• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- আতংকে বিতর্কিতরা

– নীলফামারি বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

দল এবং দলীয় রাজনীতির ইমেজ রক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা বিতর্কের মুখে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে অপসারণের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর দল ও সরকারের ইমেজ রক্ষায় খুবই তৎপর রয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের বিভিন্ন ফোরামে নেতাকর্মীদের কাছে সেই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন তিনি। সব ধরনের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করতে নেতাকর্মীদের একাধিকবার আহ্বান জানান তিনি। সর্বশেষ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ থেকে ৮৬ কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠে। বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে সমালোচনার পর দুই নেতাকে অপসারণ করে দুইজনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। এ ঘটনায় বিতর্কিত নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

দল ও সরকারের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, সরকার পরিচালনার পাশাপাশি দল ও সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের বিভিন্ন সূত্র এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করছেন তিনি। বিশেষ করে মন্ত্রিসভার সব সদস্য, এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ব্যাপারে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। তাদের অনেকের আমলনামা শেখ হাসিনা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ব্যাপারে বিতর্কিতদের একাধিকবার সতর্ক করেছেন তিনি।

সর্বশেষ শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, এই আস্থা ও বিশ্বাস ধরে রাখতে দলের সবপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সচেতন থাকতে হবে। জনগণের আস্থায় যেন ফাটল না ধরে সেজন্য নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতিটি কর্মীকে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান তিনি।

ছাত্রলীগের সদ্য অব্যাহতি পাওয়া সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সাথে তুলনা করে যুবলীগের কিছু নেতার উদ্দেশে ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরা আরো খারাপ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হয়নি, অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিবাদ করেনি। যখন দলের দুঃসময় ছিল, তখন কেউ অস্ত্র নিয়ে দলের পক্ষে অবস্থান নেয়নি। এখন টানা তিন বার সরকারে আছি। অনেকের কাড়ি কাড়ি টাকা পয়সা হয়েছে। কিন্তু আমার সেই দুর্দিনের কর্মীদের অবস্থা একই আছে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পালেন, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে, যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরকেও দমন করা হবে। সভায় দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও সতর্ক করেন শেখ হাসিনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এবার অপরাধ করে আর কেউ পার পাবে না। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী কারো ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নিতে রাজি নন। ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে অপসারণের মাধ্যমে তিনি সেটার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফলে ভবিষ্যতে হয়তো অনেক মন্ত্রী-এমপিকেও জেলে যেতে হতে পারে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশ বিদেশে যে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে যে সম্মানজনক স্থানে উপনীত করেছেন তা কোনোভাবেই নস্যাৎ হতে দেবেন না। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর খোঁজ-খবর তিনি রাখেন। অপরাধ করে কেউ দল ও সরকারের সুনাম নষ্ট করবে, সেটা তিনি হতে দিতে পারেন না।

দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছে সরকার। অন্যায় অনিয়ম যেই করুক ছাড় দেয়া হবে না। অন্যায় যেই করবে, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।