• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

রংপুর অঞ্চল থেকে ৭০ হাজার ৫’শ ৩০ টন ধান সরকারিভাবে বিক্রির সুযোগ

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০১৯  

এই প্রথমবারের মতো সারা দেশে সরকারিভাবে আমন ধান সংগ্রহ শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ। বুধবার (২০ নভেম্বর) থেকে দেশের খাদ্য গুদামগুলোতে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

এদিকে আমন ধান সংগ্রহে সরকারি সিদ্ধান্তে খুশি রংপুর অঞ্চলের কৃষক। এই অঞ্চলে উৎপাদনের মোট মাত্র ৭০ হাজার ৫’শ ৩০ টন ধান সরকারিভাবে বিক্রির সুযোগ থাকছে। ২৬ টাকা দরে একেকজন কৃষক কমপক্ষে ৪’শ কেজি ধান বিক্রি করতে পারবেন। তবে ধান সংগ্রহের তালিকা নিয়ে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে।

এবার রংপুর অঞ্চলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় আমনের ফলন ভালো হয়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। রংপুর অঞ্চলে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আমন রোপণ হয়েছে ৬ লাখ ৮ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমি। যা শতকরা হিসেবে ৯৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।

রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও লালমনিরহাটে এবার আমন মৌসুমে স্থানীয়সহ হাইব্রিড ও উফশী ধান রোপণ করেছে কৃষকরা। এখানকার মোট আমনের আবাদি জমি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৮ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন।

এরমধ্যে রংপুর জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৫৪ মেট্রিক টন। গাইবান্ধাতে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৭ মেট্রিক টন ও কুড়িগ্রাম জেলায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪২ মেট্রিক টন। এছাড়া লালমনিরহাটে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪৮ মেট্রিক টন এবং নীলফামারী জেলায় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৯১৬ মেট্রিক টন।

রংপুর বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র মতে, রংপুর অঞ্চল থেকে সরকারিভাবে ৭০ হাজার ৫’শ ৩০ টন ধান ক্রয় করা হবে। এরমধ্যে নীলফামারী জেলায় ১২ হাজার ৮০৭ টন, লালমনিরহাটে ৯ হাজার ৫৯ টন, গাইবান্ধা জেলায় ১৩ হাজার ৪০৪ টন, কুড়িগ্রামে ১৩ হাজার ৭১ টন এবং রংপুর জেলায় ২১ হাজার ৫৭৯ টন। এ অঞ্চলের পাঁচ জেলার ৪৩টি খাদ্যগুদাম থেকে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে।

এদিকে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হওয়ায় রোপা আমন ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। তবে পুরোনো ধানের দাম না বাড়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। বিশেষ করে ধান সংগ্রহের তালিকা স্বচ্ছতার সঙ্গে করা না হলে সরকারের এ উদ্যোগ কৃষকের কোন কাজে আসবে না মনে করছেন তারা।

কুড়িগ্রামের পাঁচগাছি ইউনিয়নের ছত্রপুর মিলপাড়া গ্রামের কৃষক দেলবর আলী, কয়ছার ও নুর ইসলাম জানান, আগাম ধান কেনা কৃষকরা লাভবান হবে। তবে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের ব্যবস্থা করা না হলে সরকারের এই উদ্যোগে আমাদের কোন উপকার হবে না। গত বোরো মৌসুমের মতো আমন মৌসুমেও ধানের দাম কম পেলে আমরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বো। একই সাথে প্রকৃত কৃষক যাতে ধান বিক্রি করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে রংপুরের সমাজতান্ত্রিক ক্ষেত মজুর ও কৃষক ফ্রন্টের আহ্বায়ক মোমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা বিগত দিনে যেভাবে তালিকা দিয়েছে, তাই করা হয়েছে। কৃষকের কার্ড নিয়ে যে লটারি হয়, তাও লোক দেখানো। এসব বন্ধ করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা না গেলে কৃষকরা উপকৃত হবে না।

এ বিষয়ে রংপুরের সহকারী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে তালিকা করা হয়েছে। প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকেই ধান সংগ্রহ করা হবে। রংপুর অঞ্চলের ১৬ লাখ ২৪ হাজার আমন চাষীর মধ্যে ৮ লাখ ৫১ হাজার কৃষক তালিকায় রয়েছেন। চলতি আমন মৌসুমে এ অঞ্চলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ লাখ ৮ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন ধরা হয়েছে। তবে ধান কেনা হবে ৭০ হাজার ৫’শ ৩০ টন।

এবার রংপুর অঞ্চলে আমন রোপণ করা জমি থেকে ১৮ লাখ ৮ হাজার ৬৪৭ মেট্রিন টন চাল উৎপাদন হবে। ইতিমধ্যে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। এখনো ৩ লাখ ৯৬ হাজার ১২২ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়নি বলেও তিনি জানান।