• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ক্ষমাঃ একটি নবুয়তি চরিত্রের মহৎ গুণ

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ২২ আগস্ট ২০১৯  

আদর্শ ও মহৎ চরিত্রের অন্যতম উপাদান ‘ক্ষমা’। একটি আদর্শ ও মহৎ চরিত্রভাবনা কল্পনা করলে সবচে প্রথম যে বিষয়গুলো আসে তার অন্যতম হলো ক্ষমা। 

মহান আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলির অন্যতম একটি গুণ হলো ক্ষমাশীলতা। আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন ভঙ্গিতে তার ‘ক্ষমা’ গুণটির কথা বর্ণনা করেছেন। 

সূরা বাকারার ৭৩ নম্বর আয়াতে,

إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

তরজমা : ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’

শুধু এক স্থানে এই ক্ষমার আলোচনা করেননি বা ‘ক্ষমা’ নামক মহৎ গুণের কথা বলেননি। আল্লাহ তায়ালা নিজের গুণ ক্ষমার উল্লেখের সঙ্গে সঙ্গে নবীজিকে (সা.) এই গুণের আদেশ দিয়েছেন এবং জোর তাগিদের সঙ্গে দিয়েছেন।  

আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন,
 
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ

তরজমা : ‘আপনি ক্ষমা করতে থাকুন আর ভালো ভালো কাজের আদেশ দিতে থাকুন। আর মূর্খদের (সঙ্গে অর্থহীন তর্কবিতর্ক) এড়িয়ে চলুন’ (সূরা আরাফ : আয়াত নম্বর ১৯৯)।

উক্ত আয়াত প্রসঙ্গে একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক প্রশ্নের জবাবে হজরত জিবরাইল (আ.) বলেন, যে কেউ আপনাকে অত্যাচার করলে তাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। যে লোক আপনাকে কিছু দেয়া থেকে বিরত করে তাকে আপনি দান করুন। আর যে লোক আপনার সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আপনি তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করুর।

সমাজে ওই ব্যক্তিকেই মহৎগুণের অধিকারী বলা হয়, যার মধ্যে ‘ক্ষমা’ করার সৌজন্যতা আছে। ক্ষমা না করে প্রতিশোধ নিয়ে নেয়ার দ্বারা অধিকাংশ সময় বিষয় ফায়সালা হয় না। একটি নষ্ট আচরণ বা অন্যায় দূর করতে রাগ, ক্রোধ, কঠোর আচরণ, কড়া মেজাজ ও প্রতিশোধ পরায়ণতা যতটুকু কাজে আসে, তার থেকে শতগুণ বেশি কাজে আসে ক্ষমা করার দ্বারা। 

ইতিহাস থেকেই উদারহণ দিই। মক্কাবিজয়ের কথা আমরা সকলেই জানি। কী ঘটেছিল ওইদিন? মক্কার কাফেরদের ভেতরে শুরু হয়ে গেছে ভয়ানক ঝড়-ঝঞ্ঝা যে, আজকে কারো ক্ষমা নেই, মুহাম্মাদের হাতেই আজ আমাদের মরতে হবে। কিন্তু তিনি কী সিদ্ধান্ত নিলেন! শুধু মক্কার কাফের বেঈমানগোষ্ঠী নয়, পুরো পৃথিবী অবাক হয়ে গেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই ক্ষমার ঘোষণায়। তিনি ঘোষণা করলেন, আজ আমি তোমাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে আসিনি, তোমাদের সকলকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। আজ কারো পাপ নেই, অপরাধ নেই। ক্ষমার আওয়াজ যখন মক্কার আকাশে আলোড়ন তুললো খোদ কাফের বেঈমানগোষ্ঠীই হতবাক। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এইভাবে- তিনি তাদেরকে বললেন:

يا معشر قريش: ما تظنون أني فاعل بكم ؟ قالوا أخ كريم، ابن أخ كريم، قال: فاذهبوا فأنتم الطلقاء،

‘হে কুরাইশগণ! তোমাদের সঙ্গে এখন আমার আচরণের ধরন সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী? তারা বলল : আপনি উদার ও ক্ষমাশীলের ভাই ও উদার ও ক্ষমাশীল ভাইয়ের ছেলে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন ‘যাও, তোমরা মুক্ত।’ তিনি তাঁর ও সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে করা সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন।

হাদিসের আলোকপাতায় ক্ষমার গুরুত্ব আদেশ ফজিলতের বিশাল বর্ণনা এসেছে। ক্ষমার মহত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসূল (সা.) ঘোষণা করছেন,

وعن أبي هُريرة : أَنَّ رسولَ اللَّه ﷺ قَالَ: وَمَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلَّا عِزًّا، وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ للَّهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللَّهُ ، 

অর্থাৎ: ‘দানে সম্পদ কমে না, (বরং দানের মাধ্যমে আল্লাহ সম্পদ বাড়িয়ে দেয়) ক্ষমা বান্দার সম্মান বাড়িয়ে দেয়, আর আল্লাহর সন্তুষ্ঠির জন্য যে ব্যক্তি নরম আচরণ করে (নিজেকে ছোট করে) আল্লাহ তাকে উচ্চ আসন দান করে’।
 
وَلاَ يَعْفُو عَبْدٌ عَنْ مَظْلَمَةٍ إِلاَّ زَادَهُ اللَّهُ بِهَا عِزًّا يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থাৎ: ‘যে বান্দা অত্যাচারিত হয়েও জালিমকে ক্ষমা করে দেয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সম্মানিত করবেন’। 

আমাদের সমাজের অবস্থা কী? কেউ কোনোভাবে কারো ওপর কর্তৃত্বশীল হলে; তার অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যায়। সে যেন হয়ে যায় আসমানের তারকা, তার কর্মচারী ও অধীনস্থদের ভুলের কোনো ক্ষমা করে না। মালিকরা মনে করে কর্মচারীগণ তার কেনা গোলাম; তাই তার অন্যায় বা ভুলকে ক্ষমা করে না, ক্ষমা করলে তা মালিকানার সম্মান নষ্ট হয়ে যায়। এমন ভাবে ওস্তাদরাও ছাত্রদের ভুলগুলো ক্ষমার করতে পারে না। ছাত্রদের সঙ্গে যা তা ব্যবহার শুরু করে। সমাজের সর্বক্ষেত্রে এই প্রবণতা দেখা যায় যে, ভুলের কোনো ক্ষমা নেই। আর এই ‘ক্ষমা নেই’ এর প্রভাব থেকে দুষ্ট চিন্তার উদ্ভব ঘটে। যার ফলে সমাজে অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম দেয়।

আসুন! নিজেরা ক্ষমার গুণ অর্জন। ক্ষমার বার্তার পৌঁছে দিই সমাজের মাঝে। আল্লাহ যে কোরআনের বারবার নিজেকে ঘোষণা করেছেন ক্ষমাশীল ও ক্ষমাপরায়ণ, সেই মহান গুণের অধিকারী নিজেরা হই। ক্ষমার সৌরভে ভরে যাক আমাদের সমাজ ও আশপাশ। এই আশাবাদ ব্যক্ত করে এখানেই প্রবন্ধের ইতি টানছি।