• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ডেঙ্গু চিকিৎসা সেবায় রোল মডেল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০১৯  

ডেঙ্গু সনাক্ত করতে ব্যয় এক হাজার টাকার বেশি হলেও তা বিনামূল্যে করার ঘোষণা দিয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদের এমন উদ্যোগ ব্যাপক সারা ফেলেছে ও প্রশংসিত হয়েছে।

জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২০৩ জন এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন, যাদের  প্রায় সকলের বিপরীতেই  বিনামূল্যে ডেঙ্গু জ্বরের সব এন্টিজেন পরীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়াও বুধবার পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে প্রায় ৩৫ জন বিনামূল্যে এই হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়েছেন। তবে তাদের ডেঙ্গু ধরা পড়েনি।

মমেকে হাসপাতালে আলাদা কোনো ওয়ার্ড না থাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে নারীদের ১১, ১২ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে এবং পুরুষদের ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সকল ডেঙ্গু রোগীদের  সব ধরনের পরীক্ষা হাসপাতালে বিনামূল্যে করার পাশাপাশি তাদেরকে বিনামূল্যে মশারিও সরবরাহ করা হচ্ছে।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সেবার মান, নিয়ম শৃঙ্খলা, উন্নয়ন, হাসপাতালে ডাক্তারদের উপস্থিতি সার্বিক দিক বিবেচনা করে ২০১৮ সালে দেশের সেরা হাসপাতাল হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই সাফল্যের সিংহভাগ অবদান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমেদের।

মাত্র কিছুকাল পূর্বেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও দালাল সিন্ডিকেটদের অবাধ বিচরণ স্থল ছিল মমেক হাসপাতাল। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার হাতের ছোঁয়ায় মাত্র সাড়ে তিন বছরে পাল্টে গেছে পুরো চিত্র। দালালদের দৌরাত্ম নির্মূল করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে রোগীবান্ধব একটি হাসপাতালে পরিণত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাছির উদ্দীন আহমদ।

নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা অপরাজনীতি ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি চিকিৎসাসেবায় দেশের প্রথমস্থান লাভ করেছে। গত বছর দেশের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবা নিয়ে জরিপ শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে প্রতিদিন সকালে দেখা যায়, অনেক রোগী আউটডোর থেকে ওষুধের গুদামের দিকে যাচ্ছেন। ওষুধ সংগ্রহের জন্যে। হাসপাতালে সেবা এবং ওষুধের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন এখন এই হাসপাতালের সকল রোগীরা। আউটডোরের দরজায় বড় করে সিটিজেন চার্টার টাঙানো হয়েছে। নাগরিক হিসেবে এই হাসপাতাল থেকে আপনি কি কি সুবিধা পাবেন, তা লেখা রয়েছে ওই চার্টারে। আর ইনডোর রোগীদের জন্য শতভাগ ওষুধ সরবরাহের অঙ্গীকারমূলক নোটিশ ও নিশ্চয়তাও প্রদান করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সালের পহেলা নভেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি এ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ নানামুখী উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন করেন। তার সময়ে সরকারি এ হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে শতভাগ ওষুধ, মানহীন খাবারের পরিবর্তে উন্নত খাবার, দালালদের হাসপাতাল ছাড়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। 

হাসপাতালের অতীত তথ্য থেকে জানা যায়, সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণ, সিন্ডিকেটদের চরম বেপরোয়া কর্মযজ্ঞে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হতেন। ঠিক তখনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপালের পরিচালক হিসেবে যোগ দেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাছির উদ্দিন। অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েই উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার মিশনে নামেন তিনি। প্রথমেই দালালদের হাসপাতাল ছাড়া করেন তিনি। হাসপাতালে কর্মরত বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে কঠোর পরিশ্রম করেন। এই ডিপার্টমেন্ট থেকে সেই ডিপার্টমেন্ট দুর্নীতি অনিয়ম হাতেনাতে ধরতে বিরামহীন দৌড়ঝাঁপ করেছেন তিনি। সাড়ে তিন বছরে সব অপশক্তির সঙ্গে আপসহীন লড়াই করেছেন। এক সময়ের কসাইখানাকে পরিপূর্ণ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলেছেন ক্লিনম্যান খ্যাত এ পরিচালক। অতিরিক্ত রোগীর দুর্ভোগ লাগবে ২৪ ঘণ্টায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করেছেন। এর ফলে ২৪ঘণ্টা সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন রোগীরা।

বাংলাদেশে সব সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উন্নত চিকিৎসাসেবার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। হাসপাতালে সরকার থেকে বরাদ্দকৃত মেডিসিন শতভাগ বিতরণ, সব প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা নামমাত্র মূল্য করাসহ উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়ার ফলে দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

ব্রিগেডিয়ার নাসির বাংলাদেশের অন্য সকল হাসপাতাল পরিচালনার জন্যে এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রদাণের ক্ষেত্রে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন অনেকেই মত পোষণ করেছেন।