• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

‘আমার মা, বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসেবেই চলে গেছেন’

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৯ আগস্ট ২০২০  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- আমার মা, তিনি তো জীবন ভিক্ষা চাননি। তিনি নিজে বাঁচতে চাননি। তিনি সাহসের সঙ্গে বলেছিলেন- ‘আমার স্বামীকে হত্যা করেছ, আমি তার কাছেই যাব।’ সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়। আমার মা আমার বাবার একজন উপযুক্ত সাথী হিসেবেই চলে গেছেন।

শনিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া এর চেয়ে বড় আর কিছু হয় না। আমার মা সেই দৃষ্টান্তই দেখিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা আরও বলেন, মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব ছিলেন বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর এবং বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সহযোদ্ধা।

বঙ্গমাতা সংসার সামলে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করতেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি কাজে আমার মাকে দেখেছি বাবার পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন। কখনও সংসারের কোনো সমস্যা নিয়ে বিরক্ত করেননি, বলেনওনি। বাবা তো বেশির ভাগ সময়ই কারাগারে থাকতেন। একটানা দুই বছর তিনি কারাগারের বাইরে থাকেননি। কিন্তু মা কারাগারে দেখা করতে গেলে নিজেই বলতেন, ‘চিন্তার কিছু নেই’।

তিনি আরও বলেন, সবকিছু তিনি নিজেই দেখতেন। আমাদের মানুষ করার দায়িত্ব মায়ের হাতেই ছিল। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ প্রতিটি সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। নির্দেশনা দেয়া বা বাইরের অবস্থা জেলখানায় থাকা আব্বাকে জানানো, বাবার নির্দেশনা নিয়ে এসে সেগুলো পৌঁছে দেয়া- এই কাজগুলো তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গে করতেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন- আমার মা, নিজে কোনো দিন কিছু চাননি। সব সময় তিনি দিয়ে গেছেন। গণভবনে বা সরকারি বাসভবনে থাকেননি। না থাকার কারণটা হচ্ছে, তিনি বলতেন আমার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সরকারি বাসভবন বা শানশওকতে থাকব না। তারা বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হোক, সেটা আমি চাই না। বিলাসিতায় আমরা যেন গা না ভাসাই, সেটার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি সব সময় আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার কর্মময় জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন এবং গোপালগঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। বঙ্গমাতার জন্মদিন উপলক্ষে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী একশ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ল্যাপটপ, দরিদ্র, অসহায় নারীদের মধ্যে ৩২০০ সেলাই মেশিন এবং ১৩০০ দরিদ্র নারীকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই হাজার টাকা করে প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া গোপালগঞ্জ প্রান্তে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

প্রসঙ্গত, ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ সপরিবারের নিহত হন তিনি।