• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আগাম আলু উৎপাদনে একমাত্র জেলা নীলফামারী

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২২  

আগাম আলু উৎপাদনের একমাত্র জেলা নীলফামারীতে চলছে কৃষকদের জোড় প্রস্ততি। কেউবা জমি প্রস্তুতকরণ, কেউবা আলু বীজ রোপণ আবার কেউ কেউ আবহাওয়ার দিকে নজর রেখে আলু বীজ রোপণের প্রস্ততি শুরু করেছেন। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই, পুটিমারী ও বাহাগিলি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

তবে গতবারের লোকসানের শংকা কাটিয়ে এবার বাম্পার ফলন ও ভালো দামের স্বপ্ন দেখছেন হাজারো কৃষক। নিতাই ইউনিয়নের পশ্চিম দুরাকুটি এলাকার কৃষক শামীম হোসেন বাবু জানান, এবার ২৩বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণের কাজ শুরু করেছি। ৫৫-৬০দিনের মধ্যে আলু তুলে বিক্রি করা যাবে। ৮০ থেকে ১০০টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে এই আগাম আলু।

তবে জ্বালানী, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজরি বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে গেছে। আগে বিঘা প্রতি ২৫হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হলেও এবার খরচ পড়ে যাবে ৩৫ হাজার পর্যন্ত।

তিনি বলেন, আলু তোলার সময় এখানে উৎসব শুরু হয়। ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা ট্রাকে ট্রাকে আলু নিয়ে যায় সে সময়ে বেশ ভালো লাগে আমাদের।

আরেক কৃষক রুবেল রানা বলেন, ২০বিঘা জমিতে আগাম আলু আবাদ শুরু করেছি। বছরে তিনটি ফসল ফলাই এক জমিতে। আমনের পর আগাম আলু এরপর ভুট্টা লাগাবো।

বিঘা প্রতি ৪০-৪৫ বস্তা আলু হলে ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ আসবে। এক বিঘায় ১০-১২ বস্তা বীজ আলু রোপণ করতে হয়।

তিনি বলেন, সারাদেশের মধ্যে একমাত্র আগাম আলু উৎপাদন হয় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে। যার কারণে এই এলাকার কৃষকরা লাভ লোকসান মাথায় নিয়ে এমনকি ঝুঁকি নিয়ে আলু আবাদে মাঠে নেমে পড়েন।

এই এলাকা আলু চাষের জন্য উত্তম। কারণ উচু এলাকা পানি জমে থাকে না। সে কারণে আলুর ফলনও ভালো হয়।

তিনি বলেন, প্রথমে যখন আলু উঠবে ওই আলু একশ টাকারও বেশি কেজি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরে আস্তে আস্তে আলুর ব্যাপকতা বাড়লে দামও কমে আসে।

আরেক কৃষক বকুল হোসেন বলেন, ছয় বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছি। জমি তৈরি হচ্ছে কিন্তু আবহাওয়ার দিকে খেয়াল করছি কারণ বৃষ্টি হলে বীজ আলু নষ্ট হয়ে যাবে। দুই একটা দিন পর্যবেক্ষণ করে রোপণে যাবো।

তিনি অভিযোগ করেন পর্যাপ্ত সার পাওয়া যাচ্ছে না, তেল ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে যার প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। খরচ বাড়লেও লাভ তেমন বাড়ে না। আমরা এই এলাকার মানুষ কৃষির উপর নির্ভর করে সংসার চালাতে হয়।

আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি কৃষি সামগ্রী যেন সহজে পাওয়া যায় এবং দাম যেন হাতের নাগালে থাকে তাহলে কৃষি এবং কৃষক ভালো থাকবে। দল বেঁধে আট দশজন মিলে আলু রোপণে কাজ করছেন শ্রমিকরা। কেউ রশি টেনে লাইন, কেউ কোদাল দিয়ে বীজ ভরাট, কেউ বীজের গর্ত তৈরি করণসহ নানা কাজে ব্যস্ত তারা।

তারপরও ভালো ফলন ও ভালো দাম গৃহস্থের (কৃষক) ঘর পাউক হামরা চাই।

আরেক শ্রমিক একরামুল হক বলেন, গতবছর কয়েক দফায় পানি হইছে। এই কারণে বীজ নষ্ট হয়া গেইছে। দাম পায় নাই। এইবার ঝুঁকি নিয়া গৃহস্থের (কৃষক) ঘর আলু নাগায়ছে।

উপজেলা কৃষি দফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৬৬৫০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলার নিতাই, বাহাগিলি, পুটিমারী, রণচন্ডিসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নে আগাম আলু হয়ে থাকে।

দেশের একমাত্র জেলা হিসেবে নীলফামারীতে উৎপাদন হওয়া আগাম আলু খেয়ে থাকেন বিভিন্ন জেলার মানুষ।

জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, সেপ্টেম্বরের ২০ থেকে আগাম আলু রোপন শুরু হয় যা চলে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। যেহেতু দেশের একমাত্র জেলা নীলফামারীতে আগাম আলু হয় একারণে কৃষকদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়। যাতে কোন ভাবে ফসল ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং পরামর্শ দিচ্ছেন। যাতে বীজ আলু নষ্ট না হয়, ভালো ফলন হয়।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম বারী পাইলট জানান, আলু অধ্যুষিত জেলা নীলফামারী। এই জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক আকারে আলু উৎপাদন হয়ে থাকে কিন্তু এই আলু সংরক্ষণের অভাবে কৃষকরা ভালো দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে হিমাগার স্থাপন এবং আলু ভিত্তিক বিভিন্ন কারখানা স্থাপন করা হলে কৃষকরা লাভবান হবেন।