• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষায় অবদানের জন্য পদক পেলেন দিনাজপুরের ট্রাকচালক ফারুক

নীলফামারি বার্তা

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০১৯  

নিজে পড়ালেখা করতে পারেননি সংসারের অভাব-অনটনের জন্য। অষ্টম শ্রেণি পাস করেই যোগ দিতে হয়েছিল শ্রমিকের কাজে, একপর্যায়ে হয়েছেন ট্রাকচালক। কিন্তু শিক্ষার প্রতি অনুরাগের জন্য নিজের উপার্জিত অর্থের ২৫ ভাগ ব্যয় করে চলেছেন গরিব, অসহায়, দুস্থ ও শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের জন্য। অবসর পেলেই খোঁজ করে বেড়ান এমন শিশুদের, যারা পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

আর খোঁজ পেলেই তাদের সহায়তা করেন শিক্ষা উপকরণ কিংবা অর্থ দিয়ে। নিজ বাড়ির আঙিনায় পরিচালনা করছেন বয়স্কদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষাক্ষেত্রে এমন অবদানের জন্য সারাদেশে ‘শ্রেষ্ঠ বিদ্যোৎসাহী সমাজকর্মী’ হিসেবে পদক পেয়েছেন দিনাজপুরের ট্রাকচালক ফারুক হোসেন।

বুধবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক তুলে দেন ফারুক হোসেনের হাতে। পদকের পাশাপাশি এ সময় তাকে দেওয়া হয় একটি সার্টিফিকেট ও নগদ ২৫ হাজার টাকা। শুধু তা-ই নয়, প্রধানমন্ত্রী এ সময় ফারুক হোসেনের প্রশংসা করে তার কাছে জানতে চান, ‘তুমি আর কী করতে চাও?’ জবাবে ফারুক হোসেন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি কিছুই চাই না, দোয়া করবেন যেন এভাবেই কাজ করে যেতে পারি।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী ফারুক হোসেনকে বলেন, ‘দোয়া করি আরও ভালো কাজ করো। ভালো করে দেশের জন্য কাজ করো।’

প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে শিক্ষা পদক পাওয়ার পর ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমি কখনও মনে করিনি সরকার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা দেয়। সংসারের ভরণ-পোষণ চালাতে পড়ালেখা বাদ দিয়ে কাজে যোগ দিয়েছি। কিন্তু আমার মতো যেন কারও পড়ালেখা বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য বেতনের টাকা দেই। এখানে আমার কোনও সম্মাননা পাওয়ার লোভ ছিল না, বিনিময়ে চাইনি কিছুই। ২০১০ সালে বিয়ে করেছি, স্ত্রী হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্সে পড়াশোনা করেন। যখন বিয়ে করেছি তখন এসএসসিতে পড়াশোনা করতো। পরে কেবিএম কলেজ থেকে তাকে কৃষি ডিপ্লোমা করিয়েছি।’

ফারুক হোসেন দিনাজপুরের সদর উপজেলার কাশিমপুর (মালিপুকুর) গ্রামের মৃত মাহবুব হোসেনের ছেলে। ফারুক হোসেনের জন্ম ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ। সদর উপজেলার চেরাডাঙ্গী উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০২ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করার পর অভাব অনটনের কারণে আর লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি। এরপর শহরের পুলহাট বিএডিসি’র বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্রে বস্তা টানার কাজ শুরু করেন। ২০০৭ সালে মাস্টাররোলে বিএডিসির ট্রাক সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৭ সালে বিএডিসি’র রংপুর যুগ্ম পরিচালকের দফতরে ট্রাক সহকারী হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ লাভ করেন।