• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সবার ঢাকা অ্যাপে এক বছরে ২৫ হাজার অভিযোগ, সমাধান ৯৭ শতাংশ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর সড়কের ফুটপাতে গৃহস্থালি বর্জ্যের স্তূপ জমেছিল। দুর্গন্ধে নাক চেপে চলাচল করতে হতো পথচারীদের। সন্ধ্যার পর ওই সড়কের দুটি সড়কবাতিও জ্বলতো না। গত ৮ ডিসেম্বর মোবাইল ফোনে ছবি তুলে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে অভিযোগ জানান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন। ১২ ঘণ্টা পরই ওই সমস্যার সমাধান করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

অন্যদিকে গত ১৫ জানুয়ারি খিলক্ষেতের নামাপাড়ার একটি ছোট্ট জলাশয়ে মশার প্রজননস্থলের ছবি তুলে সবার ঢাকায় অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা ফাহিমা আক্তার। এই জলাশয়ের পাশেই তার বাসা। তার অভিযোগের দুদিন পর জলাশয়টি পরিষ্কার করে সেখানে কীটনাশক ছিটায় ডিএনসিসি।

এভাবেই সবার ঢাকা অ্যাপের (সিটিজেন এনগেজমেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম) মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার সমাধানে কাজ করছে ডিএনসিসি। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারিতে অ্যাপটি উদ্বোধন করে সংস্থাটি। এখন নাগরিক সেবাপ্রাপ্তি ও মেয়রের কাছে সরাসরি অভিযোগ জানানোর সুযোগ করে দিয়েছে এই ডিজিটাল মাধ্যম। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। তবে অভিযোগও আছে কিছু।

এমন জনসেবামূলক কাজে অবদান রাখায় গত ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার-২০২১ পেয়েছে ‘সবার ঢাকা’। এখন অ্যাপটি পরিচালনা করছে ডিএনসিসির আইটি বিভাগ। এ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত স্মার্টফোনের প্লে স্টোর থেকে প্রায় ৩০ হাজার বার সবার ঢাকা অ্যাপ ডাউনলোড ও রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৪৩৭টি সমস্যার কথা জানিয়েছেন নাগরিকরা। সমাধান হয়েছে ২৪ হাজার ৭২৫টি। সমাধানের হার ৯৭ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া ৭১২টি সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে।

ডিএনসিসির সিস্টেম অ্যানালিস্ট মো. তুহিনুল ইসলাম বলেন, নাগরিকদের সঙ্গে ডিএনসিসির সংযোগ স্থাপন করতেই এ অ্যাপটি চালু করেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এখন কেউ অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধানের চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তিনি জানান, গত এক বছরের বেশি সময়ে সড়কের সমস্যায় তিন হাজার ৩২৯টি, মশকে ১৩ হাজার ১৯১, আবর্জনায় দুই হাজার ৯৬৬, সড়কবাতিতে তিন হাজার ৬৫০, পাবলিক টয়লেটে ৪১, নর্দমায় ৬২৫, অবৈধ স্থাপনায় এক হাজার ২২৭ ও জলাবদ্ধতায় ৪০৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রতিদিনই ১০-১৫টি করে অভিযোগ আসছে। সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে সেগুলো সমাধান করা হচ্ছে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর আগারগাঁও ৬০ ফুট সড়কে বালুবাহী ট্রাকের চাপে ম্যানহোলের একটি ঢাকনা ভেঙে যায়। ঝুঁকি এড়াতে ওইদিনই ম্যানহোলে বাঁশের খুঁটি পুঁতে লাল কাপড় টাঙিয়ে দেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। কিন্তু এক সপ্তাহ পরও সেখানে নতুন স্লাব বসেনি। পরে একটি ছবি তুলে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে অভিযোগ করেন কলেজছাত্র রাকিব হাসান। পরদিনই ম্যানহোলে ঢাকনা লাগিয়ে দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

যোগাযোগ করা হলে কলেজছাত্র রাকিব হাসান বলেন, ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপে অভিযোগ করলে সমাধান মেলে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন একটি বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম। সে অনুযায়ী সমস্যাটির ছবি তুলে অভিযোগ জানাই। পরদিন দেখি তারা সমাধান করে দিয়েছে।

ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনের সড়ক ও ফুটপাত এক যুগের বেশি সময় ধরে হকারদের দখলে। সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ পথে পথচারী এবং যানবাহন যাতায়াতে সমস্যা হয়। গত বছরের ২৮ জুলাই হকারদের উচ্ছেদের জন্য সবার ঢাকা অ্যাপে অভিযোগ করেন ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা আবু তাহের। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার এ সমস্যার সমাধান হয়নি। যদিও সবার ঢাকা অ্যাপে এ সমস্যাটি সমাধান করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে আবু তাহের বলেন, ওই বিষয় নিয়ে অভিযোগ করার সপ্তাহখানেক পর উচ্ছেদ অভিযান চালায় ডিএনসিসি। কিন্তু পরদিনই আবার সড়ক ও ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যায়। এখন সেখানে আগের চেয়ে হকারের সংখ্যা বেড়েছে।

সমস্যা সমাধান না করে ওই অ্যাপে সমাধান হয়েছে উল্লেখ করার অভিযোগ রয়েছে। গত ৪ অক্টোবর এ বিষয়ে ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক স্বাক্ষরিত একটি সতর্কীকরণ পত্র জারি করা হয়েছে। এই পত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, ডিএনসিসির প্রধান কার্যালয়সহ মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‌‘সবার ঢাকা’ অ্যাপের সমস্যা সমাধান না করেই সমাধান হয়েছে মর্মে সিস্টেম আপলোড দিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সবার ঢাকা নাগরিক সমস্যা সমাধানে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। প্রতিদিন যে অভিযোগ আসে, সেগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান করা হচ্ছে। যেগুলো তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব নয়, একটু সময় নিয়ে তা ক্রমান্বয়ে সমাধান করা হচ্ছে। তবে কোনো সমস্যাই স্থায়ী হবে না। নাগরিকদের সেবা দিতে যা যা করা দরকার, তা করবে ডিএনসিসি।

নাগরিকদের অসচেতনায় নগরে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয় জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, এখনো নগরের অনেক মানুষ অসচেতন। তারা যত্রতত্র ময়লা ফেলছেন। নির্মাণাধীন বাড়ির মালামাল সড়ক ও ফুটপাতে রাখছেন। এমন সমস্যা সমাধানে জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি যারা সমস্যা সৃষ্টি করছেন, তাদের জেল-জরিমানাও করা হচ্ছে। সব শেষ গতকাল (৭ ফেব্রুয়ারি) উত্তরা ও কাফরুলে ফুটপাত দখল করে নির্মাণসামগ্রী রাখায় ১০টি মামলায় ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এখন সবার সহযোগিতায় ঢাকাকে বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

মোবাইল ফোনে সবার ঢাকা ইনস্টল

যে কোনো অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযুক্ত করে ফোনের প্লে স্টোরে ‘Shobar Dhaka- Citizen portal for DNCC’ নামে সার্চ করলে অ্যাপটি পাওয়া যাবে। ১১ মেগাবাইটের অ্যাপটি ডাউনলোডের পর ভাষা নির্বাচন করে মোবাইল ফোনের নম্বর ভেরিফিকেশন করে নিতে হবে। তারপর ব্যবহারকারী তার নাম ও লোকেশন অ্যাকসেস দিয়ে অ্যাপটির মূল ইন্টারফেসে প্রবেশ করবেন।

যেভাবে কাজ করবে অ্যাপটি

অ্যাপটিতে রাস্তা, মশা, আবর্জনা, সড়কবাতি, পাবলিক টয়লেট, নর্দমা, অবৈধ স্থাপনা নামে আলাদা বিভাগ থাকবে। ব্যবহারকারী যে কোনো বিভাগ নির্বাচন করে সে সম্পর্কিত সমস্যা ও পরামর্শ জানাতে পারবেন। যেমন- রাস্তা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা বা পরামর্শ জানাতে ‘রাস্তা’ নামের বিভাগে ট্যাপ করলে একটি ফর্ম চলে আসবে। সেখানে সংশ্লিষ্ট ছবি, ঠিকানা, সমস্যার ধরন ও বিস্তারিত লেখার অপশন থাকবে।

এগুলো ঠিকঠাকভাবে পূরণ করে দিলে সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাহী প্রকৌশলী ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে তথ্য চলে যাবে। একইভাবে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বর্জ্যের জন্য বর্জ্য কর্মকর্তা, অবৈধ স্থাপনার জন্য সম্পত্তি কর্মকর্তার কাছে এ অ্যাপের মাধ্যমে সমস্যা বা পরামর্শ জানানো যাবে।

নাগরিকরা অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে তা পৌঁছে যাবে সিটি করপোরেশনের কাছে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সরেজমিনে সমস্যাটি দেখে কতদিনে সমাধান সম্ভব তা ব্যবহারকারীকে জানাবেন। অভিযোগ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে সমাধানের সম্ভাব্য সময় জানানো হবে। জবাব জানাতে ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি জেনে যাবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সমাধান না পেলে সবশেষে বিষয়টি অভিযোগ হিসেবে চলে যাবে উত্তর সিটির মেয়রের কাছে।

উল্লিখিত আটটি বিভাগ ছাড়াও অ্যাপসটিতে সরকারি সেবা সংস্থার বিভিন্ন কল সেন্টারের জরুরি নম্বরগুলো দেওয়া রয়েছে। যেমন- সরকারি তথ্যের জন্য ৩৩৩, জরুরি সেবা ৯৯৯, দুদক ১০৬, দুর্যোগের আগাম বার্তার জন্য ১০৯০। এছাড়া নিকটবর্তী সেবার আওতায় পার্কিং, গ্যাসস্ট্রেশন,পাবলিক টয়লেট, হাসপাতাল, এটিএম বুথ, পার্ক, থানা, ফায়ার সার্ভিস, কমিউনিটি সেন্টার, এসটিএস, ফার্মেসি ইত্যাদির তথ্যও রয়েছে।

জাতীয় পর্যায়ে (সরকারি) এ অ্যাপটি পেয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার-২০২১। তখন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের পক্ষে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, জনগণের হাতের মুঠোয় নাগরিকসেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে ডিএনসিসি চালু করেছে সিটিজেন এনগেজমেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম (সবার ঢাকা অ্যাপ)। এ অ্যাপটির মাধ্যমে ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকায় নাগরিকরা তাদের এলাকার সমস্যার কথা জানাতে পারেন। এছাড়া সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলতে দিতে পারেন পরামর্শ।