• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

২০ দিন ভর্তি কোচিং করিয়ে শিক্ষকদের আয় ৭ লাখ টাকা

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮  

পঞ্চগড়ে ভর্তি কোচিং বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রাইভেট কোচিং নীতিমালা অপেক্ষা করে তারা ১৫ থেকে ২০ দিনেই হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এতে প্রতারিত হচ্ছেন জেলা শহরের দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ম্যানেজ করে তারা ভাড়াকৃত জায়গা এবং নিজেদের বাসা কোচিং সেন্টারে পরিণত করে দিব্বি চালিয়ে যাচ্ছেন ভর্তি বাণিজ্য।

গত ২৬ নভেম্বর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের শুরু হয় জেলা শহরের দুই সরকারি প্রতিষ্ঠান পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ।

এই দুই প্রতিষ্ঠানে আদরের সন্তানদের ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছেই ছুটে যান অভিভাবকরা। তাদের কাছে ১৫/২০ দিন পড়ালেই ভর্তির সুযোগ হতে পারে এমন ধারণা করে প্রতি বছর প্রতারিত হন অধিকাংশ অভিভাবক। কারণ ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় ৫ম শ্রেণির বই থেকেই প্রশ্ন করা হয়। আর ভর্তি কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এসব শিক্ষক তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বই পড়ান।

Panchagarh-Admission1

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের তদারকির মাধ্যমে পরিচালিত দুই সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন ফরম পূরন করেন। ভর্তি আবেদনের শেষ দিন গত ১৩ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রভাতী শিফটে ৩৯২ এবং দিবা শিফটে ৩৮২ জন ছাত্রী ভর্তির আবেদন করে। এই প্রতিষ্ঠানে দুই শিফটে মোট আসন সংখ্যা ২৪০ এর বিপরীতে আবেদন পত্র জমা হয় ৮৭৪টি। একই সঙ্গে পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রভাতী শিফটে ৫২৭ এবং দিবা শিফটে ৫৯৪ ছাত্র হিসেবে দুই শিফটে মোট এক হাজার ১২১ ছাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণির জন্য ভর্তির আবেদন করে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে দুই শিফটে সর্বমোট আসন সংখ্যা ২৪০টি। দুই প্রতিষ্ঠানে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৪৮০ আসনের বিপরীতে অনলাইনে আবেদন জমা হয় মোট এক হাজার ৯৯৫টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ জন শিক্ষক সরাসরি এই ভর্তি কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম তার বাসায় পালাক্রমে সারাদিন দুইশরও বেশি শিক্ষার্থীকে ভর্তি কোচিং করান। ১৫ থেকে ২০ দিন পড়ানোর বিনিময়ে এসব শিক্ষার্থীর প্রতিজনের কাছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার করে টাকা নেয়া হয়। মাত্র ১৫/২০ দিনের ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে একেকজন শিক্ষক হাতিয়ে নেন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা। এছাড়া আবু তালেবসহ ওই প্রতিষ্ঠানের আরও একাধিক শিক্ষক প্রকাশ্যেই ভর্তি কোচিং করান।

একই অবস্থা পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকও তাদের বাসা এবং ভাড়াকৃত বাড়িতে ভর্তি কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। দুইটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষক নীতিমালা অপেক্ষা করে প্রকাশ্যে কোচিং করাচ্ছেন। আর বছরজুড়ে কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে বিশাল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন এসব শিক্ষক।

Panchagarh-Admission1

পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি ভর্তি কোচিং করাতে চাইনি। কিন্তু অভিভাবকদের অনুরোধের কারণে তাদের সন্তাদের পড়াতে হচ্ছে। এছাড়া অনেকেই তো পড়ান। আমিও কয়েকজন শিশুকে কোচিং করাই। তবে তাদের কাছে তিন হাজার করে টাকা নেয়ার তথ্য সঠিক নয়।

পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেখা রানী দেবী বলেন, প্রাইভেট কোচিং নীতিমালা অনুযায়ী স্কুলে কারও কোচিং করানোর সুযোগ নেই। বাইরে কোনো শিক্ষক কি করছেন সেটা কীভাবে বলা সম্ভব। চিকিৎসকরাও তো চাকরির বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। তাছাড়া অন্য এলাকার শিক্ষকরাও এমন কোচিং করান। আমরা কাকে কি বলবো?

পঞ্চগড় বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জোবায়ের ইসলাম বাদল বলেন, ভর্তি কোচিং করানো আমাদের কাজ নয়। কারা এমন কোচিং করছেন এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। তাদের বিষয়ে আপনাদেরও দেখার দায়িত্ব রয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গোলাম আজম বলেন, সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেসব শিক্ষক ভর্তি কোচিং করান, তাদের আসলে নীতি আদর্শ বলে কিছু নেই। তাছাড়া কোনো শিক্ষক এমন কোচিং করাচ্ছেন আমাদের জানাও নেই। প্রয়োজনে এমন শিক্ষকদের তালিকা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।