অবকাঠামোয় বিশ্বমান, পদ্মা সেতু দৃশ্যমান
– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২০
আলী হাবিব
এভাবেই বিজয়ডঙ্কা বাজে, রচিত হয় ইতিহাস। বিশ্বমানের অবকাঠামো হিসেবে দৃশ্যমান হলো পদ্মা সেতু। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে বাঙালি জাতি দেখিয়ে দিয়েছিল। ২০২০ সালে সেই বিজয়ের মাসেই বাঙালি আবার দেখিয়ে দিল, আমরাও পারি। অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশে সমৃদ্ধ আগামীর যে স্বপ্ন দেখা হয়েছিল একদিন, অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সেই স্বপ্ন সত্যি হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
একটু পেছন ফিরে তাকানো যাক। ২০০১ সালের ৪ জুলাই বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পদ্মায় অনেক পানি গড়ালেও সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা আবারও সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নিয়োগ করা হয় পদ্মা সেতুর ডিজাইন কনসালট্যান্ট। ২০১০ সালে প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর ঘটনাবহুল সময় পেরিয়ে যায়। পদ্মা সেতুর মূল দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক নানা টালবাহানার পর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি স্থগিত করে এবং পরে চুক্তি বাতিল করে দেয়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। সেই পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসল গত বৃহস্পতিবার। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানোর পর এই সেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ নিজের সামর্থ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। এই সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যে যোগাযোগ সৃষ্টি হবে, সেটি আমাদের সরাসরি জিডিপিতে অবদান রাখবে।’
দেশের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু নিছক একটি বড় সেতু নয়, এটি দুঃসাহসী একটি স্বপ্নের নাম। পরাক্রমশালী বিশ্বব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘নিজেদের টাকায়ই আমরা পদ্মা সেতু গড়ব।’ স্বল্পোন্নত একটি দেশের জন্য বিদেশি কোনো সাহায্য ছাড়াই ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপই ছিল। আর তাই ইস্পাতের এই কাঠামো শুধু পদ্মার এপার-ওপারকে যুক্ত করল না, জাতীয় জীবনে যুক্ত করল একটি ঐতিহাসিক অর্জন। উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি সাহায্যনির্ভরতার বিপরীতে এই সেতু দেশের জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে থাকবে। এই অর্জন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে বিদেশি সংস্থার ঋণ থেকে বেরিয়ে আসতে নিঃসন্দেহে সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগাবে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
আয়তন ও নির্মাণব্যয়ের দিক থেকে পদ্মা সেতু দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এটাই হবে দেশের প্রথম দ্বিতল সেতু। ওপরতলায় চলবে মোটরযান। নিচের তলায় চলবে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ উভয় ধরনের ট্রেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের নতুন এই সেতু চালু হলে তার হাওয়া লাগবে অর্থনীতির পালে। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ও বন্দরনগর চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। তাতে মোট দেশজ উৎপাদন ১.২ শতাংশ বাড়বে এবং প্রতিবছর ০.৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমবে বলে সরকার আশা করছে।
এই সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রথম কোনো সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবন পাল্টে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কৃষিতে উন্নত। এই সেতু হয়ে গেলে তাদের কৃষিপণ্য খুব সহজেই ঢাকায় চলে আসবে। মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ও বন্দরনগর চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পুরো দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। কোনো বিনিয়োগের ১২ শতাংশ ‘রেট অব রিটার্ন’ হলে সেটি আদর্শ বিবেচনা করা হয়। এই সেতু হলে বছরে বিনিয়োগের ১৯ শতাংশ করে উঠে আসবে। কৃষি-শিল্প-অর্থনীতি-শিক্ষা-বাণিজ্য, সব ক্ষেত্রেই এই সেতুর বিশাল ভূমিকা থাকবে।
স্বপ্নের এই সেতুকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ। এখনই পরিকল্পনা নিলে পদ্মা সেতু ঘিরে পদ্মার দুই পারে সিঙ্গাপুর ও চীনের সাংহাই নগরের আদলে শহর গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই সেতু ঘিরে কী কী হতে পারে, কোথায় শিল্প-কারখানা হবে, কোথায় কৃষিজমি থাকবে—সেসব বিষয় দ্রুতই বিবেচনা করতে হবে। এই সেতু ঘিরে পর্যটনে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা। অনেক আধুনিক মানের হোটেল-রিসোর্ট গড়ে উঠবে। এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০৩৫-৪০ সালে বাংলাদেশ যে উন্নত দেশ হবে, সে ক্ষেত্রেও এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ বাংলার উদ্যোক্তাদের ভেতরে এরই মধ্যে এক ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আস্থার জায়গা তৈরি হয়ে গেছে। এই সেতু ঘিরে শিপবিল্ডিং, পর্যটন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা খাতের বড় ধরনের বিকাশ ঘটবে। ওই অঞ্চলে গড়ে উঠবে পর্যটনকেন্দ্র। ঢাকা থেকে সরাসরি সেখানে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো বসে যাওয়ায় বড় একটি স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। বাকি কাজ সময়মতো শেষ হলে যাতায়াতের সুবিধার তাত্ক্ষণিক উপকার পাব আমরা। ঢাকায় আসা-যাওয়ায় সময় অনেক কম লাগবে। পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমবে। ফলে বাড়বে বাণিজ্যিক গতি। বিনিয়োগকারীরা এখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাবেন। তবে সে জন্য আনুষঙ্গিক কিছু বিষয়ের উন্নতি প্রয়োজন। কারণ পদ্মা সেতু আমাদের এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখেও দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, সেটা হচ্ছে সেতুর সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বাড়বে বাণিজ্যিক গতি। বিনিয়োগকারীরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখাবেন। এখন আনুষঙ্গিক কিছু বিষয়ে উন্নতি প্রয়োজন। পদ্মা সেতুর সঙ্গে যেসব গ্রাম বা চরাঞ্চলের সংযোগ রয়েছে, সেসব এলাকার মানুষের কাছে পদ্মা সেতুর সুবিধা পৌঁছাতে হলে সেতুর সঙ্গে তাদের সংযোগটা তৈরি করে দিতে হবে। যমুনা সেতু উত্তরবঙ্গ থেকে ‘মঙ্গা’ শব্দটি দূর করে দিয়েছে। এটাই যমুনা সেতুর একটা পরোক্ষ সুফল। পরিবেশ নিজেই চাহিদা তৈরি করে সুযোগ বাড়ায় এবং তার পরই সেখানে বিনিয়োগ চলে যায়। এই বিনিয়োগের জন্য যোগাযোগব্যবস্থা একটা পূর্বশর্ত।
লক্ষ্যে স্থির, বিপদে অবিচল থাকলে পাহাড়সম বাধাও যে ডিঙানো যায় তার বড় নজির পদ্মা সেতু প্রকল্প। নির্মীয়মাণ এই সেতু নিয়ে দেশ-বিদেশে জল ঘোলা কম হয়নি। কম পড়েনি রাজনৈতিক খড়্গের আঘাত। অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশে সমৃদ্ধ এক আগামীর স্বপ্ন নিরন্তর শুধু আমরা দেখি না; বাস্তবায়নেও দক্ষ হয়ে উঠেছি—পদ্মা সেতু তারই দৃশ্যমান প্রমাণ।
লেখক : সাংবাদিক।
সূত্র: কালেরকণ্ঠ।
- বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব অস্ট্রিয়ার
- খেলতে গিয়ে চোরাবালিতে ডুবে যায় কিশোর, অতঃপর...
- জলঢাকা পৌরসভায় উপ-নির্বাচনে মেয়র হলেন নোভা
- নাশকতা মামলায় কুড়িগ্রামে যুবদলের সভাপতিসহ কারাগারে ৬
- মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান শিরোপা পিএসজির
- প্রথম স্ত্রীর হাতে কেন চড় খেয়েছিলেন আমির?
- হজ পালনে অনুমতি বাধ্যতামূলক করল সৌদি
- আবারো কমলো সোনার দাম
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার কবে বন্ধ হবে, জানালেন শিক্ষামন্ত্রী
- ঈদুল আজহায় পশু আমদানির পরিকল্পনা নেই: প্রাণিসম্পদমন্ত্রী
- রোগীর প্রতি চিকিৎসকের অবহেলা সহ্য করবো না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- রাতভর ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত
- আইনগত সহায়তা দরিদ্র-অসহায় নাগরিকের অধিকার: আইনমন্ত্রী
- সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা প্রয়োজন করা হবে: ইসি আলমগীর
- একদিনে হিট স্ট্রোকে ১৭ জনের মৃত্যুর রেকর্ড
- দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী
- সৈয়দপুরে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা শীর্ষক সম্মেলন
- আ.লীগের উপদেষ্টা সদস্য প্রণব কুমার বড়ুয়া মারা গেছেন
- এমএলএসে মেসির নতুন ইতিহাস
- রাতারাতি ভাইরাল পিয়া জান্নাতুল, কী বলছেন তিনি
- টানা ৪ মাসে হাতে লিখলেন কোরআন
- তীব্র দাবদাহে নজর কেড়েছে ‘এসি হেলমেট’
- থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান
- তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি করতে হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- অদক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠানো হবে না: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
- হজ ফ্লাইট শুরু ৯ মে: ধর্মমন্ত্রী
- ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান
- একটা জাল ভোট পড়লেই কেন্দ্র বন্ধ: ইসি আহসান হাবিব
- তরুণদের উদ্ভাবনী জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে: স্পিকার
- তীব্র দাবদাহে বেড়েছে লবণ উৎপাদন
- ডিমলায় জুয়া খেলার অপরাধে আটক-২
- ঠাকুরগাঁওয়ে ঈদ-নববর্ষে ১০ জন নিহত, আহত ২ শতাধিক
- রাতেই যেসব অঞ্চলে হতে পারে বজ্রসহ বৃষ্টি
- জয়সওয়ালের শতকে সপ্তম জয় রাজস্থানের
- ফারিণের ‘নিকষ’ অন্ধকার!
- ‘সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে ভূমিসেবায় দুর্নীতি প্রতিরোধ করা হবে’
- অবৈধ দখলে থাকা খাস জমি চিহ্নিত করতে বললেন ভূমিমন্ত্রী
- মেডিকেল কলেজের ক্লাস অনলাইনে নেয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
- চিকিৎসা ব্যবস্থা যেকোনো মূল্যে সহজলভ্য করবো: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- রংপুরে সংবর্ধনায় সিক্ত ব্যরিস্টার আনিকা তাসনিয়া
- ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানো কোচকে নিয়োগ দিচ্ছে পাকিস্তান
- মানুষের জীবন সহনীয় করতে কাজ করছে সরকার: পরিবেশমন্ত্রী
- রোহিঙ্গা সমাধানে নিউজিল্যান্ডকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান
- জামদানিকে আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত করা হবে: শিল্প সচিব
- তুরস্কে আঞ্চলিক নির্বাচনে এরদোগান বিরোধীদের জয়
- ঈদে সৈয়দপুর-ঢাকা আকাশপথে বাড়তি ফ্লাইট
- আইকনিক লিডার এখন কুন্তলা চৌধুরী
- আইপিএলের মাঝপথে হঠাৎ দেশে ফিরলেন মুস্তাফিজ
- ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী
- বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড ৫ কূটনৈতিক দলিল সই