• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ঈদ আনন্দের ঈদ রহমতের

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৫ জুন ২০১৯  

অনাবিল শান্তি ও অবারিত আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদের এক ফালি চাঁদ পশ্চিম দিগন্তে ভেসে ওঠে, তখন সর্বশ্রেণির মানুষের হৃদয়-গহিনে বয়ে যায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসের মৃদু দোলা। ঈদ বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বড় নেয়ামত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘প্রিয় নবী (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আগমন করে দেখলেন, মদিনাবাসী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে দুইটি দিবস উদযাপন করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুইটি কীসের দিবস? তারা বললেন, এ দুই দিবসে জাহেলি যুগে আমরা খেলাধুলার করে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য এর থেকে উত্তম দুইটি দিবসের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। একটি হল, ঈদুল আজাহা এবং অপরটি হল, ঈদুল ফিতর।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং: ৯৫৯)

php glass
‘ঈদ’ শব্দের আরবি শব্দমূল ‘আউদ’। ঈদ অর্থ যা ফিরে ফিরে আসে। ‘ফিতর’ শব্দের অর্থ ভেঙে দেওয়া বা ইফতার (নাস্তা) করা। ঈদুল ফিতর মানে সে আনন্দঘন উৎসব; যা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে। আসে সুশৃঙ্খল আচার-আচরণের তীর ঘেঁষে। নৈতিক, আত্মিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির সীমানা পেরিয়ে সামষ্টিক কল্যাণ নিয়ে ঈদ আসে। ঈদ আসে কৃচ্ছ্র ও শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে। তাকওয়ার (আল্লাহভীতি) শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন জীবনে ফেরার অঙ্গীকার নিয়ে ঈদ আসে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত এবং অফুরন্ত কল্যাণের আরক ছড়িয়ে ঈদ আসে। ঈদ আসে শত্রুতা ও দ্বেষের প্রাচীর ডিঙিয়ে বন্ধুত্ব ও মিতালির হাত বাড়িয়ে। ঈদ আসে মহামিলনের মহোৎসবের আবেশে মনকে মথিত করতে। পরিশোধিত হৃদয়ে পরিতৃপ্তির ছোঁয়া ও ‘আবে হায়াত’র স্নিগ্ধতা দিতে।

ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য একই সঙ্গে আনন্দোৎসব ও ইবাদত। এ আনন্দ আল্লাহর রহমত ও ক্ষমাপ্রাপ্তির, জাহান্নাম থেকে মুক্তির। এ আনন্দ সিয়াম-কিয়ামের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার। এ আনন্দে কোনো অশ্লীলতা ও পাপ-পঙ্কিলতা নেই। এ আনন্দে কেবলই সওয়াব ও পুণ্যের দ্যূতি। এ আলোক-দ্যূতি ও আনন্দ ক্রমান্বয়ে সঞ্চারিত হয় হৃদয় থেকে হৃদয়ে। শিশু-কিশোর ও আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা—সবার দেহ-মানসে লাগে ঈদ-আনন্দের ছোঁয়া।

আমাদের সামান্য সহযোগিতা এবং কিছু টাকা, কিছু নতুন কাপড় পেয়ে হতদরিদ্র, এতিম-দুস্থ, নিঃস্ব-অসহায় ও বেশুমার ছিন্নমূল মানুষের মুখে ফোটে হাসির রেখা। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরাও এ আনন্দে মেতে ওঠেন সমান রূপে। ঈদ উপলক্ষে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা তারাও ভোগ করেন। আর এভাবেই ঈদ সর্বজনীন ও সবার হয়ে ওঠে।

সুখবর পেলেই মানুষ আনন্দিত হয়। এক মাস রোজার সাধনার পর ঈদের পবিত্র এই দিনে পুরস্কার হিসেবে ক্ষমা প্রাপ্তিই সেই আনন্দের কারণ। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা ঈদের দিন ফেরেশতাদের মধ্যে রোজাদারদের নিয়ে গর্ব করে বলেন, ‘হে ফেরেশতারা, আমার কর্তব্যপরায়ণ প্রেমিক বান্দার বিনিময় কী হতে পারে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘হে প্রভু পুণ্যরূপে পুরস্কার দান করাই তো তার প্রতিদান।’ আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব (রোজা) পালন করেছে। অতঃপর দোয়া করতে করতে ঈদগাহে গমন করেছে। সুতরাং আমার মর্যাদা, সম্মান, দয়া ও বড়ত্বের কসম! আমি তাদের দোয়া কবুল করব এবং তাদের মাফ করে দেব।’ (বায়হাকি: ৩/৩৪৩)

ইসলাম বিনোদনকে সমর্থন করে। সুস্থ বিনোদনের কখনো বিরোধিতা করে না। কিন্তু অশ্লীলতাকে মোটেও প্রশ্রয় দেয় না। ইসলামের উৎসবে ঢোল-তবলা ও গান-বাজনা নেই। বিনোদনের নামে অসামাজিকতা ও নগ্নতা নেই।

ইসলামে নারী-পুরুষের একসঙ্গে অবাধ বিচরণ নিষিদ্ধ। মুমিনের ঈদ-আনন্দ উত্তম পোশাক গায়ে দেওয়া, ঈদের দিন মিষ্টিমুখ করা, সদকাতুল ফিতর আদায়, গরিব-দুস্থ ও অসহায়ের সহযোগিতা-সেবা, অন্যের মুখে হাসি ফোটানো এবং ঈদের নামাজ আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

আনন্দ-উৎসবের সঙ্গে মানুষের অভিরুচি ও চাহিদার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদের উৎসব ও আমাদের উৎসবের মধ্যে পার্থক্য বৃহদাকারের। মুসলমানদের আনন্দ-উৎসব অপসংস্কৃতি ও প্রথাজনিত কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। উৎসব বরণের নামে অনাচার, পাপাচার, অসামাজিক কার্যকলাপ ও নৈতিকতাবিবর্জিত-বল্গাহীন কাজকর্ম ও অযথা আড়ম্বরতা ইসলাম সমর্থন করে না।

তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আবার বৈধ ও নির্দোষ আনন্দ-ফুর্তি, শরীরচর্চামূলক খেলাধুলা, নৈতিক মূল্যবোধ ও ঈমানি ব্যঞ্জনাসমৃদ্ধ শিল্প-সংগীত এগুলোও ঈদের দিনের বৈধ আনুষ্ঠানিকতার বাইরে নয়। ইসলাম এগুলোকে পূর্ণ সমর্থন করে।

আয়েশা (রা.) বলেন, ঈদের দিন হাবশিরা খেলা করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) ক্রীড়ারত হাবশিদের উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন, ‘ছেলেরা, খেলে যাও! ইহুদিরা জানুক যে আমাদের ধর্মে প্রশস্ততা-উদারতা আছে। আমাকে প্রশস্ত দ্বীনে হানিফসহ প্রেরণ করা হয়েছে।’ (বুখারি: ১/১৭৩, মুসলিম: ২/৬০৮)