• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

পদ্মাসেতুর পিলারের ইতিহাস জানালেন জামিলুর রেজা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২০  

বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এরইমধ্যে এ সেতুর অর্ধেক দৃশ্যমান। স্বপ্নের এ সেতুর কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের।
নদীর তলদেশের উপযুক্ত মাটি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে তাদের। তলদেশে স্বাভাবিক যে মাটি পাওয়ার কথা, সেটি মেলেনি। সেতুর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হলে সংশ্লিষ্টদের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে। এ জন্য গতবছর আটকে যায় ২২টি পিলারের কাজ। 

তবে এই বাধা বিচক্ষণতার সঙ্গে দুর করেছেন প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা। তারা একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করে নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটিকে শক্তিশালী করে পিলার নির্মাণ করেছেন। ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ নামের এই বিরল পদ্ধতিতেই বসানো হয়ছে পদ্মাসেতুর অনেক পিলার, যার ওপর বসেছে সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি।

‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’য়ের মতো বিরল পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসেতুর কাজ, সে বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন পদ্মাসেতুর আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল প্রধান অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী।

তিনি জানান, এরকম পদ্ধতি ব্যবহারের দৃষ্টান্ত বিশ্বে খুব একটা নেই। এ প্রক্রিয়ায় ওপর থেকে পাইলের সঙ্গে স্টিলের পাইপের ছিদ্র দিয়ে কেমিক্যাল নদীর তলদেশে পাঠিয়ে মাটির শক্তি বাড়ানো হয়েছে। এরপর ওই মাটিতে নির্মাণ করা হয়েছে পিলার।

জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণে সবচেয়ে বড় জটিলতা তৈরি হয়েছিল সেতুর পাইল ড্রাইভিং নিয়ে। সেতু নির্মাণের আগে নদীর তলদেশের মাটি সম্পর্কে যে ধারণা করা হয়েছিল, কাজ শুরুর পর সেই ধারণা বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি।

তিনি বলেন, পদ্মাসেতুর নকশা অনুযায়ী কাজ শুরু করতে গিয়ে নদীর প্রধান চ্যানেলে কয়েক জায়গায় ভিন্ন ধরনের মাটি পাওয়া যায়। যা পিলার নির্মাণের উপযোগী নয়। এধরনের মাটিতে পিলার নির্মাণ করলে ভেঙে বা দেবে যেতে পারে। এমন অবস্থায় কাজ করার জন্য দু’টি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত, পাইল নিয়ে যেতে হবে আরো ১৩৩ মিটার গভীরে। আর দ্বিতীয়ত, গভীরতা কমিয়ে পাইলের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে।

জামিলুর রেজা বলেন, প্রথম পদ্ধতিটি সম্ভব ছিল না। কারণ বিশ্বের সর্বোচ্চ শক্তির হ্যামার দিয়ে পদ্মাসেতুতে পাইল ড্রাইভিং করা হচ্ছে। যা দিয়ে আরো ১৩৩ মিটার গভীরে যাওয়া সম্ভব নয়। আরো ১৩০ মিটার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হলে নতুন আরেকটি হ্যামার আনতে হবে এবং সে ধরনের হ্যামার জার্মানিতে তৈরি করে আনতে এক থেকে দেড় বছর লাগবে। এতে পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজে বিলম্ব হতো।

এমন পরিস্থিতিতে পদ্মাসেতুর পিলার বসাতে পাইলিংয়ের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্ধতিটি বেছে নেন বিশেষজ্ঞরা। মাটির এই স্তরে পাইলের সংখ্যা বাড়িয়ে ছয়টি থেকে সাতটি করা হলো। মাঝখানে ভার্টিকাল আরেকটি পাইল বসানোর সিদ্ধান্ত নেন বিশেষজ্ঞরা। এরপরেও এই স্তরে দেখা গেল মাটি দুর্বল। এ পরিস্থিতিতে পাইল সংখ্যাও আর বাড়ানোর সুযোগ ছিল না। তাই ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ পদ্ধতিতে নদীর তলদেশে মাটির গুণগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে তারপর পাইল ড্রাইভিং করা হয়। পাইল ড্রাইভিংয়ের সময় তার পাশে কয়েকটি স্টিলের চ্যানেল দিয়ে বিশেষ কেমিক্যাল সরবরাহ করা হয়, যা আশপাশের মাটিকে শক্তিশালী করে। এমন পদ্ধতির প্রয়োগ বাংলাদেশে এই প্রথম। গোটা বিশ্বেও এই পদ্ধতি প্রয়োগের নজির খুব একটা নেই।

তিনি বলেন, এই পদ্ধতি ব্যবহারের পর আমরা সন্তুষ্ট হয়। ট্রেন বা যানবাহনের চাপ বেশি হলে অথবা ভুমিকম্প হলে সেতুর আর সমস্যা হবে না।

এছাড়া নানা চ্যলেঞ্জ মোকাবিলা করে এই মেগা প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানান জামিলুর রেজা। তিনি বলেন, সেতুর নিচ দিয়ে পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে রিভার ট্রেনিং করতে হয়েছে। সেজন্য বেশি সময় লেগেছে। নদী শাসন করতে লাখ লাখ টন পাথর (জিও ব্যাগ) ফেলা হয়েছে। এটাও অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল।

পদ্মাসেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘স্ক্রিন গ্রাউটিং’ প্রক্রিয়ায় পদ্মাসেতুর মোট ১১টি খুঁটি গড়ে তোলা হচ্ছে। ৩২ নম্বর খুঁটিও রয়েছে এর মধ্যে। এই ৩২ নম্বর খুঁটি ও এর পাশের ৩৩ নম্বর খুঁটির ওপরই গত মঙ্গলবার বসানো হয়েছে সেতুর ২১তম স্প্যান।