• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

এক নজরে বছরজুড়ে সমালোচিত ‘গুজব’

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯  

আওয়ামী লীগ সরকারের কল্যাণে বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত উন্নয়নের বাংলাদেশ। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন থেকে শুরু করে ডিজিটালাইজেশন, সবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। তবে চলতি বছরে গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে সৃষ্টি করা হয় ব্যাপক অস্থিরতা। তীব্র সমালোচিত হয় অপপ্রচারগুলো। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসে রহস্য। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নানা গুজব রটিয়ে দেশে সৃষ্টি করতে চেয়েছিল অস্থিতিশীল পরিবেশ।

এক নজরে দেখে নেয়া যাক ২০১৯ সালে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা গুজবগুলো-

পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে-
চলতি বছরের শুরুর দিকে পদ্মা সেতু তৈরিতে মানুষের মাথা লাগবে গুজব ছড়িয়ে সারা দেশে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় রাজধানীর উত্তর বাড্ডার একটি স্কুলে ‘ছেলে ধরা’ গুজবে তাসলিমা বেগম রেণু নামে এক নিরপরাধ নারীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। 

রেণু স্কুলে গিয়েছিলেন নিজের শিশুকন্যা তুবার ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে। শুধু নিরপরাধ এই নারীই নন, একইভাবে গুজব রটিয়ে ছেলে ধরা সন্দেহে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় আরো অর্ধশতাধিক মানুষকে। 

লবণ পাওয়া যাবে না-
বছরের শেষের দিকে এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পেঁয়াজের মতো লবণও আক্রান্ত হয়ে যাবে- এমন গুজবে নাকাল হয় মানুষ। লবণ পাওয়া যাবে না- এমন গুজবে অনেক এলাকায় মানুষ বেশি বেশি লবণ কিনতে শুরু করে। এতে মুহূর্তেই দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়, অনেক স্থানে দেখা দেয় কৃত্রিম লবণ সংকট। 

পরিস্থিতি হঠাৎ এতটাই নাজুক হয়ে ওঠে যে গুজব রোধে সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট দফতর মাঠপর্যায়ে ব্যাপক অনুসন্ধান শুরু করে। 

সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, লবণের কোনো সংকট নেই। লবণ ব্যবসায়ী সমিতির নেতারাও রীতিমতো ব্যানার-হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে জানান দেন, দেশে লবণের কোনো সংকট বাস্তবে নেই এবং তাদের হাতে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। গুজবজনিত অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়ে খোলা হয় কন্ট্রোল রুম।

‘ছেলেধরা’ ও ‘লবণ সংকট’ ছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুসহ রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গুজব ছড়ানো হয়। 

ধর্ম অবমাননার গুজব ও অপপ্রচার-
সেই সঙ্গে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাত- হাঙ্গামা, সড়ক পরিবহন আইনে মৃত্যুদণ্ডের অপপ্রচার রটিয়ে ধর্মঘটসহ একের পর এক কাণ্ডের অবতারণা করা হয়। 

এসব ঘটনাকে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা ও অশুভ শক্তির কারসাজি হিসেবে দেখছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা। 

পুলিশ সদর দফতর ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো গণপিটুনির শিকার ব্যক্তিদের পরিচয় পর্যালোচনা করে জানতে পেরেছে- নিহতদের বেশির ভাগ বৃদ্ধাসহ বিভিন্ন বয়সী নারী, মানসিক রোগী, প্রতিবন্ধী এবং নিরীহ মানুষ।

গুজবের কারণে সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ড দেশকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। দীর্ঘ তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  জানতে পেরেছে, গুজব ছড়িয়ে হত্যা ও লবণ সংকট সৃষ্টির নেপথ্যে সংশ্লিষ্ট স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। মূলত সরকারকে বিপাকে ফেলে নিজেদের ঘৃণ্য স্বার্থ হাসিল করতেই তারা সারা দেশে একের পর এক গুজব ছড়ায়। এসব ঘটনায় দেশ ও জনগণের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

একপর্যায়ে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে গুজবরোধে সারা দেশে তৎপর করা হন ৬১ লাখ আনসার সদস্যকে। সেই সঙ্গে সতর্ক ছিল সরকারের অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। 

এ সময় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ৬০টি ফেসবুক আইডি, ২৫টি ইউটিউব লিংক ও ১০টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হয়। 

গুজবকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের সাত মাসে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় ৪০টি মামলা হলেও তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। 

এমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে জুমার নামাজের খুতবায় এ বিষয়ে বলার জন্য সারা দেশের মসজিদের ইমামদের অনুরোধ করা হয়। 

অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতেও এ ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারণার অনুরোধ করা হয়। গুজববিরোধী সচেতনতা সপ্তাহ পালন করার ঘোষণাও দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী।

এ প্রসঙ্গে আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, উন্নয়নের অগ্রগতি রুখতে স্বার্থান্বেষী মহল ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর পথ বেছে নিয়েছে।

গুজবকাণ্ড সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যারা পদ্মা সেতু তৈরিতে মাথা লাগবে বলে গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে, লবণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ায় তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শক্র। তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। 

‘এরইমধ্যে যাদের চিহ্নিত করা গেছে তাদের গ্রেফতারও করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও গুজবের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’