• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সাইকেলে বেঁধে দুই কিলোমিটার দূরে লাশ ফেলে দেয় ধর্ষক

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০২২  

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১০ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে হাফেজ মোহাম্মদ মোরসালিন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে প্রেস করফারেন্স করে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান, গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। 

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ী গ্রামের মো. জাহিদুল ইসলামের ছেলে হাফেজ মোরসালিন বড় সাতাইল বাতাইল গ্রামের মসজিদের মোয়াজ্জেম ও আরবির শিক্ষক। তিনি মসজিদ সংলগ্ন একটি কক্ষে থাকতেন। তিনি মক্তবে সকালে এলাকার শিশুদের কোরআন শিক্ষা দিতেন মোরসালিন। নিহতের মা মসজিদের অদূরে নানা খয়বর রহমান বাবলুর বাড়িতে থাকতো। তার বাবা রাখালবুরুজ ইউপির কাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ঢাকায় কাজ করেন।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নীলফামারীর জোড়াবাড়ী গ্রামের মাহাতাব আলীর ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন, গোবিন্দগঞ্জের হিরোকপাড়া গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে আলামিন হোসেন ও একই উপজেলার জঙ্গলমারা গ্রামের মোজাফফর আলী খন্দকারের ছেলে আরাফাত খন্দকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিশুটিকে মসজিদে মক্তব পড়াতেন মোহাম্মদ মোরসালিন।

প্রেস করফারেন্সে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, প্রতিদিনের ন্যায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে মোয়াজ্জেম মোরসালিন ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার শিকার শিশুসহ আরো কয়েকটি শিশুকে মসজিদে মক্তব পড়ান। পড়া শেষে মোরসালিন গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার বর্ধনকুঠি এলাকার এক ব্যক্তির বাড়িতে আরবি পড়াতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে রাস্তায় ঐ শিশুর সঙ্গে তার দেখা হলে তাকে মসজিদ সংলগ্ন কক্ষটিতে নিয়ে আসেন মোরসালিন। এ সময় ঐ শিশুকে টাকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে বিস্কুট কিনে আনতে বলেন মোয়াজ্জেন। 

ঐ শিশু বিস্কুট কিনে আনলে মোরসালিন তাকে বিস্কুট খেতে দেয়। বিস্কুট খাওয়ার পর ঐ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে সে বাধা দেয় এবং নানিকে বিষয়টি বলে দেবে এই কথা বলার পর হাসনার গলা টিপে ধরেন মোয়াজ্জেম মোরসালিন। এর কিছুক্ষণ পর শিশুটি নিস্তেজ হলে তাকে ধর্ষণ করে মোরসালিন। তারপর শিশুর পরনের হিজাব স্কার্ফ দিয়ে তার গলায় পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে মোরসালিন। পরে মোরসালিন নিহতের নিথর দেহ সিমেন্টের খালি বস্তায় ঢুকিয়ে দুই কিলোমিটার দূরে সাইকেলের পেছনে ক্যারিয়ারে বেঁধে নিয়ে বর্ধনকুঠি এলাকার একটি বাঁশঝাড়ে ফেলে দিয়ে আসেন। পরের দিন দুপুরে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। 

এ ঘটনায় ঐ শিশুর মামা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মোরসালিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আলামিন হোসেন ও আরাফাত খন্দকারকে আটক করে ডিবি পুলিশ। তাদের মধ্যে মোরসালিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আলামিন হোসেনকে তিন দিনের রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মোরসালিন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রদান করেন। 

আটককৃত অন্যদের বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার। ঘটনাস্থল থেকে মোরসালিন সাইকেলে করে ওই শিশুটির লাশ বর্ধনকুঠি এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে একটি চায়ের দোকানে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজে মোয়াজ্জেমের সাইকেলের পেছনে করে লাশ পরিবহনের চিত্র দেখা যায়। এজন্য ওই দোকানের মালিককে পুরস্কার দেন পুলিশ সুপার। 

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) আবু লাইচ মো. ইলিয়াচ জিকু, সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) উদয় কুমার সাহা, জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নূর মোহাম্মদ, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি মো. মাহবুবুল আলম, গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি মো. ইজার উদ্দিন, মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ডিবির উপ-পরিদর্শক নওশাদ আলী প্রমুখ।