• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় রেলযাত্রীরা   

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

গামছা পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পকেটমার ও মাদক পাচারকারী চক্রের সদস্যরা এ রুটে বেপরোয়া। প্রায়ই দুবৃর্ত্তদের হাতে ট্রেনের সাধারণ যাত্রীরা প্রাণ হারাচ্ছেন। গাজীপুর থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা রেলওয়ের বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম নিয়ে  মোটেও সন্তুষ্ট নন তারা। 
গাজীপুর জেলা ও মহানগরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-রাজশাহী কিংবা এই রুটের খুলনার সঙ্গে চলাচলকারী কোনো ট্রেনের যাত্রীগণই বেপরোয়া অপরাধীদের কারণে নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করতে পারছেন না।  দিন দিন এসব ঘটনা বৃদ্ধিই পাচ্ছে এসব রুটে। 

সংঘবদ্ধচক্র নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণের চেইন ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র লুট করে আবার যাত্রীদের চলন্ত ট্রেনে বা ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করছে। গত বছরে ছিনতাইকারী চক্রের হাতে একজন প্রবাসীসহ কমপক্ষে ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন গাজীপুরের বিভিন্নস্থানে। 

একদিনেই নগরের ধীরাশ্রম স্টেশন এলাকা থেকে তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। টঙ্গী, ধীরাশ্রম, জয়দেবপুর, ভুরুলিয়া,মাঝুখানসহ বিভিন্নস্থান  থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার হয়। যদিও এর কোনো সঠিক হিসাব দিতে পারেননি স্থানীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। 

শুক্রবার সকালে গাজীপুর জেলা ও মহানগর প্রাণকেন্দ্রের রেলওয়ে স্টেশন জয়দেবপুর জংশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অপেক্ষমান কয়েকজন যাত্রী জানান, রেলওয়ের কোনো পরিবর্তন নেই। এমনকি বিপর্যয়ে থাকা ট্রেনের সিডিউলও স্বাভাবিক হয়নি। 

দিনাজপুরগামী এক নারী যাত্রী জানান, এর আগের ভ্রমণের সময় তার ব্যাগ চুরি হয়েছে। নানা ধরনের উদ্যোগ, উৎকণ্ঠা নিয়েই তাদের  ট্রেনে ভ্রমণ করতে হয়। 
তিনি আরো বলেন,  ট্রেনে ওঠেও আমরা নিশ্চিন্তে  যেতে পারি না এই কারণে  যে, চিন্তায় থাকি কখন যে ব্যাগ ছিনতাই হবে, মোবাইল নিয়ে যাবে, কখন যে চকলেট বা পান সিগারেট খাইয়ে অজ্ঞান করে দেবে, এ ধরনের বিষয় নিয়ে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। যদি এই আতঙ্কটা কমাতে পারে আর সময় মতো ট্রেন আসা-যাওয়া করে তাহলে আমাদের সুবিধা হয়। 

ময়মনসিংহগামী একজন যাত্রী বলেন, আমরা যখন বাড়িতে যাই তখন ট্রেন সময় মতো আসে না, লেট করে। টোকাইরা ঢিল মারে, ব্যাগ নিয়ে যায়। এসব অত্যাচার সহ্য করে তো আরামে চলাচল করা সম্ভব নয়। 

গাজীপুরের একজন নারী যাত্রী জানান, নারীরা যারা ট্রেনে ঢাকায় যাওয়া আসা করি তাদের অনেক সমস্যা হয়। দেখা যায়, কখনো কখনো  মেয়েরা ইভটিজিং এর শিকার হয়। কেউ ওড়না ধরে টানছে, ব্যাগ ধরে টানছে, মোবাইল নিয়ে যাচ্ছে। এ রকম অনেক সমস্যা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি মেয়েদের জন্যে, নারী যাত্রীদের জন্যে আলাদা বগির ব্যবস্থা করা  হোক, রেলওয়ে পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করাসহ তৎপরতা যাতে বাড়ানো হয়। 

অপর একজন যাত্রী জানান, আমরা বিভিন্ন সময় দেখছি টঙ্গী থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ছেলেরা বা  টোকাইরা ঢিল ছুড়ছে, ট্রেন ছাড়ার সময় হাতে থাকা ঘড়ি ব্যাগ টানছে। এছাড়াও নানা অঘটনের শিকার হতে হয়।

সেগুলোর ব্যাপারে বা নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখিনি। টঙ্গী ও জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনে রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও তাদের ভূমিকা তেমন চোখে পড়েনা। ট্রেনে খুন, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনাতো আছেই সঙ্গে রয়েছে নারীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাও। 

সংঘবদ্ধচক্র নগদ টাকা, মোবাইল, স্বর্ণের চেইন ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র লুট করে আবার যাত্রীদের চলন্ত ট্রেনে বা ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করছে। টঙ্গীর দিকে প্রায় ট্রেনে ঢিল ছোড়ায় নানা অঘটনও ঘটছে। ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে এই  রেলপথ। 

তাদের দাবি, গাজীপুর অংশে রেলওয়ের নিরাপত্তা জোরদার করা ও সেবার মান বাড়ানো হউক। 

জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের সিনিয়র স্টেশন মাস্টার মো. শাহজাহান জানান, সব ধরনের সেবা ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ট্রেনে ঢিল ছোড়া, যাত্রী ছিনতাই, হয়রানী, শৃঙ্খলার সঙ্গে টিকিট কাটা, নিরাপদে ট্রেনে ওঠানামাসহ অন্যান্য সেবা বাড়ানোর এবং যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব করার বিষয়ে  আন্তরিকভাবে কাজ করছি। আর রাজনৈতিক কারণে স্টেশনের আশপাশের জায়গা থেকে দোকান পাট ও বাজার সরালেও আবার বসে যায়। এতে করেও ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

টঙ্গী জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান জানান, এ স্টেশনের ওপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ দেশের বাইরেও ট্রেন চলাচল করে থাকে। স্টেশনটি খোলামেলা থাকায় সব ধরনের লোক স্টেশনের ওপর দিয়ে চলাচল করে থাকে। এতে করে টাউট বাটপার ও ছিনতাইকারী রোধে চেষ্টা করেও তা থামানো সম্ভব হচ্ছে না। আর তুলনামূলকভাবে নিরাপত্তাবাহিনীও এ স্টেশনে কম রয়েছে।