• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী গরমে ‘অতি উচ্চ ঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: বেরোবি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ৩১ হাজার ৯৪৬ জন বাংলাদেশ-ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী কাতারের আমিরের সফরে যা পেল বাংলাদেশ

সৈয়দপুরে দর্শনীয় ন্যারোগেজ ইঞ্জিন ও রেলের মিউজিয়াম

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২২  

সৈয়দপুরে দর্শনীয় ন্যারোগেজ ইঞ্জিন ও রেলের মিউজিয়াম                  
দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার অভ্যন্তরে রাখা ন্যারোগেজ ইঞ্জিন ও গড়ে উঠা রেলওয়ের মিউজিয়াম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন কয়লাচালিত লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন দেখতে। কেউবা রেলের মিউজিয়াম ঘুরে দেখে অতীত ঐতিহ্য খুঁজে ফিরছেন। ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির ওপর সৈয়দপুরে নির্মিত হয় দেশের প্রাচীন এবং বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ রেল কারখানার ২৬টি উপ-কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করে থাকেন। রেলের ছোটবড় যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের বগি মেরামতসহ সব কাজ করা হয় এই কারখানায়। রেলওয়ে সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান অর্জনে দেশের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কারখানা পরিদর্শন করেন।

সৈয়দপুর রেল কারখানা ঘুরে দেখা মেলে ইতিহাসের সাক্ষী কয়লাচালিত ইঞ্জিনের। কারখানা চত্বরে যে তিনটি লোকোমোটিভ স্থান পেয়েছে তার মধ্যে একটি ন্যারোগেজ ইঞ্জিন, একটি কয়লাচালিত ব্রডগেজ এবং অন্যটি ডিজেলচালিত মিটারগেজ ইঞ্জিন। কয়লাচালিত ন্যারোগেজ বাষ্পীয় লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন সিএস ১৫। এটি তৈরি করা হয় ১৯৩৬ সালে। বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের অনেক পরে। ইঞ্জিনটি নির্মাণ করে ইংল্যান্ডের ডবিউজি বাগলান লিমিটেড নামের একটি কারখানা। ১০ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা আর ১৯ ফুট দীর্ঘ ইঞ্জিনটির ওজন ১১ দশমিক ৭৬ টন। খুলনা-বাগেরহাট রুটে কয়লাচালিত ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচল করত। সর্বশেষ ১৯৩৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চলাচল করেছে এই কয়লাচালিত ন্যারোগেজ স্টিম লোকোমোটিভ। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ন্যারোগেজ ইঞ্জিনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। 

রেলের ইতিহাস বহন করা আরেকটি ইঞ্জিন হলো কয়লাচালিত ব্রডগেজ বাষ্পীয় লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এসজিসি-জেড ২৪০। এটি ৫৩ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা। ১৯২১ সালে তৈরি হয়েছিল। এ ইঞ্জিন দিয়ে পাকশি রুটে ট্রেন চলাচল করত। ১৯৩৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত চলাচলের উপযোগী ছিল। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রেলের ইঞ্জিনেও আসতে থাকে পরিবর্তন। কয়লাচালিত ইঞ্জিনের পরিবর্তে আসতে থাকে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন। সৈয়দপুর রেল কারখানার চত্বরে ডিজেলচালিত একটি মিটারগেজ লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন এমএইচজেড-৮ (৩৩৩২) রাখা আছে। এটি ৩৮ ফুট লম্বা। এ ইঞ্জিনটি ১৯৮২ সালে তৈরি হয়েছিল। ইঞ্জিনটি দিয়ে পার্বতীপুর-সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে ট্রেন চলাচল করত বলে জানা গেছে। সর্বশেষ ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এ ইঞ্জিন চলাচল করেছে। 

বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুসারে, ১৮৬২ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের রেলসেবা চালুর পরবর্তী শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ইঞ্জিনগুলো বাংলাদেশের রেলওয়েতে সেবা দিয়ে এসেছে। ১৯৫৩ সালে কানাডার তৈরি ‘ইএমডি বি-১২’ মডেলের ২০০০ শ্রেণির মিটার গেজ লোকোর মাধ্যমে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ডিজেল লোকোর সূচনা হয় এবং রেলে ডিজেল ইঞ্জিনের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়তে থাকে। তবে আধুনিকতার দাপটে ধীরে ধীরে কমতে থাকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ব্যবহার। সর্বশেষ বাংলাদেশে স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয় ১৯৮৪ সালে।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমান বলেন, সর্বশেষ বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৯৮৪ সালে স্টিম লোকোমোটিভ পরিচালিত হয়। যেহেতু এই কারখানাটিতে এক সময় স্টিম লোকোমোটিভ মেরামত করা হতো, আমরা সেই ইতিহাসের অংশ হিসেবে এই লোকোমোটিভ এখানে রেখেছি। তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষ যদি আগ্রহী হন তাহলে তারা এখানে এসে লোকোমোটিভসহ আমাদের রেলওয়ে জাদুঘরে রাখা ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত মালামাল ও যন্ত্রপাতি পরিদর্শন করতে পারেন।
#দৈনিক ইত্তেফাক।