• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবহন শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ঠিক হলে দুর্ঘটনা বন্ধ হবে

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০১৯  

পরিবহন শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ও যুগোপযোগী বেতন, বোনাস এবং বিরতি-বিশ্রামের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব হবে না।

রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেন।

এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ বছর ঈদুল আজহায় ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২২৪ জন নিহত ও ৮৬৬ জন যাত্রী আহত হয়েছে। এছাড়া সড়ক,রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ২৪৪টি দুর্ঘটনায় ২৫৩ জন নিহত ও ৯০৮ জন আহত হয়েছেন‌।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিগত ঈদের চেয়ে এবার রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো, নৌ-পথে বেশ কিছু নতুন লঞ্চ যুক্ত হয়েছে, রেলপথেও বেশ কয়েক জোড়া নতুন রেল ও বগি সংযুক্ত হলেও ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, ভোগান্তি, রেলপথে শিডিউল বিপর্যয় ও টিকিট কালোবাজারী, ফেরি পারাপারে ভোগান্তিসহ নানা কারণে যাত্রীহয়রানি বেড়েছে। 

তিনি আরো বলেন, বিগত ঈদুল ফিতরের ন্যায় এবার লম্বা ছুটি থাকায় যাত্রীসাধারণকে আগেভাগে বাড়ি পাঠানোর সুযোগ কাজে লাগানো গেলে ঈদযাত্রা আরো স্বস্তিদায়ক হতো। রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতিসহ সার্বিক পরিকল্পনা ও বিগত ২০১৬ সাল থেকে ঈদযাত্রায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির ধারাবাহিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনগুলো গণমাধ্যম ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে কাজে লাগানোর কারণে এবারের ঈদে বিগত বছরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ৬.৪০শতাংশ, নিহত ৬.২৫শতাংশ ও আহত ১.৫০শতাংশ কমেছে। 

এ বছর মোট সংঘটিত ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনার ৬৭টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৩ শতাংশ। সেখানে মোট নিহতের ৩৪.৩৭ শতাংশ ও মোট আহতের হার ৮.৪২ শতাংশ। অন্যদিকে পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা ৫২.২১ শতাংশ ঘটেছে। আগামী ঈদে এ দুটি ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় ৮৫.২১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

সংগঠিত দুর্ঘটনার ২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫২.২১ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায় ও ৯.৮৫ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে:

১. বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো। 
২. ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন। 
৩. পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অমান্য।
৪. অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো।
৫. বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো। 
৬. মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল।  
৭. সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা। 
৮. ঈদ ফেরত যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা বা মনিটরিংয়ে শিথিলতা।
৯. মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
 
সুপারিশমালা:

(১) চালক প্রশিক্ষণ, লাইসেন্স ইস্যু পদ্ধতি আধুনিকায়ন, যানবাহনের ফিটনেস প্রদান পদ্ধতি আধুনিকায়ন, রাস্তায় ফুটপাত-আন্ডারপাস-ওভারপাস নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও গবেষণা, ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ সড়ক নিরাপত্তায় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
(২) জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। 
(৩) চালক প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা।
(৪) ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা। 
(৫) ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা। 
(৬) মহাসড়কে গতি নিরাপদ করা, ধীরগতি ও দ্রুত গতির যানের জন্য আলাদা আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা। 
(৭) মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ করা।
(৮) ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধের আদেশ শতভাগ কার্যকর করা। 
(৯) সড়ক নিরাপত্তায় যেসব সুপারিশ প্রণীত হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা।
(১০) ঈদের আগের ন্যায় ঈদের পরেও সড়ক-মহাসড়কে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার রাখা।
(১১) চালক-শ্রমিকদের যুগোপযোগী বেতন, বোনাস ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিরতি ও বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা।
(১২) যানবাহনের যাত্রার আগে ত্রুটি পরীক্ষা করা।