• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রোজা ভেঙে যায় ও মাকরুহ হয় যেসব কারণে

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০১৯  

ফকিহ তথা দ্বীনের বিজ্ঞ বিচারকরা কুরআন হাদিসের গবেষণার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু কারণ নির্ধারণ করেছেন, যা সংঘটিত হলে রোজা ভেঙে যায়।

জেনে নেবো রোজা ভাঙ্গার কারণসমূহ-
(১) পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভেঙে যায়; যদি রোজাদারের এ কথা মনে থাকে যে; সে রোজা রেখেছে। সুতরাং কেউ যদি রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার ও সঙ্গম করে, তবে তার রোজা ভাঙবে না। অবশ্য, স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে তা থেকে বিরত থাকতে হব। (রদ্দুল মুহতার, ৩য়খণ্ড, ৩৬৫ পৃষ্ঠা)

(২) হুক্কা, সিগারেট, চুরুট ইত্যাদি পান করলেও রোজা ভেঙে যায়; যদিও নিজে ধারণা করে যে, কণ্ঠনালী পর্যন্ত ধোঁয়া পৌঁছেনি। (বাহারে শরীয়ত, ৫ম খণ্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা)

(৩) পান কিংবা তামাক খেলেও রোজা ভেঙে যায়; যদিও সেটার পিক বারবার ফেলে দেয়া হয়। কারণ কণ্ঠনালীতে সেগুলোর হালকা অংশ অবশ্যই পৌঁছে থাকে। (বাহারে শরীয়ত, ৫ম খণ্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা)

(৪) চিনি জাতীয় খাদ্য; যা মুখে রাখলে গলে যায়, তা মুখে রেখে থুথু গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। (বাহারে শরীয়ত, ৫ম খণ্ড, ১১৭ পৃষ্ঠা)

(৫) দাঁতের মধ্যভাগে কোন জিনিস ছোলা (চানাবুট) পরিমাণ কিংবা তার ছেয়ে বেশি আঁটকে থাকার পর তা খেয়ে ফেললে। কিংবা ঐ পরিমাণের চেয়ে কম; কিন্তু মুখ থেকে বের করে পুনরায় খেলে,রোজা ভেঙে যাবে। (দুররে মুখতার, ৩য় খণ্ড, ৩৯৪ পৃষ্ঠা)

(৬) দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে কণ্ঠনালীর নিচে নেমে গেলে এবং রক্ত যদি থুথু অপেক্ষা বেশি কিংবা সমান অথবা কম হয় এবং সেটার স্বাদ কণ্ঠে অনুভূত হলে রোজা ভেঙে যাবে। যদি কম থাকে, আর স্বাদও কণ্ঠে অনুভূত না-হয়, তাহলে এমতাবস্থায় রোজা ভাঙ্গবে না। (দুররে মুখতার, ৩য়খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৮)

(৭) নাকের ছিদ্র দিয়ে ঔষধ প্রবেশ করালে রোজা ভেঙে যাবে। (আলমগীরী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৪)

(৮) কুলি করা অবস্থায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও পানি কণ্ঠনালী বেয়েনিচে নেমে গেলে কিংবা নাকে পানি দেওয়ার কারণে তা মগজে পৌঁছে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। কিন্তু যদি রোজাদার হওয়ার কথা ভুলে যায়, তবে রোজা ভাঙবে না; যদিও তা ইচ্ছাকৃত হয়। অনুরূপভাবে রোজাদারের দিকে কেউ কোন কিছু নিক্ষেপ করলো, আর তা তার কণ্ঠে পৌঁছে গেলো; তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (আল জাওয়াতুন নাইয়ারাহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৮)

(৯) ঘুমন্ত অবস্থায় পানি পান করলে, কিছু খেয়ে ফেললে অথবা মুখ খোলা থাকায় পানির ফোটা কিংবা বৃষ্টি কণ্ঠে চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে। (আল-জাওয়াতুন নাইয়ারাহ, ১ম খণ্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা)

(১০) অন্য কারো থুথু গিলে ফেললে কিংবা নিজেরই থুথু মুখ থেকে বের করার পর গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। (আমলগীরী, ১ম খণ্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা) বি: দ্র: যতক্ষণ পর্যন্ত থুথু কিংবা কফ মুখের ভিতর বিদ্যমান থাকে। তা গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয় না। বারবার থুথু ফেলতে থাকা জরুরি নয়।

(১২) মুখে রঙিন সুতা অথবা এ জাতীয় কিছু রাখার ফলে থুথু রঙিন হয়ে গেলে, এবং ঐ রঙিন থুথু গিলে ফেললে রােজা ভেঙে যাবে। (আলমগীরী, ১ম খণ্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা)

(১৩) চোখের পানি মুখের ভিতর চলে গেলে আর সেটা গিলে ফেললে। যদি দুয়েক ফোটা হয়তবে রোজা ভাঙবে না। আর যদি বেশি হয়, যার ফলে সেটার লবণাক্ততা মুখে অনুভূত হয়। তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। ঘামের ক্ষেত্রেও একই বিধান। (আলমগীরী, ১ম খণ্ড, ২০৩ পৃষ্ঠা)

(১৪) ইচ্ছাকৃত মুখভর্তি বমি করলে রেজা ভেঙে যাবে। কিন্তু অনিচ্ছাকৃত হলে ভাঙবে না। (দুররে মুখতার, ৩য় খণ্ড, ৩৯২ পৃষ্ঠা)

(১৫) রক্তদান করলে রোজার ক্ষতি নেই; তবে গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যাবে। (ফতোয়ায়ে ফয়জুর রসুল)

যে সব কারণে রোজা মাকরুহ হয়
যাবতীয় হারাম-মন্দ কাজ; যেমন: মিথ্যা, গীবত, চোগলখোরি, গালাগালের কারণে রোজা মাকরুহ হয়ে যায়। এসব কারণে রোজা সরাসরি ভঙ্গ না-হলেও সে রোজার কবুলিয়্যত কতটুক, তা যথেষ্ট ভাববার বিষয়। বিনা কারণে জিহ্বার মাধ্যমে কোনো জিনিসের স্বাদ অনুভব করা বা চিবানো মাকরুহ। অবশ্য বিশেষ প্রয়োজনে স্বাদ টেস্ট করার অনুমতি রয়েছে। তবে তা যেন কণ্ঠনালি অতিক্রম না-করে। করলে রোজা ভেঙে যাবে (দুররে মুখতার, ৩য় খণ্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠা)।

স্বামী-স্ত্রী পরস্পর চুম্বন করা মাকরুহ নয়; কিন্তু ঠোঁট ও জিহ্বা শোষণ করা মাকরুহ। এরূপ করার ফলে যদি পেটে কিছু চলে যায়; তবে রোজা ভেঙে যাবে (রদ্দুল মুখতার, ৩য় খণ্ড, ৩৯৬ পৃষ্ঠা)। এমন ভারী কাজ করা মাকরুহ; যার কারণে রোজাদার অত্যধিক ক্লান্ত হয়ে রোজা ভেঙে ফেলার অবস্থা সৃষ্টি হয়। সুতরাং কেউ যদি রক্তদানে অধিক ক্লান্ত হয়ে রোজা রাখতে পারবে কি-না; এ ব্যাপারে সন্ধিহান হয়, তবে রক্ত দেয়া মাকরুহ (দুররে মুখতার, ৩য় খণ্ড, ৪০০ পৃষ্ঠা)।

রোজার বিধান নামাজের মতোই ফরজ। অতএব, রোজাদারের উচিত রোজা পালনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা; যাতে রোজা ভঙ্গ কিংবা মাকরুহ না-হয়। ইচ্ছাকৃত ভঙ্গ করার কোনো অনুমতি তো নেই-ই, অনিচ্ছাসত্ত্বে যদি কারো রোজা ভেঙে যায়; তবে যেন সে অবশ্যই তার কাজা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রোজা তাঁর জন্যই, তিনিই রোজার বিশেষ প্রতিদান দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।