• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শীতে কাপছে উত্তরাঞ্চল

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ জানুয়ারি ২০২৪  

তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ। উত্তরের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা কমে জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় জবুথবু সাধারণ মানুষ। শুরু হয়েছে হাঁড় কাপানো শীতের দাপট। একইসঙ্গে হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। একদিকে তীব্র শীত, অন্যদিকে গত দু’দিন থেকে ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। কনকনে ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়ছে নিম্ন আয় ও গরিব-অসহায় মানুষ।

টানা ঝিরিঝিরি কুয়াশায় দিনেও হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতোমধ্যে ঘন কুয়াশার কারণে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রয়েছে৷

মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সকালে সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অপরদিকে তীব্র শীতে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

নীলফামারী জেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে শহরে নেই তেমন ব্যস্ততা। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। বের হলেও শরীরে রয়েছে মোটা কাপড়। শীতের মধ্যে কাজ করতে বের হয়ে কাজ না পেয়ে ও শীতের মাঝে কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর ও শ্রমজীবীরা।

রিকশা চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ঠাণ্ডার কারণে এখনো কোন ভাড়া ধরতে পারিনাই বাবা। আমার দুই মেয়ে আর তোমার চাচিক খাওয়ার লাগে, কামাই না হইলে কি খাওয়াবো। ঠাণ্ডার কারণে মানুষ নাই রিকশায় উঠতেছে না, জমা টাকা দিব কিভাবে বাসায় চাল নিব কিভাবে।

সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন বলেন, সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মত কুয়াশা পড়ছে। এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত দিনের চেয়ে তাপমাত্রা বেড়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে এবং সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা বাড়বে।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর ম্যানেজার সুপ্লব কুমার ঘোস জানায়, আবহাওয়া পরিবর্তন ও সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে ইউএস-বাংলার দুইটি এবং নভো এয়ারের একটি ফ্লাইট ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেনি। আকাশে ঘন কুয়াশা কেটে গেলে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হবে।

নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসিবুর রহমান জানান, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। শীতবস্ত্র হিসেবে জেলার ৬ উপজেলা ও চার পৌরসভায় ২৫ হাজার পিস কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রায় ৫ হাজার মজুদ আছে। প্রয়োজনে আরও চাহিদা বাড়ানো হবে।

এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, সারা দেশে মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এতে শীতের অনুভূতি কিছুটা বাড়বে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। এ কারণে উড়োজাহাজ, নৌ পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগে সমস্যা হতে পারে।

তিনি বলেন, গতকাল সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বেশির ভাগ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলিসয়াসের মধ্যে ছিল।

শীতের কারণে রংপুরে কোল্ড ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন বিভাগে শীতজনিত রোগে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা ৫ শতাধিক ছাড়িয়েছে। হাসপাতালটি এক হাজার শয্যার হলেও বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। রোগীর সংখ্যা বাড়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে সমস্যায় পড়ছেন চিকিৎসকরা।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডা. ইউনুস আলী বলেন, শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। শীতজনিত কারণে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পর্যাপ্ত শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও চিকিৎসকরা সাধ্যমতো সেবা দিচ্ছেন।