• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

‘ক্রীড়াঙ্গনে আরো ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখি’

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৮  

বিপিএল-বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। ২০১২ সালে চালু হয় ক্রিকেটের জনপ্রিয় এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃত পেশাদার টি-টোয়েন্টি লীগ।

যে ক’জনের হাত ধরে আইপিলের আদলে করা বিপিএলের যাত্রা, তাদের মধ্যে অন্যতম মুশফিকুর রহমান মোহন। তিন উদ্যোক্তার মধ্যে তিনি একজন।

চালুর অল্প কদিনের মধ্যে বিপিএলের জনপ্রিয়তা ছড়ায় ক্রিকেট বিশ্বে। দেশ-বিদেশে বিপিএল সম্পর্কে জানে না এমন মানুষ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু কি ভাবে এলো বিপিএল, সেই গল্প শুনবো স্বপ্নদ্রষ্টা মুশফিকুর রহমান মোহনের কাছ থেকে।

বিপিএল ছাড়াও মোহন একাধারে বাংলাদেশ ব্রিজ ফেডারেশনের সভাপতি ও বাংলাদেশে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

 

1.‘ক্রীড়াঙ্গনে আরো ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখি’

প্রতিবেদক : আপনি কেমন আছেন?

মোহন : আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহ ভালো রেখেছে।

প্রতিবেদক : ক্রীড়ার সঙ্গে আপনি অনেকদিনই সংশ্লিষ্ট এই শুরুটা কবে?

মোহন : ক্রীড়ার সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা হয় জন্মের পর থেকেই। এটা কেউ ধরে রাখে আর কেউ ছেড়ে দেয়। আমি ছোট বেলা থেকে শুরু করেছি আর ছাড়তে পারেনি।

প্রতিবেদক : আপনি কি শুধু ক্রীড়া সংগঠক নাকি খেলোয়াড়ও?

মোহন : আমি আগে খেলোয়াড় তার পরে ক্রীড়া সংগঠক। আমি দাবা খেলতাম। আমি ব্রিজও খেলতাম। আমি মূলত ব্রিজ খেলোয়াড়। তারপর একজন সংগঠক।

 

2.‘ক্রীড়াঙ্গনে আরো ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখি’

প্রতিবেদক : ব্রিজ খেলাটা শুরু কবে থেকে?

মোহন : আমি আমেরিকান ক্লাবে খেলতাম। কিন্তু আমি যখন ক্লাস ৯-১০ম শ্রেণিতে পড়ি তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্লাবে ড. খোশ মোহম্মদ স্যারের সঙ্গে ঢাবির ভিসি স্যারের বিপক্ষে ব্রিজ খেলি। ওই সময়টাই ব্রিজের আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু বলা যায়।

প্রতিবেদক : খেলা আর ফেডারেশনের সভাপতি বাদে ব্রিজের অন্য কোন দায়িত্ব পালন করেন?

মোহন : যেহেতু আমি ব্রিজ খেলোয়াড় ছিলাম তাই এটা আমার ভালোবাসা। আমি গত ব্রিজ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলাম। আর আমি গত ত্রিশ বছরের উপর বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্র দূতের সঙ্গে ব্রিজ খেলি। যারা ব্রিজ খেলতে পছন্দ করে। আর তাই কূটনৈতিক মহলে আমার একটা অন্য রকম সম্পর্ক বিদ্যমান।

প্রতিবেদক : ব্রিজ ছাড়া অন্য কোনো খেলা বা ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত আছেন বা ছিলেন?

মোহন : আমি দাবার সঙ্গে ছিলাম, স্কটিশ ফেডারেশনের সভাপতি ছিলাম পাঁচ বছর। আর এখন চার বছর ধরে ব্রিজ ফেডারেশনের সভাপতি আছি।

 

3.‘ক্রীড়াঙ্গনে আরো ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখি’

প্রতিবেদক : বিপিএলের পরিকল্পনাটা কিভাবে আপনার মাথায় এলো?

মোহন : আমি ক্রীড়াপ্রেমি। সবসময় নতুন কিছু করতে চাই। আর করতে চেষ্টা করি। ঠিক তেমনই ভাবে বিপিএলটা শুরু। আইপিএল দেখেই মূলত আমার মাথায় বিপিএলের চিন্তা আসে। আর আমার অফিসে বসেই আমি বিসিবির সাবেক ডিরেক্টর আলম ভাই ও মুন্না ভাই বিপিএলের চিন্তা করি।

প্রতিবেদক : কি উদ্দেশ্যে বিপিএল চালু করেন?

মোহন : আমি তিনটা উদ্দেশ্য মাথায় নিয়েই এটা শুরু করেছিলাম। প্রথমত ক্রিকেটকে প্রতিটা উপজেলায় ছড়িয়ে দিতে। যেমন যে বিভাগের খেলা সেই বিভাগে হবে। কিন্তু আমি তা পারিনি। আর একটা উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সাধারণ খেলোয়াড়দের পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া। অন্য একটা উদ্দেশ্য ছিল বড় বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেললে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের স্কিল আরো বাড়বে। আমার পরের দুইটা উদ্দেশ্য সফল। ব্রড কাস্টিংয়ের জন্য প্রথম উদ্দেশ্যটা সফল হয়নি।

প্রতিবেদক : আপনি প্রথম আসরে দুরন্ত রাজশাহীর মালিক ছিলেন এতে আপনার প্রাপ্তি কি?

মোহন : সংগঠক কখনো টিম কিনে না। পরিস্থিতির কারণে আমাকে কিনতে হয়েছিল। আজকে বাংলাদেশ দলের তাইজুলকে আমি নাটোর থেকে নিয়ে এসেছিলাম দুরন্ত রাজশাহীর জন্য। ইংল্যান্ডের মঈন আলীও এই দুরন্ত রাজশাহীতে খেলেছিল। তার শুরুটা বলা যায়।

প্রতিবেদক : আপনি ক্রীড়া সংগঠক তার পাশাপাশি আপনি একজন রাজনীতিবিদ। রাজিনীতিতে শুরুটা কবে থেকে?

মোহন : এটা সেই ছোটবেলা থেকেই। আমি মূলত বঙ্গবন্ধুর হত্যা নিয়ে অনেক ভাবতাম। আর এই ভাবনা থেকেই আমার ভালোবাসাটা শুরু। আর ভালোবাসা থেকে কখন রাজনীতিতে চলে এসেছি বুঝিনি। অনেক চড়াই উতড়াইয়ের মধ্য থেকে ৩০ বছরের ও বেশি পার করে ফেললাম বুঝিনি।

 

4.‘ক্রীড়াঙ্গনে আরো ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখি’

প্রতিবেদক : কার হাত ধরে রাজনীতিতে?

মোহন : আমি কারো হাত ধরে রাজনীতিতে আসিনি। আমি ভালোবাসা থেকে এসেছি। গোড়ানে ঝালাই দোকানদার ছিল আলম। সে মূর্খ কিন্তু আওয়ামী লীগের অন্ধ ভক্ত ছিল। ৭৫-৮১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুর্দিনে তার নেতৃত্বে মিছিল করতাম। তখন পরিস্থিতি এমন ছিল, যে পকেটে ঠিকানা লিখে মিছিলে যেতে হতো। যদি মরে যাই লাশটা শনাক্ত করা যাবে।

প্রতিবেদক : রাজনীতিতে এখন পরিকল্পনা কি আপনার?

মোহন : আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িত। একটা নির্দিষ্ট সময় পর সবাই যেটা চাই আমিও তাই চাই। আমি আমার এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। আর তাই সিরাজগঞ্জ-৫ চৌহালি-বেলকুচি আসনে এমপি নির্বাচন করতে চাই। তবে তা দলের পক্ষে।

প্রতিবেদক : আপনার কি মনে হয় দল নমিনেশন দেবে, আর যদি না দেয় তাও কি নির্বাচন করবেন?

মোহন : আমি আশা করি দল আমাকে নমিনেশন দেবে। আর যদি না দেয় তা হলে আমি নির্বচন করবো না। যাকে দেবে তার সঙ্গেই দলের জন্য কাজ করবো। আমি গত নির্বাচনে তা প্রমাণ দিয়েছি।

প্রতিবেদক : আপনার ব্যাপারে এলাকার মানুষের চিন্তা-ভাবনা কি?

মোহন : এলাকার মানুষ বরাবরই আমার সঙ্গে আছে। বিশেষ করে আমাদের যুব সমাজ আমাকে পছন্দ করে। আমার সঙ্গে কাজ করে। স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ সাধারণ মানুষ সবাই সঙ্গে আছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে চাই।

প্রতিবেদক : নির্বাচিত হতে পারলে এলাকার জন্য কি কি করতে চান?

মোহন : আমি বেশি কিছু বলবো না। আমি নদী ভাঙন রুখতে চাই। আর এলাকার মানুষের বেকারত্ব দূর করতে সচেষ্ট থাকবো। খেলাধুলার মাধ্যমে যুব সমাজকে চাঙ্গা রাখতে চাই। এতে করে মাদক নির্মূল হবে বলেও আমার বিশ্বাস।

প্রতিবেদক : আপনাকে দেশের অন্য যে কোনো জায়গা থেকে নমিনেশন দিলে নির্বাচন করবেন?

মোহন : না। আমার জন্ম স্থান ছাড়া অন্য কোথাও নির্বাচন করবো না। আমার যা আছে সব আমি এলাকার মানুষকে দিতে চাই।

 

5.‘ক্রীড়াঙ্গনে আরো ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখি’

প্রতিবেদক : আপনি ক্রীড়া সংগঠক, রাজনীতিবিদ আবার লেখকও। লেখালেখি সম্পর্কে কিছু বলেন।

মোহন : আমি ছোটবেলা থেকেই লিখতাম। ঢাকা এসে তা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ঢাকা শহরের জ্যাম আমার কলমকে আবার সচল করেছে। জ্যামে বসে না থেকে লেখালেখি করায় ভালো।

প্রতিবেদক : আপনার কয়টা বই বের হয়েছে?

মোহন : আমার চারটা বই বের হয়েছে, তিনটা কবিতা ও একটা উপন্যাস।

প্রতিবেদক : রাজনীতি নিয়ে কোনো বই লেখার ইচ্ছা আছে?

মোহন : হুম আছে এবং আমি লিখতেছি। কিন্তু তা প্রকাশ করবো আমার অবসর জীবনে গিয়ে।

প্রতিবেদক : দেশবাসীকে আপনি কোনো বার্তা দিতে চান?

মোহন : আমি নীলফামারি বার্তার মাধ্যমে দেশবাসীকে বলতে চাই, “আপনারা একবার চিন্তা করেন, কি অপরাধ ছিল বঙ্গবন্ধুর? কি অপরাধ ছিল তার পরিবারের, আত্মীয় স্বজনের। যদি বঙ্গবন্ধু অন্যায় করে শুধু তাকে হত্যা নয় কেনো। কেনো তার বংশের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো? এর মূল কারণটা খোঁজ করুণ। পাকিস্তানের প্রেত্মাত্বা, স্বাধীনতার বিরোধী পক্ষ তারা চায় না বাংলাদেশের নাম থাকুক। তাই এই হত্যাযজ্ঞ। কিন্তু তারা জানত না বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ।

প্রতিবেদক: নীলফামারি বার্তাকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মোহন: নীলফামারি বার্তাকেও ধন্যবাদ।