• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পৃথিবীতে এলিয়েন সভ্যতা আসলে কি হতে পারে?

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৮  

আমাদের মহাবিশ্ব অনেক বড় আর সেটা আমাদের কল্পনার থেকেও বিশাল। এই সীমাহীন ব্রহ্মাণ্ডে লাখো-কোটি গ্যালাক্সি আছে যার মধ্যে তারার সংখ্যা অনুমান করা অসম্ভব। এমনটা বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে সমুদ্র তীরে যত বালুকণা আছে তার থেকেও অধিক পরিমানে তারা মহাশূন্যে আছে। এই অগনিত তারার মধ্যে পৃথিবীর মত গ্রহ অবশ্যই হবে, যেখানে জীবন হতে পারে। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর মতো গ্রহের খোঁজ বিজ্ঞানীরা করেছেন যেখানে জীবনের অস্তিত থাকতে পারে।

বিজ্ঞানিরা এমন সব গ্রহের খোঁজ করছেন যেখানে আধুনিক সভ্যতা আছে। আর এই আধুনিক সভ্যতার খোঁজ করার জন্য বিজ্ঞানিরা সিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন যারা মহাশূন্যে সিগন্যাল পাঠিয়ে থাকেন, যেন কোনো এলিয়েন সভ্যতা আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। কিন্তু আপনাদের মনে হয়ত একটি প্রশ্ন আসতেই পারে যে তখন কি হবে যখন আমাদের পাঠানো সিগন্যালের লোকেশন ট্র্যাক করে কোনো এডভান্স এলিয়েন সভ্যতা যখন আমাদের কাছে চলে আসবে।

এই প্রশ্নের উত্তর ফিজিসিস্ট মিসিও কাকু এবং স্টেফেন হকিং তাদের বিচার তুলে ধরেছেন। ফিজিসিস্ট মিসিও কাকু মনে করেন ব্রহ্মাণ্ডে ইন্টেলিজেন্স সিভিলাইজেশন আছে। তার মতে এমন অনেক এলিয়েন সিভিলাইজেশন হতে পারে যারা টেকনোলজির দিক থেকে আমাদের থেকেও অনেক অ্যাডভান্স হবে এবং তারা আমাদের তারা পাঠানো সিগন্যাল মেসেজকে ডি কোড করে পৃথিবীতে চলে আসবে। ফিজিশিয়ান মিশিও কাকু এরকম অ্যাডভান্স সিভিলাইজেশনকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। টাইপ ওয়ান প্ল্যানেটারি, টাইপ টু স্ট্রেলার এবং টাইপ থ্রী গ্যালাক্টি।

প্লানেটরি সিভিলাইজাশন এর মানে হল এটি তার প্ল্যানেটের এনার্জিকে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। তারা ভূমিকম্প সুনামি ঝড় এবং আগ্নিয়গিরির বিস্ফোরণ মত প্রাকৃতিক ঘটনাকে নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হবে।

টাইপ টু স্টেলার সিভিলাইজাশন তাদের সোলার সিস্টেম এর সমস্ত এনার্জিকে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। এই সিভিলাইজেশন তার প্লেনেটকে উল্কা এবং ধূমকেতুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে। এই সিভিলাইজেশন এতটাই এডভান্স হবে যে যখন তাদের সূর্যের এনার্জির শেষ হয়ে যাবে তখন তারা তাদের প্ল্যানেট ছেড়ে অন্য কোন প্ল্যানেটে গিয়ে বসবাস করতে পারবে।

বিজ্ঞানীরা এ ধরনের একটি প্ল্যানেটের খোঁজ করেছেন যেটার মধ্যে তারা আশা করছে এই ধরনের টাইপ টু সিভিলাইজেশন হতে পারে। টাইপ থ্রী গ্যালাক্টিক সিভিলাইজেশন। এই সিভিলাইজেশন টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু এর থেকেও অনেক বেশি আডভান্স হবে। তারা তাদের সম্পূর্ণ গ্যালাক্সির এনার্জিকে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। ওয়ার্ম হোল আর লাইট এর স্পীডে এ ট্রাভেল করা তাদের জন্য কঠিন কিছুই হবে না। এই সিভিলাইজেশন চোখের পলকে বিলিয়ন ট্রিলিয়ন লাইট ইয়ার্স পর্যন্ত যাত্রা করতে পারবে।

তাহলে যদি আমরা আমাদের পৃথিবীর কল্পনা তাহলে আমরা এখনও টাইপ জিরো সিভিলাইজেশনে আছি। কারণ আমাদের টেকনোলজি মাত্র দুইশ থেকে দেড়শ বছরের পুরনো। এখনো আমরা আবহাওয়া ঝড়, সুনামি আর ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখিনি। আমাদের টেকনোলজি এই সমস্ত এলিয়েন টেকনোলজির সামনে কিছুই না। যদি এ রকম কোনো এডভান্স এলিয়েন সিভিলাইজেশন আমাদের উপর হামলা করে দেয় তাহলে আমরা কিছুই করতে পারবো না।

একটি চ্যানেলে দেয়া ইন্টারভিউতে প্রোফেসর মিসিও কাকু বলেন, আমরা হলিউড মুভিতে দেখে থাকি যখন কোনো এলিয়েন সিভিলাইজেশন আমাদের পৃথিবীর ওপরে হামলা করে তখনই আমরা খুব সাহসিকতার সাথে তার মোকাবেলা করি এবং কোন সিক্রেট ওয়াপোন দারা তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু বাস্তবে এমনটা কোনো দিনই হবে না। যদি কোনো এডভান্স সিভিলাইজেশন পৃথিবীতে হামলা করে তাহলে আমাদের কাছে এমন কোনো এডভান্স টেকনোলজি নেই যার সাহায্যে আমরা তার মোকাবেলা করতে পারি।

পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত নিউক্লিয়ার হাতিয়ারকেই সব থেকে শক্তিশালী হাতিয়ার মনে করা হয়, যা ঐ সমস্ত এলে সভ্যতার কাছে খুবই ছোট্ট একটি জিনিস হবে। প্রোফেসর স্টিফেন হকিং এর সম্পর্কে বলেছেন, আমরা পৃথিবী থেকে অনেক মেসেজ সিগন্যাল এলিয়েনদের উদ্দেশে পাঠিয়েছি আর একদিন এমন হবে যেদিন তারা আমাদের এই সিগন্যালকে রিসিভ করবে এবং তারা আমাদের পৃথিবীতে চলে আসবে। তারা এতটাই অ্যাডভান্স হবে যে তারা হাজারও আলোকবর্ষের দূরত্বকে খুব অল্প সময়েই পাড়ি দিতে সক্ষম হবে। আর এই সমস্ত এলিয়েন সিভিলাইজেশনের কাছে আমরা কোনো ব্যাকটেরিয়ার সমতুল্য ছাড়া আর কিছুই হব না।

এই সিভিলাইজেশন বা সভ্যতা আসার পর পৃথিবীর অবস্থা এমনটাই হবে যেমনটা কলম্বাস অ্যামেরিকাতে যাওয়ার পরে ন্যাটিভ অ্যামেরিকানদের সাথে হয়েছিল। স্টিফেন হকিং এর মতে এলিয়েন সিভিলাইজেশন পৃথিবীর ওপরে হামলা করতে পারে এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদগুলো নিজেদের দখলে নিতে পারে। এই মহাবিশ্বে অনেক এডভান্স সিভিলাইজেশন আছে আর আমাদের তাদের সাথে যোগাযোগ করা উচিৎ হবে না। কিন্তু এটা বুঝার অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। আমরা প্রায় এক দশক থেকে সিগন্যাল পাঠিয়ে আসছি এখন ওই দিন আর বেশি দূরে নেই, যেদিন কোনো সভ্যতা আমাদের এই পৃথিবীতে চলে আসবে। এখন বাকিটা দেখার বিষয় যে তারা আমাদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরন করে নাকি শত্রু সুলভ আচরন করে।