• শুক্রবার ১০ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৭ ১৪৩১

  • || ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

গণপরিবহনে যৌন হয়রানি বন্ধে বাস চালকদের জন্য নতুন পাঠ্যক্রম

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২২  

গণপরিবহনে যৌন হয়রানি বন্ধে বাস চালকদের জন্য নতুন পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।

সোমবার রাজধানীর সুফিয়া কামাল ভবনের আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর কমিটি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন ২০২২ উপলক্ষে ‘গণপরিসর ও গণপরিবহনে নারী নির্যাতনমুক্ত ও নারীবান্ধব পরিবেশ চাই’ শীর্ষক এ সেমিনার  অনুষ্ঠিত হয়।

মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহাতাবুন নেসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ফৌজিয়া মোসলেম, নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত, বিআরটিএ’র পরিচালক (অপারেশন) মো. লোকমান হোসেন, শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ এবং একাত্তর টিভি’র সিনিয়র রিপোর্টার নাদিয়া শারমিন।

সংগঠনের মহানগর শাখার লিগ্যাল এইড সম্পাদক শামীমা আফরোজ আইরিনের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস ও  মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুননেসা খান।

সড়ক সচিব বলেন, নতুন পাঠ্যক্রমে গাড়ি চালানোর মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি সৌজন্য, শিষ্টাচার, ভদ্রতা ও আচরণবিধি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া বাসে কোনো ধরণের হয়রানির শিকার নারীদের তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রত্যেক বাস স্টপেজে সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে। নারী তথা বাসযাত্রী, চালক ও হেলপারদের সচেতন করার জন্য প্রত্যেক বাসে এ সংক্রান্ত স্টিকার লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যা শিগগিরই কার্যকর করা হবে।

তিনি বলেন, এই স্টিকারে এমন নির্দেশনা থাকবে যেন কোনো নারী বা ব্যক্তি বাসে হয়রানির শিকার হলে তাৎক্ষণিক ৯৯৯’এ ফোন করলে পরবর্তী স্টেশনে তাকে সহায়তা করার জন্য সহায়তাকারী দল প্রস্তুত থাকবে।

ডা. ফৌজিয়া মোসলেম বাস চালকদের নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এ পদক্ষেপ কার্যকর করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সব স্তরের কর্মকর্তাকেই উদ্যোগ নিতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, গাড়ি চালকদের গাড়ি চালানো শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক শিক্ষাও দিতে হবে। তাদের মানবিক শিক্ষার অভাব রয়েছে বলেই তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা রোধকল্পে প্রতিটি পরিবারকে তাদের শিশু সন্তানদের মানবিকতা, নৈতিকতা ও নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার শিক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিআরটিএ’র পরিচালক লোকমান হোসেন গাড়ি চালকদের জন্য আয়োজিত সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণে জেন্ডার সংবেদনশীলতার  বিষয়ে একটি সেশন চালু করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, বিআরটিএ প্রতি সপ্তাহে গাড়ি চালকদের জন্য যে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে তাতে জেন্ডার সংবেদনশীলতার ওপর একটি সেশন নেয়া হবে। এ ব্যাপারে তিনি জেন্ডার প্রশিক্ষকদের সহযোগিতা আহ্বান করেন।

আয়োজক সংগঠনের উপস্থাপিত বক্তব্যে গণপরিবহন ও গণপরিসরে সংঘটিত নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতার চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে ইউএনডিপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সেন্টার ফর ইনফরমেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয়, বাস, লঞ্চ, ট্রেন এবং অন্যান্য যানবাহন ও টার্মিনালসহ গণপরিবহনে ৩৬ শতাংশ নারী নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হন। এছাড়াও গণপরিসরে ৮৭ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার যৌন সহিংসতার শিকার হন। আর ৬৬ শতাংশ নারী কয়েকবার এবং ৭ শতাংশ নারী বারবার নানা ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হন। তবে হয়রানির শিকার ৩৬ শতাংশ নারী প্রতিবাদ করেছেন বলে অনলাইনে পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে।

এতে আরো বলা হয়, টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি নির্ধারণে যে ৩৯টি নির্দেশক তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে  গণপরিবহনে ২০টি আসনে নারী-শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও গণপরিবহনে ও গণপরিসরে যৌন হয়রানি বন্ধে ২০টি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।