• সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১

  • || ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

পদ রক্ষায় খালেদার হাতে ভুয়া সম্মাননা সনদ তুলে দিলেন ফখরুল       

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

মহাসচিব পদ রক্ষায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার হাতে কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামের বেনামি একটি সংগঠনের সম্মাননা সনদ তুলে দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জানা গেছে, বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর প্রভাব কমাতে হাসপাতাল থেকে ফেরা খালেদা জিয়ার হাতে সিএইচআরআইও-এর সনদ তুলে দেন মির্জা ফখরুল। খালেদা জিয়ার মন জোগাতেই নাকি তিন বছর পর বেনামি সংস্থাটির সম্মাননা নিয়ে হাজির হন ফখরুল। এটি বিএনপিতে কোণঠাসা ফখরুলের নিজ পদ রক্ষার লড়াইয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টামাত্র।

ক্ষমতায় আসতে কয়েক হাজার মানুষ হত্যার পেছনের নির্দেশদাতা ছিলেন খালেদা জিয়া। ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তার ছেলে তারেক রহমান ২১শে আগস্টের মতো ঘটনা ঘটিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছেন। আর তাকে কানাডার মতো দেশের একটি সংগঠন সম্মাননা দিচ্ছে, যা রীতিমত সর্বমহলে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডার সিএইচআরআইও সংগঠনের ক্রেস্ট ও সনদ সাংবাদিকদের দেখান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে সন্ধ্যায় তিনি গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসায় গিয়ে তার হাতে সম্মাননা সনদ পৌঁছে দেন।

সূত্র বলছে, এ ক্রেস্ট দেওয়ার বিষয় নিয়ে সন্দেহ করছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সিনিয়র নেতারা বলছেন, মির্জা ফখরুল তার মহাসচিব পদ বাঁচাতে এবং রুহুল কবির রিজভীর প্রভাব কমাতে এ সম্মাননার অবতারণা করেছেন। মূলত তারেক ও খালেদাকে খুশি করার লক্ষ্যে সম্মাননা তুলে দেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, মির্জা ফখরুল উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, তিনি স্বপদে আর বেশি দিন নেই। তাই ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) ও তারেক রহমানকে খুশি করতেই এ নাটক করেছেন। তিন বছর পর সম্মাননার বিষয়টি জানানো খুবই হাস্যকর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, পদে থাকার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপিকে জনগণের কাছে হাসির পাত্র বানিয়ে ফেলেছেন। বহু আগেই আমরা তার মতো অযোগ্য নেতার পদত্যাগ চেয়েছিলাম। খালেদা জিয়াকে ক্রেস্ট দেওয়া এবং ফখরুল ইসলামের হাস্যকর সকল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা তারেক রহমানকে অবহিত করেছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, ‘ফখরুলের বয়স হয়েছে তাই তাকে দ্রুত সরিয়ে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসবো।’

সংবাদ সম্মেলনে দেখানো সম্মাননা সনদে লেখা ছিল সিএইচআরআইও-এর ট্রিলিয়াম অ্যাওয়ার্ড, যা ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

এতদিন পর কেন বিএনপি সেই সম্মাননা প্রাপ্তির খবর প্রকাশ করছে- এ প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এর কারণটা হচ্ছে, এ সম্মাননা যখন দেওয়া হয় তখন ম্যাডাম জেলে ছিলেন। তারপর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন কয়েকবার। এখন উনি বাসায় এসেছেন। আমরা তাকে এ সন্মাননার কথা জানিয়েছি। আপনাদেরও জানালাম।

কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, টরন্টোভিত্তিক এ সংগঠন ২০০৩ সাল থেকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে আসছে। তবে তাদের ওয়েবসাইটে খালেদা জিয়াকে সম্মাননা প্রদানের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে গুগলে ঘাটলে দেখা যায়, পিস অ্যান্ড জাস্টিস অ্যালায়েন্স নামে আরেকটি বেনামি সংগঠনের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার সম্মাননা পাওয়ার খবর দেখা যায়। সেখানে বলা হয়, কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের কাছ থেকে ২০১৮ সালের ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ পুরস্কার পেয়েছেন খালেদা জিয়া। এর সত্যতা নিয়ে মির্জা ফখরুলের ওপর চটেছেন খোদ বিএনপি চেয়ারপার্সনের ছেলে তারেক রহমান।

খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে বিএনপির নেতারা বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বিভিন্ন সময়ে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ বলে আসছিলেন। এ নিয়ে খোদ দলের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যে আপত্তি প্রকাশ পেয়েছে। মির্জা ফখরুলও বিভিন্ন সময়ে তার বক্তৃতায় খালেদা জিয়াকে ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এজন্য তারেক রহমান অনেক বৈঠকে মির্জা ফখরুলকে প্রকাশ্যে তেলবাজি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।