• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রেমরোগ কী? এর লক্ষণ ও সমাধান

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০২৩  

 
ভালোবাসা বা প্রেম করা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু আপনি কি কখনো কাউকে পাগলের মতো ভালোবেসেছেন? সন্দেহ নেই অভিজ্ঞতাটা অনন্য। তবে ভালোবাসা জিনিসটা যখন একটা অস্বাভাবিক মোহে আটকে যায়, তখনই সেটা একটা মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়। এটাকে বলে ‘অবসেসিভ লাভ ডিজঅর্ডার’ রোগবিদ্যার ভাষায় ‘ইরোটোমেনিয়া’। খুব কম মানুষের মধ্যে এই ডিজঅর্ডার কাজ করে। কিন্তু যিনি এই রোগে ভোগেন এবং তার সঙ্গী, উভয়কেই মারাত্মক খারাপ এক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে এই রোগ। 

যেভাবে বুঝবেন
ব্যক্তির জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে ‘অবসেসিভ লাভ ডিজঅর্ডার’। তারা বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মারাত্মক বা সামঞ্জস্যহীন আচরণ করা শুরু করে। কারো সঙ্গে হয়তো প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর আপনার কোনো সুযোগ নেই অথবা পছন্দের মানুষটি আপনাকে ভালোবাসে না, জানার পরও তাকে নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করা এই রোগের লক্ষণ। 

> পছন্দের মানুষটির প্রতিটি কাজকর্ম কড়া নজরদারিতে রাখা।
> তার প্রতিটি বিষয় নিয়ে প্রচণ্ড হিংসা বা ব্যাকুলতা কাজ করা। 
> প্রত্যাখ্যাত হলে বা সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলেও মেনে নিতে না চাওয়া। 
> কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির মনোযোগ আকর্ষণের জন্য নিজের বা অন্যের সুন্দর-সুস্থ জীবনকে বিপদে ফেলা।
> একজনের মোহে নিজেকে বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে রাখা। 
> বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারা।
> নিজের দুরবস্থার বিষয়ে মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিতে অস্বীকার করা।

ভালোবাসা সুন্দর একটা অনুভূতি। কিন্তু যখন সেই সম্পর্কে আপনি বন্দী হয়ে পড়বেন, বাস্তবতা মেনে নিতে পারবেন না, তখন অবশ্যই এর পেছনের কারণগুলো অনুসন্ধান করতে হবে।

> বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারে ভোগা ব্যক্তি সহজে তাঁর আবেগ বা আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। সম্পর্কে যুক্ত থাকলেও অতি আবেগ বা অসামঞ্জস্যতায় ভুগতে থাকেন।
> শিশুদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে এই সমস্যার একটি যোগসূত্র আছে। শিশুর বেড়ে ওঠার সময়ে আবেগের যথাযথ যত্ন ও সমর্থনের অভাব হলে বড় হয়েও সে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। সে এটাচমেন্ট ডিজঅর্ডারে ভোগে।
> ‘ইরোটোমেনিয়া’ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এমন ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে থাকেন যে তিনি যাঁকে ভালোবাসেন তিনিও তাঁকে একই রকমভাবে ভালোবাসেন। এ কারণে প্রথম ব্যক্তির মধ্যে একপক্ষীয় তীব্র মোহ তৈরি হয়, যা আসলে প্রকৃত ভালোবাসা নয়।
> ছোটবেলার কোনো মানসিক আঘাত, নির্যাতন, অবজ্ঞা অবহেলার কারণে বড় হয়েও অনেকে ‘অবসেসিভ লাভ ডিজঅর্ডার’-এ ভোগেন।
> সমাজে প্রচলিত কিছু ভুল মতবিশ্বাস, যেমন সম্পর্কে থাকলে সব সময় রোমান্টিক হতে হবে, নিয়মিত রোমান্টিক ছবি আপলোড করতে হবে বা ডেটে যেতে হবে ইত্যাদি চাপের কারণেও অনেকে এমন ডিজঅর্ডারে ভুগতে পারেন। 
> এ ছাড়া বাইপোলার ডিজঅর্ডার, বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগের কারণে অনেকে নিজের আবেগকে বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে চলতে পারেন না। ফলে সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকে না।

যেভাবে সমাধান
অতি আবেশজনিত ভালোবাসা কোনো স্বাভাবিক ভালোবাসা নয়। এতে দুজনের আবেগের ভারসাম্য থাকে না; বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতাও সমান থাকে না। এই মানসিক অবস্থা থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তোলা খুব সহজ নয়, তবে কিছু উপায়ে ধীরে ধীরে বাস্তবসম্মত মানসিকতায় ফেরা যায়।

> মানসিক দুরবস্থা থাকলে ব্যক্তিকে তা জানতে হবে এবং এটা যে তার এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষের জন্য ক্ষতিকর, সেটা বুঝতে হবে।

> যে জিনিস বা ব্যক্তিতে সে আবেশিত ও আকর্ষিত; তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তার জন্য নিজেকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখা জরুরি। বই পড়া, লেখালেখি, ব্যায়াম, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আড্ডা বা নিজের ভালো লাগে এমন কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে।

> ব্যাকুলতা-দুশ্চিন্তা কাটাতে ধ্যান বা যোগব্যায়াম হতে পারে ভালো উপায়। 

> অবস্থার তীব্রতা বুঝে অবশ্যই ভালো কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

দুজনের মধ্যকার পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস ও সমর্থন থেকে তৈরি হয় ভালোবাসার সম্পর্ক। এর ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক যোগাযোগ, সমঝোতা ও সহমর্মিতা। কিন্তু অন্ধ প্রেমের ক্ষেত্রে পারস্পরিকতা জিনিসটা থাকে না, সেটা হয়ে যায় একপক্ষীয়। অতি আবেশজনিত ভালোবাসায় থাকে হিংসা, ছলনা, হারানোর ভয়, কর্তৃত্ববাদ, প্রত্যাখ্যানের অস্বীকৃতি; এতে কোনো নিজস্বতা থাকে না। সম্পর্কে যুক্ত থাকলে একে অপরকে গভীরভাবে ভালোবাসাই স্বাভাবিক, তবে সেটা যেন অস্বাভাবিক না হয়ে পড়ে।