোগ করেছে, যারা ভাঙচুর করেছে, যাদের জন্য নিরীহ কতগুলো প্রাণ চলে গেছে তাদের শাস্তি ভোগ করতেই হবে। তদন্তের মাধ্যমে আমরা সঠিক প্রমাণ পেয়েছি, ভিডিও ফুটেজে যাদের আমরা দেখেছি, তাদেরকে আইনের মুখোমুখি করছি'।

গতকাল নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিম হচ্ছেন মামুনুল হকের প্রথম শ্বশুরের আপন ভায়রা ভাই। পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী, গ্রেনেড হামলার আসামি এবং জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে সরকার উত্খাতের ছক এঁকেছিলেন মামুনুল।

ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, মামুনুলের ভগ্নিপতি মুফতি নেয়ামত উল্লাহ পাকিস্তানে ১৫-২০ বছর একটি মাদরাসায় ছিলেন। পাকিস্তান থেকে ফিরে নেয়ামত উল্লাহ মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন নেয়ামত উল্লার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর নেয়ামত উল্লাহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। তাজউদ্দিনের সঙ্গেও মামুনুলের যোগাযোগ আছে।

হারুন অর রশিদ বলেন, পাকিস্তানের একটি ধর্মীয় সংগঠনকে মডেল হিসেবে নিয়ে পাকিস্তানে দীর্ঘদিন তাঁরা অবস্থান করেন। ওই সংগঠনের মডেলে মামুনুল বাংলাদেশে মওদুদি, সালাফি, হানাফি, কওমি, দেওবন্দি, জামায়াতসহ সব মতাদর্শের মানুষকে একত্র করার চেষ্টা শুরু করেন। মামুনুলের আপন ভায়রা কামরুল ইসলাম আনসারী জামায়াতের বড় নেতা। তাঁর বাড়ি মাদারীপুরের টেকেরহাটে। আনসারীর মাধ্যমে মামুনুল জামায়াতের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এমনকি তিনি জামায়াতকে তাঁর বলয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

ডিসি হারুন অর রশিদ বলেন, মামুনুলের একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আসত। এর মধ্যে কাতার, দুবাই, পাকিস্তানও রয়েছে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও টাকা আসত। বাবরি মসজিদের নাম ব্যবহার করলে খুব সহজেই সহানুভূতি পাওয়া যায়। তা ছাড়া ভারতবিদ্বেষী মানুষের কাছ থেকে সহায়তা পেতে তিনি এই কৌশল নেন। এভাবেই তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন।

পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, মামুনুলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৪০ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। মাদরাসাসহ তাঁর ব্যাপারে আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে।